শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৩২ অপরাহ্ন

সীমান্তের সাত জেলায় করোনা বিপর্যয়, কেউ মানছে না স্বাস্থ্যবিধি

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৪ জুন, ২০২১

সীমান্তের করোনার হটস্পট সাতটি জেলাতেই স্বাস্থ্যবিধি মানছে না কেউ। সংক্রমণ ও শনাক্তের হারও তাই ঊর্ধ্বমুখী।
নওগাঁ:বুধবার (২ মে) করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় ১৫ দফা নির্দেশনা দিয়ে জেলার পৌরসভা এলাকা ও নিয়ামতপুর উপজেলায় এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করা হয়। জেলা প্রশাসক মো. হারুন-অর-রশীদ বলেন, নওগাঁয় জনসাধারণের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধির প্রতি অনীহা দেখা যাচ্ছে। তাই প্রশাসনের একাধিক দল মাঠে থাকবে। জনসমাগমে নজরদারি করা হবে।
ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুর এ. মোর্শেদ বলেন, ঈদুল ফিতরের পর থেকে করোনা সংক্রমণের হার ৩০ শতাংশের বেশি। নওগাঁ পৌরসভা ও সীমান্তবর্তী নিয়ামতপুরে দুই সপ্তাহ ধরে সংক্রমণের হার প্রায় ৫০ শতাংশ। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৪৩ জন। কোয়ারেন্টিনে নেওয়া হয় ২২ হাজার ২৪৯ জনকে। মোট আক্রান্ত ২৩ হাজার ১৬ জন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১১ জন এবং আইসোলেশনে আছে ৯ জন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দোকানপাট ও যানচলাচল বন্ধ থাকবে। জরুরি পণ্যবাহী গাড়ি ছাড়া রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া ও জয়পুরহাট থেকে কোনও গাড়ি নওগাঁয় প্রবেশ করতে পারবে না, বেরও হতে পারবে না। রোগী ও জরুরি সেবাদানকারীদের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে না।
যশোর: জেলা-উপজেলার সরকারি দফতর, ব্যাংক-বীমা ও হাতেগোনা কিছু শপিংমল ছাড়া মানুষজন মাস্ক ব্যবহার করছে না। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বদ্যিালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টার থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২ মে যশোরের ২৮৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৭০ জনের পজিটিভ পাওয়া গেছে। ৩১ মে ২২০ জনের নমুনায় পজিটিভ ছিল ২৯ জন। এ ছাড়া সেন্টার থেকে বলা হয়, ২৯ মে যশোরের তিনটি উপজেলা থেকে প্রাপ্ত নমুনা পরীক্ষা করে ৮ জনের শরীরে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। তবে তারা কেউই ভারতফেরত নন।
১ জুন যশোরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। মূলত সরকারি-বেসরকারি অফিসে ঢুকতেই মাস্ক পরেন সবাই। গণপরিবহনেও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। বেনাপোলের অবস্থাও একই। ভারতফেরত পাসপোর্টযাত্রীরা শারীরিক দূরত্ব মানছেন না। পণ্য নিয়ে আসা ভারতীয় ট্রাক চালকদেরও মুখেও দেখা যায়নি মাস্ক। এতে ওই যাত্রীদের দেখভালের দায়িত্বে থাকা ডাক্তার, প্রশাসন ও পুলিশের কর্মীরা পড়েছেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। কারণ তাদের কারোরই পিপিই নেই। মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারই ভরসা।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন বলেন, করোনা শনাক্তের হার আজ (২ জুন) একটু বেশি। কিন্তু একদিনের ফলাফলের ওপর কিছু অনুমান করা যায় না। জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তবে নাজুক হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রচারণা অব্যাহত রেখেছি। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। ইতোমধ্যে ব্যবসায়ী ও গণপরিবহন সংশ্লিষ্ট নেতারা আমাকে জানিয়েছেন- স্বাস্থ্যসেবা সুরক্ষায় তারা ব্যবস্থা নেবেন। আবার লকডাউন হলে তা কারও জন্যে সুখকর হবে না।’
রাজশাহী: করোনা নিয়ে বিপাকে আছে রাজশাহী। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মৃত্যুর সংখ্যা এবং শনাক্তের হার আচমকা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় অনেককে মাস্ক পরতে দেখা গেছে।

