শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৯ অপরাহ্ন

ক্ষমা ও প্রতিশোধ

নাজমুল হাসান সাকিব:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৮ মে, ২০২১

‘আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে মুমিনের কাজ ও গুণাবলির বর্ণনা দিতে গিয়ে সাত থেকে আটটি আয়াত বা কর্মসূচির উল্লেখ করেছেন। ওই কাজ ও গুণাবলির অন্যতম একটি হলো- তারা রাগান্বিত হয়েও ক্ষমা করে দেয় (আশ-শূরা-৩৭)। এটি সচ্চরিত্রের উত্তম নমুনা। হাদিসের এক বর্ণনায় এসেছে, কারো প্রতি ভালোবাসা অথবা কারো প্রতি ক্রোধ যখন প্রবল আকার ধারণ করে; তখন সুস্থ বিবেকবান, বুদ্ধিমান মানুষকেও তা অন্ধ করে দেয়।
ক্রোধান্বিত অবস্থায় সে ব্যক্তি বৈধ-অবৈধ, সত্য-মিথ্যা ও আপন কাজের পরিণতি সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করার যোগ্যতাটুকুও হারিয়ে ফেলে। কারো প্রতি ক্রোধ হলে সে সাধ্যমতো তার কাছ থেকে ঝাল মেটানোর চেষ্টা করে। অথচ আল্লাহ তায়ালা মুমিনের কর্মসূচির বর্ণনা দিয়েছেন এই বলে যে, তারা ক্রোধের সময় কেবল বৈধ-অবৈধের সীমায় অবস্থান করেই ক্ষান্ত হয় না বরং প্রতিশোধ নেয়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তারা মাফ করে দেয়।
উদাহরণস্বরূপ, কোনো এক এলাকার মানুষ ওই এলাকার কোনো নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকে গালমন্দ করল। আর এতে সে ভীষণ কষ্ট পেলো। যার ফলে সে অত্যন্ত রাগান্বিত হয়েছে। আবার এলাকার নেতা বা নেতৃস্থানীয় হিসেবে প্রয়োগ করার ক্ষমতাও তার আছে। কিন্তু লোকটি তার প্রয়োগ করার মতো ক্ষমতা থাকা সত্ত্বে¡ও তা দমন করে তাকে ক্ষমা করে দিলেন। তাহলে আল্লাহ তায়ালার কথা অনুযায়ী ওই লোকটি প্রকৃত মুমিন। যদিও সমান সমান বদলা জায়েজ।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা অত্যাচারিত হয়ে সমান সমান প্রতিশোধ গ্রহণ করবে এবং এতে সীমালঙ্ঘন করে না। সমান সমান প্রতিশোধ গ্রহণ করে; কিন্তু ক্ষমা করে না। আবার বেশি সীমালঙ্ঘনও করে না’ (সূরা আশ-শূরা-২৯)। এটি প্রকৃতপক্ষে ক্ষমা করার গুণের ব্যাখ্যা ও বিবরণ। এই গুণটি ছিল এই যে, তারা শত্রুকে ক্ষমা করে, তবে বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে মাফ করলে অত্যাচার আরো বেড়ে যায়। তখন প্রতিশোধ গ্রহণ করাই উত্তম বিবেচিত হয়। আয়াতে এরই বিধান বর্ণিত হয়েছে, মন্দের প্রতিফল মন্দই হয়ে থাকে’ (সূরা আশ-শূরা-৪০)।
তোমার যতটুকু আর্থিক অথবা শারীরিক ক্ষতি কেউ করে, তুমি ঠিক ততটুকু ক্ষতিই তার করো। তবে শর্ত হলো, তোমার মন্দ কাজটা যেন পাপ না হয়। উদাহরণস্বরূপ, তোমাকে কেউ জোরপূর্বক মদ পান করিয়ে দিলো, এখন তোমার জন্য তাকে মদ পান করিয়ে দেয়া জায়েজ হবে না। শরিয়ত যদিও সমান সমান প্রতিশোধ নেয়ার অনুমতি দিয়েছে কিন্তু এরপর এ কথাও বলেছে, যে ব্যক্তি মাফ করে এবং আপস নিষ্পত্তি করে, তার পুরস্কার আল্লাহর দায়িত্বে। (সূরা আশ-শূরা-৪০)। এতে বলা হয়েছে, মাফ করাই উত্তম। পরবর্তী দুই আয়াতে এর আরো বিবরণ দেয়া হয়েছে।
প্রতিশোধ গ্রহণের সুষম ফায়সালা : হজরত ইবরাহিম নাখায়ি রহ: বলেন, পূর্ববর্তী মনীষীরা এটি পছন্দ করতেন না যে, মুমিনরা পাপাচারী লোকদের সামনে নিজেদেরকে হেয়প্রতিপন্ন করবে। ফলে তাদের দৃষ্টতা আরো বেড়ে যায়। সে ক্ষেত্রে প্রতিশোধ নেয়াই উত্তম। আর ক্ষমা করা উত্তম যখন অত্যাচারী অনুতপ্ত হয় এবং তার পক্ষ থেকে অত্যাচার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা না থাকে।
কাজী আবু বকর ইবনুল আরাবি এবং কুরতুবি রহ: এটিই পছন্দ করতেন। তারা বলেন, ক্ষমা ও প্রতিশোধ দুটিই অবস্থা ভেদে উত্তম। যে ব্যক্তি অনাচার করার পর লজ্জিত হয় তাকে ক্ষমা করা উত্তম। আর যে ব্যক্তি জেদে-ক্রোধে এবং অত্যাচারে অটল থাকে তার থেকে প্রতিশোধ নেয়া উত্তম। বয়ানুল কুরআনে বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা আলোচ্য আয়াত দুটিতে খাঁটি মুমিন ও সৎকর্মীদের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন। একটি বাক্যে বলা হয়েছে- তারা ক্রোধের সময় নিজেদেরকে হারিয়ে ফেলে না বরং তখনো ক্ষমা ও অনুকম্পা তাদের মধ্যে প্রবল থাকে। ফলে তারা ক্ষমা প্রদর্শন করে। আবার অন্য বাক্যে বলা হয়েছে, কোনো সময় অত্যাচারের প্রতিশোধ গ্রহণের প্রেরণা তাদের দিলে জাগ্রত হলেও তারা এতে ন্যায়ের সীমালঙ্ঘন করে না; যদিও ক্ষমা করে দেয়াই উত্তম। লেখক : শিক্ষার্থী ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা ১২২৯




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com