বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৪ অপরাহ্ন

বিশ্বকবির ১৬০তম জন্ম জয়ন্তী আজ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৭ মে, ২০২১

‘চির-নূতনেরে দিল ডাক/পঁচিশে বৈশাখ’ হ্যাঁ, আজ থেকে ১৬০ বছর আগের পঁচিশে বৈশাখ এক ‘চির নূতন’-কে ডেকে এনেছিল এই বাংলায়! ‘দানবীয়’ প্রতিভার অধিকারী সেই চির ‘নূতন’-ই হচ্ছেন বাঙালির সংস্কৃতি সত্তার বাতিঘর বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আজ তার ১৬০তম জন্ম জয়ন্তী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালি জাতির দিকনির্দেশক এক আলোকবর্তিকা। বাঙালির প্রাত্যহিক জীবনের সবকিছুর সঙ্গেই একটু একটু করে মিশে আছে রবীন্দ্রনাথ! গত দেড় শতাব্দী ধরে বাঙালির মানসপটে তার দাপুটে অবস্থান। তাকে বাদ দিয়ে বাঙালির চিন্তার ভূগোল, ভাবের প্রকাশ, রস আস্বাদন— কোনো কিছুই সম্ভব না। বাঙালি সত্তায় রবীন্দ্রনাথ সদা জাগ্রত। বাঙালি জীবনে যত ভাব-বৈচিত্র্যের সমারোহ তার পুরোটাই তিনি তুলে ধরেছেন তার গল্প, কবিতা, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, গান, স্মৃতিকথা এবং দর্শনে।
তাকে পুরোপুরি ধারণ করা ছাড়া সত্যিকার অর্থে বাঙালি হয়ে ওঠা সম্ভব না। তার সাহিত্যকর্ম, সঙ্গীত, জীবনদর্শন, মানবতা— সব কিছুই সত্যিকারের বাঙালি হতে অনুপ্রেরণা যোগায়। কবিগুরুর ১৬০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৯তম জন্ম জয়ন্তী উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন। তবে করোনা সংকটের কারণে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিনে কোনো অনুষ্ঠান থাকছে না। টেলিভিশন, রেডিও, দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন নিউজপোর্টালগুলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন ও কর্মের ওপর বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচার করছে, লেখা প্রকাশ করছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম ১২৬৮ বঙ্গাব্দের পঁচিশে বৈশাখ। মা সারদাসুন্দরী দেবী এবং বাবা কলকাতার বিখ্যাত জমিদার ও ব্রাহ্ম ধর্মগুরু দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৮৭৫ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মাতৃবিয়োগ ঘটে। পিতাকেও তিনি খুব একটা কাছে পাননি। কারণ, ১৫ সন্তানের জনক ব্রাহ্মগুরু দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাৎসল্য প্রেম অতটা প্রখর ছিল না। তিনি বেশিরভাগ সময় থাকতেন গৃহের বাইরে। ১৪তম সন্তান হিসেবে যখন রবীন্দ্রনাথের জন্ম, ততদিনে দেবেন্দ্রনাথের গৃহের মায়া অনেকটা শিথিল হয়েছে। তাই ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান হয়েও রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলা কেটেছে ভৃত্যদের অনুশাসনে।
শৈশবে তিনি কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নরম্যাল স্কুল, বেঙ্গল একাডেমি ও সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুলে পড়াশোনা করেন। ছেলেবেলায় জোড়াসাঁকোর বাড়িতে অথবা বোলপুর ও পানিহাটির বাগানবাড়িতে প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন ঠাকুর বাড়ির কনিষ্ঠপুত্র (রবীন্দ্রনাথের পর বুধেন্দ্রনাথের জন্ম। কিন্তু তিনি ছিলেন স্বল্পায়ু। সেই হিসেবে রবীন্দ্রনাথকেই কনিষ্ঠ পুত্র বলা হয়।) রবীন্দ্রনাথ। এই মুক্ত বিহঙ্গজীবনই একদিন তাকে ঘরে থেকে বের করে বিশ্বের সামনে তুলে ধরে। তিনি ভেতর থেকে বাইরে এসে সামনে দাঁড়িয়েছিলেন বলেই বুকের মধ্যে বিশ্বলোকের সাড়া পেয়েছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখতে শুরু করেন ৮ বছর বয়সে। আটপৌরে বাঙালির মতো তার শুরুটা হয়েছিল কবিতা দিয়ে এবং একদিন সেই কবিতাই তাকে তুলে ধরে বিশ্ব দরবারে। তিনি হয়ে ওঠেন বিশ্বকবি।
মাত্র ১৭ বছর বয়সে ১৮৭৮ সালে ব্যারিস্টারি পড়ার উদ্দেশে ইংল্যান্ড যান ঠাকুর বাড়ির কনিষ্ঠ পুত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেখানে তিনি ব্রাইটনের একটি পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন। ১৮৭৯ সালে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে আইনবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। কিন্তু গৃহের টান তিনি উপেক্ষা করতে পারেননি। আজন্ম রোমান্টিক কবিকে যেন বাংলার নদী, জল, পাখি, ফল হাতছানি দিয়ে ডাকছিল। তাই মাত্র দেড় বছর ইংল্যান্ডে কাটিয়ে ১৮৮০ সালে কোনো ডিগ্রি না নিয়েই দেশে ফিরে আসেন।
১৮৮৩ সালের পারিবারিক রেওয়াজ মেনে ভবতারিণীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন সদ্য কৌশোর পেরেনো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। যদিও বিবাহিত জীবনে ভবতারিণীর নামকরণ হয়েছিল মৃণালিনী দেবী।
সন্ন্যাস জীবনের স্বপ্ন কখনও দেখেননি রবীন্দ্রনাথ। বরং সন্ন্যাস জীবনের ঘোরবিরোধী ছিলেন তিনি। পরিষ্কার করে বলেছেন, ‘বৈরাগ্য সাধনে মুক্তি সে আমার নয়’। সে কারণেই হয়তো সংসার সাধনার মধ্যেই চলতে থাকে তার সাহিত্যচর্চা। ১৮৯১ সাল থেকে পিতার আদেশে নদিয়া, পাবনা, রাজশাহী ও উড়িষ্যার জমিদারি তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি প্রায় ১০ বছরের মতো সময় পূর্ববাংলায় ছিলেন। এই সময়ে তিনি জমিদারি কাজে কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়ি, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের কাচারিবাড়ি ও নওগাঁর পতিসরে অবস্থান করেন। ১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ সপরিবারে পূর্ববাংলা ছেড়ে চলে আসেন বীরভূম জেলার বোলপুর শহরের উপকন্ঠে শান্তিনিকেতনে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পৌঁছে দিয়েছেন অনন্য উচ্চতায়। বিশ্ব দরবারে চিনিয়েছেন বাংলা ভাষাকে। ছিনিয়ে এনেছেন সাহিত্যের নোবেল। বাংলা ভাষার সর্বকালের শ্রেষ্ঠ কবি রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব, কবিগুরু ও বিশ্বকবি অভিধায় ভূষিত করা হয়। রবীন্দ্রনাথের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন তার জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়েছে। তার চিঠিপত্র, ভ্রমণ কাহিনীর সংকলনও বাংলা সাহিত্যের আকর গ্রন্থ হিসেবে সমাদৃত। একজন চিত্রশিল্পী হিসেবেও তাঁর অবদান কম নয়। সুর স্রষ্টা,ব্যকরণবিদ, শিল্প সমালোচক, দার্শনিক, সমাজ সংস্কারক, শিক্ষাবিদ হিসেবেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সমানভাবে পরিচিত।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com