তবে জেলার ২৩ লাখ ৭৮ হাজার মানুষের বেশিরভাগই পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। প্রশাসন প্রচারণার পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা ও দ- প্রদান করে যাচ্ছে। রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরীফুল হক বলেন, ‘সুপার মার্কেট ও অফিসে স্বাস্থ্যবিধি মানা হলেও খোলাবাজারে একেবারেই মানছে না কেউ। সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪টি ও ৯টি উপজেলায় প্রতিদিনই দুটি করে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছি।’ জেলার সির্ভিল সার্জন ডা. কাউয়ুম তালুকদার বলেন, ‘যার মধ্যে মৃত্যুর ভয় আছে সে-ই স্বাস্থ্যবিধি মানছে। বাকিদের ভ্রুক্ষেপ নেই।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ লাগোয়া গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ি হাট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মশিউর রহমান বলেন, ‘গোদাগাড়ী উপজেলার অবস্থাও ভয়াবহ। কিন্তু কেউ কিছু মানছে না। তাদের কথা হলো মানুষ সময়ে সময়ে মারা যায়। এখনও যাচ্ছে। মাস্ক পরে কী হবে। এসব চিন্তা নিয়ে সবাই ইচ্ছামতো ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর এলাকায় ট্রাফিক মোড় এলাকায় শত শত লোকজন চলাচল করছে মাস্ক ছাড়া। অপরদিকে আমের বাজারে আগত অধিকাংশ লোকজনও স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। বানেশ্বর হাট ইজারদার ওসমান আলী বলেন, আমের মৌসুম শুরু হওয়ায় লোকজন বেশি। হাট কমিটি বাজারে আসা সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলেছে। ক্রেতা-বিক্রেতারাই কথা শোনে না।
রাজশাহী বিভাগের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী জেলা চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। আমের বাজারে অবাধ চলাচল বন্ধ করতে না পারলে পরিস্থিতি ভয়ানক আকার নিতে পারে বলে মনে করছে প্রশাসন। আম ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন বলেন, বানেশ্বর-বিড়ালদহ আমবাজারে প্রশাসনের তদারকি নেই। দুয়েকদিন পর বাজারে এসে কিছু কথা বলে আর ছবি তোলে। এতেই দায়িত্ব শেষ। আম বিক্রেতা আইয়ুব আলী বলেন, সবার পকেটেই মাস্ক আছে। কেবল ইউএনও বা পুলিশ এলেই পরে। পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল হাই মোহাস্মদ আনাছ বলেন, ‘বানেশ্বর বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণা চলছে। বিধি অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অভিযানও অব্যাহত থাকবে।’
এদিকে রামেকের করোনা ইউনিটে মৃত্যু থেমে নেই। ৩১ মে রাত ৩টা থেকে ১ জুন বেলা ১১টা পর্যন্ত মারা গেছেন আরও ১১ জন। এর আগে ২৯-৩০ মে মারা গেছেন ১২ জন। রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।

তিনি আরও জানান, হাসপাতালে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত করোনা ইউনিটে ২১৫ জন ভর্তি আছেন। এদের মধ্যে করোনা পজিটিভ ৯১ জনের। বাকিরা উপর্সগ নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। মঙ্গলবার (২ জুন) বিকালে রাজশানী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আয়োজিত বিশেষ সভায় সংক্রমণ রোধে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। বিধিনিষেধগুলো হলো, সন্ধ্যা ৭টার পর সকল প্রতিষ্ঠান, শপিংমল, মার্কেট, দোকানপাট বন্ধ থাকবে (জরুরি সেবা ছাড়া), বের হলে পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে। সামাজিক অনুষ্ঠান, গণজমায়েত, বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। তবে আমসহ অন্যান্য কৃষিপণ্য পরিবহন করা যাবে।
খুলনা: আক্রান্ত ও মৃত্যুতে বিভাগের মধ্যে খুলনা জেলা শীর্ষে। মে মাসে এ জেলায় মারা গেছেন ৪০ জন। এপ্রিলে সংক্রমণের গড় হার ছিল ২০ শতাংশ এবং মে মাসে এ হার দাঁড়ায় ২১ শতাংশে। এক মাসের ব্যবধানে সংক্রমণের গড় হার ১ শতাংশ বেড়েছে। ৩১ মে ৩১৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৯১ জন পজিটিভ পাওয়া যায়। সংক্রমণের হার ২৪ শতাংশ। মার্চে ছিল ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। খুলনার সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ বলেছেন, ‘ঈদুল ফিতরের আগমুহূর্তে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার উদ্বেগজনক হারে বাড়ে। ঈদের পর থেকে এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি স্থিতিশীল।’
তিনি আরও বলেন, ‘লকডাউনের বিষয়ে ২ জুন কোভিড-১৯ খুলনা জেলা কমিটির মিটিং ডাকা হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ খুলনার বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. রাশিদা সুলতানা বলেন, ‘এপ্রিলের শুরু থেকে সংক্রমণ বেড়ে চলছে। মে মাসের শুরুতে কিছুটা কম থাকলেও শেষে বেড়েছে।’ খুলনার সিভিল সার্জন দফতরের সূত্র জানায়, খুলনায় ভারতফেরত ১৬ জনের নমুনা নিয়ে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পরীক্ষার জন্য ঢাকার আইইডিসিআর-এ নমুনা পাঠানো হয়েছে। এখনও রিপোর্ট আসেনি। বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের সূত্র জানায়, সংক্রমণের শুরু থেকে ৩১ মে পর্যন্ত বিভাগের ১০ জেলায় শনাক্ত হয় ৩৪ হাজার ২৯১ জনের। মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৪৫ জনে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা য়ায়, সাতক্ষীরায় আক্রান্ত ১ হাজার ৫৯৬ জন এবং মারা গেছেন ৪৭ জন। যশোরে আক্রান্ত ৬ হাজার ৯৩০ জন, মারা গেছেন ৮১ জন। নড়াইলে আক্রান্ত ১ হাজার ৮৭৩ জন, মারা গেছেন ২৭ জন। মাগুরায় আক্রান্ত ১ হাজার ২৫৩ জন, মারা গেছেন ২৩ জন। ঝিনাইদহে আক্রান্ত ২ হাজার ৯০৮ জন, মারা গেছেন ৫৫ জন। কুষ্টিয়ায় আক্রান্ত ৪ হাজার ৯৪৬ জন, মারা গেছেন ১১২ জন। চুয়াডাঙ্গায় আক্রান্ত ১ হাজার ৯৬৮ জন, মারা গেছেন ৬১ জন। সবচেয়ে কম আক্রান্ত মেহেরপুরে-৯৯০ জন। মারা গেছেন ২৩ জন।

করোনা প্রতিরোধ ও চিকিৎসা কমিটির খুলনার সমন্বয়কারী ডা. মেহেদী নেওয়াজ বলেন, করোনার বর্তমান ঢেউ বেশ শক্তিশালী। তাই মৃত্যু বাড়ছে। স্বাস্থ্যবিধি না মানাসহ একাধিক কারণও রয়েছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ পিসিআর মেশিনে ১ জুন ২৮২ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়। শনাক্ত হয়েছে ৭৩ জনের। এর মধ্যে খুলনা মহানগরী ও জেলার ৪৪ জন, বাগেরহাট ২১ জন, যশোর ২ জন, সাতক্ষীরা ১ জন ও নড়াইলের ৫ জন। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষণ দলের সদস্য ড. ইকবাল কবীর জাহিদ জানান, ‘সোমবার তাদের ল্যাবে ৩২২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৭৫টি পজিটিভ। এর মধ্যে যশোরের ছিল ২৮৯টি নমুনা। যার মধ্যে ৭০টি পজিটিভ আসে।’
সাতক্ষীরায় ৯৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৯ জনের শনাক্ত হয়েছে। উপসর্গ নিয়ে তিন ঘণ্টার ব্যবধানে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুই নারীসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক কুদরত-ই-খোদা খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ পর্যন্ত হাসপাতালে করোনার উপসর্গ নিয়ে ২১৭ জন এবং করোনা পজিটিভ হিসেবে ৩৩ জন মারা গেছে। মোংলাতেও বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। ১ জুন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা উপসর্গ নিয়ে ৫৯ জন নমুনা পরীক্ষা করান। এরমধ্যে ৩৩ জনের শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জীবিতেষ বিশ্বাস।
কুষ্টিয়া: এক সপ্তাহে জেলায় ১৬৫ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। মঙ্গলবার জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভায় এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। জেলা প্রশাসকের অফিস সূত্রে জানা যায়, ২৬ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত ২১৯ জন শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২ জুন শনাক্ত হয়েছে ৫৪ জন এবং মারা গেছেন দু’জন। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১১৬ জন।
কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এখানে পরিস্থিতি খারাপ বলবো না। তবে বাড়তির দিকে। এমন পরিস্থিতি আগেও দুবার হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, কুষ্টিয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকা ভারতফেরত তিনজন পজিটিভ শনাক্ত হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে দুজন ইতোমধ্যে নেগেটিভ হয়েছেন। অপরজন এখনও পজিটিভ। তিনি ঢাকায় চিকিৎসাধীন। জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, যেসব এলাকায় শনাক্ত বেশি দেখা যাবে, সেসব এলাকায় বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। কুষ্টিয়ায় এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৩২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ১১৬ জন।

সাতক্ষীরা: জেলার নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক আনিসুর রহিম বলেন, ইয়াসের পর কয়েকটি উপজেলা ঘুরে দেখলাম কারও মুখে মাস্ক নেই। ভারত থেকে অনেকে আসছেন। তারা মাস্ক পরছেন না। এ কারণে পরিস্থিতির এত অবনতি। সিভিল সার্জন ডা. মো. হুসাইন শাফায়াত বলেন, ১৬ মে থেকে ৩০ মে পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১২৬২ জনের। পজিটিভ পাওয়া গেছে ২৭০ জনের। সংক্রমণের হার ২১ দশমিক ৩৯ শতাংশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৩০ মে ৮৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় পজিটিভ আসে ৩৭ জনের। গতবছর থেকে এ পর্যন্ত জেলায় মারা গেছে ৪৭ জন।
তিনি আরও বলেন, এখন উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ১৩৮ জন। তাদের মধ্যে পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে ৫৩ জনের। তিনি আরও বলেন, পজিটিভ ১৩৮ জনের মধ্যে সাতক্ষীরা সদরের ৩৯, কালিগঞ্জের ২৪, আশাশুনির ২০ ও শ্যামনগরের ১৫ জন। ইয়াসের প্রভাবে উপকূলের মানুষ পানিবন্দি। গাদাগাদি হয়ে থাকার কারণেও ওই এলাকায় সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।
সীমান্তে নজরদারির ওপর গুরুত্বারোপ করে জনসচেতনতা বৃদ্ধির আহবান জানিয়েছেন সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল। সাতক্ষীরার ২২৮ কিলোমিটার সীমান্ত গলিয়ে বৈধপথে আসা মানুষকে কোয়ারেন্টিনে নেওয়া এবং অবৈধভাবে আসাদের আটক করে কোয়ারেন্টিনে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ভোমরা স্থলবন্দরে প্রতিদিন আসা ভারতীয় ট্রাক ও হেলপারদের প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিজিবির টহল জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ‘বিজিবির জনবল বাড়াতে সরকারের কাছে সুপারিশ করেছি। এরই মধ্যে সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন ও গ্রামে সীমান্ত প্রতিরক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিজিবির টহল দলের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।’
হিলি: দিনাজপুরের সীমান্তবর্তী হিলিতে বেড়ে চলেছে সংক্রমণের হার। ১-২ জুন নতুন করে আরও ৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। দু’দিনে ১০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আতংক বাড়ছে স্থানীয়দের মধ্যে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় দিনাজপুর সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে এসব তথ্য জানানো হয়। ২৪ ঘণ্টায় ২৪৬টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছে ২২ জনের। এর মধ্যে হিলির আছে ৫ জন। আক্রান্তের হার ছিল ৮ দশমিক ৯৪ ভাগ। আগের দিন ১৬১টি নমুনা পরীক্ষায় ২৩ জন আক্রান্ত পাওয়া যায়। এর মধ্যেও হিলির ১ জন ছিলেন। শনাক্তের হার ছিল ১৪ দশমিক ২৮ ভাগ।
দিনাজপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে হিলিতে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১০৭ জন। এর মধ্যে একজন মারা গেছেন। ১৭ জন হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন। হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তৌহিদ আল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হিলিতে সংক্রমণ কমই ছিল। কয়েকদিন ধরে হঠাৎ বাড়ছে। আমাদের হাসপাতালের আউটডোর ও ইমারজেন্সিতে এখন প্রায়ই জ্বরের রোগী পাওয়া যাচ্ছে। সতর্কবার্তা একটাই, মাস্ক পরুন আর উপসর্গ দেখা দিলে পরীক্ষা করান।’
নাটোর: জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্যবিভাগের কঠোর পদক্ষেপে নাটোরে ৫ দিনের ব্যাবধানে সংক্রমণ অর্ধেকে নেমেছে। ২৮ মে’র পরীক্ষায় ৪৬ জন সংক্রমিত দেখা গেলেও ২ জুন সংক্রমণ নেমেছে ২৩ জনে। সংক্রমণ আরও কমাতে চলমান কঠোর অবস্থান বজায় রাখবে প্রশাসন। জেলা প্রশাসক শাহরিয়াজ ও সিভিল সার্জন ডাক্তার মিজানুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সিভিল সার্জন ডাক্তার মিজানুর রহমান জানান, ৫ মে নাটোরে করোনা পজিটিভ হন ৫ জন। ১২ মে ২ জন। কিন্তু ২৬ মে ৯ জন ও ২৮ মে একলাফে ৪৬ জনে দাঁড়ায়। এমন অবস্থায় শহরের প্রবেশমুখগুলোতে জনচলাচল সীমিত করা ছাড়াও মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়। পরিচালনা করা হয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এতে সংক্রমণ কমতে থাকে। ৩০ মে ২৩ জন, ৩১ মে ১১ জন, ১ জুন ১৭ জনে দাঁড়ায়। অবশ্য ২ জুন আবার ২৩ জন শনাক্ত হয়।
জেলা প্রশাসক শাহরুয়াজ ও পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা জানান, করোনা সংক্রমণ সহনীয় পর্যায়ে না আসা অবধি প্রশাসন ও পুলিশের চলমান পদক্ষেপ চলতে থাকবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com