গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ২০২১-২০২২ সালের বাজেটে আমলাদের খাতির করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমালাদের খাতির করার কারণ হলো অর্থমন্ত্রীর পেশা। চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট হিসেবে উনি একটি শ্রেণিকে অনেক সুবিধা দিয়েছেন। আমলাদের বেতন আমরা অনেক বাড়িয়েছি। গাড়ি কেনার জন্য ত্রিশ লাখ টাকা দেয়া হয়। পঞ্চাশ হাজার টাকা দেয়া হয় তা মেন্টেন করার জন্য। উপকার পেয়েছে উচ্চ শ্রেণি।
ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, বাজেট হওয়া উচিৎ নাগরিকদের জন্য। আমি বাজেটটি দেখার চেষ্টা করেছি অর্থমন্ত্রীর শ্রেণি ও চরিত্রের আলোকে। বাজেটের প্রতিটি ক্ষেত্রে তার পেশা ও শ্রেণির প্রভাব পড়েছে। বাজেটে দুর্নীতিকে বহাল রাখার ফাঁক রয়ে গেছে। এটার উল্টাটা হওয়া উচিৎ। তাদের সংসদে আসার আগে সবার সাথে আলোচনা করা উচিৎ ছিল। জনগণের মতামত নেয়া উচিৎ ছিল। টাকা সংগ্রহের জন্য ট্যাক্স নিতে হয়। এখানেই দুর্নীতি বাড়ে। কর ফাকি, দুর্নীতি চলতেই থাকে ট্যাক্সের ভিন্নতার কারণে। এই সরকারের বড় সফলতা হলো তারা বিদ্যুৎ পৌঁছেছে ঘরে ঘরে। আর সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা পুলিশ।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টায় ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল বীর উত্তম মেজর হায়দার মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। সচেতন নাগরিকদের দৃষ্টিতে ২০২১-২০২২ জাতীয় বাজেটের উপর এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমরা মধ্যম আয়ের দেশ কিন্তু মনোবৃত্তিটা পরিবর্তন হয়নি। যার আয় বছরে ৫ লাখ টাকা সেই ট্যাক্সের আওতায় আসা উচিৎ৷ আমার প্রস্তাব ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ফ্রি করে দেন। তার পর থেকে ক্রমবর্ধমান হারে ট্যাক্স নিতে থাকেন। তাহলে বেশি সংখ্যক মানুষকে ট্যক্সের আওতায় আনা যাবে। মনে রাখা দরকার সকারের মূল আয়বাসে ভ্যাট থেকে।
সরকার জানে কাকে কখন খুশি করতে হয়: এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, সরকারের আরেকটি ভালো কাজ হলো নারীদের ৭০লাখ টাকা পর্যন্ত মৌকুফ করেছে। মেডিক্যাল যন্ত্রপাতির উপর ট্যাক্স বাড়ানো ভুল। যার ফলে চিকিৎসা ব্যয় বহুল হয়ে যায়। আরো একটি ভালো কাজ করেছে হিমো ডায়ালাইসিসের ট্যাক্স ২৫% থেকে ৫% এ নামিয়ে দিয়েছে। এই সরকার জানে কাকে কখন খুশি করতে হয়।
তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ১২ হাজার থেকে ২০ হাজার করেছে। কিন্তু পাশাপাশি দরিদ্র পরিবারকে ফ্রি রেশন দিতে হবে। মাত্র ৬ মাস। তাতে যে ব্যয় হিসেবে আমলাদের ব্যায়ের এক তৃতীয়াংশও নয়। আরো ভালো কাজ করেছেন। ওষুধের কাচামালের উপর কর কমিয়েছেন। কিন্তু ব্যবসায়ীদের হাতে ছেড়ে দেয়া যাবে না। নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মাত্র ১১৭ টি ওষুধের মূল্য সরকার নিয়ন্ত্রণ করে বাকিটা ওষুধ কোম্পানি গুলো করে।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার আমলে ভুলের কারণে জনগণের এখানে ভোগান্তি হয়েছে। অগ্রিম ইনকাম ট্যাক্স দুর্নীতির একটি বড় কারণ। তিনি আরো বলেন, সুগন্ধি সাবান ইমপোর্টের প্রয়োজন আছে কি না? করলে অধিক হারে ট্যাক্স নির্ধারণ করতে হবে। কৃষিজাত পণ্যের প্রসারের জন্য ১০ বছরের কর মৌকুফ করেছেন। এটাও ভালো সিদ্ধান্ত। সবচেয়ে বেশি পাচ্ছে জনপ্রশাসন। শিক্ষা প্রযুক্তিতে ১৫%। ১২% শুল্ক ইস্যুতে। প্রতিরক্ষায় ৬% আছে। ৩% করুন। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে লাভ হবে না। যদিনা কিছু মৌলিক পরিবর্তন আনা যায়।
ঢাকা ও ইসলামাবাদের শাসনের পার্থক্য নেই: ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, আজ যারা মেডিক্যালে পড়ে তারা গ্রামে যেতে চায় না। তাই শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা দরকার। ঢাকার শাসন ও ইসলামাবাদের শাসনে কোনো পার্থক্য নেই। ঢাকা থেকে নিয়োগ দেয়া বন্ধ করতে হবে। চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। আমরা চাঁদা দেই না বলে পিসিআর অনুমোদন পেতে ৮ মাস লেগেছে। সব নাগরিকের টিকার অধিকার আছে যা পাবার সম্ভাবনা কম। আগেই সিনোভ্যাক এর টিকা নেয়া উচিৎ ছিল। তাহলে কম দামে টিকা পাওয়া যেত। দরিদ্রতার সাথে স্বাস্থ্যের যোগ আছে। শেষ কথা হলো বিকেন্দ্রীকরণই হলো মুক্তির পথ। ধূমপানের উপরে অনেক বেশি ট্যাক্স বসাতে হবে। তাহলে এই খাত থেকে অনেক আয় হবে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের গণমাধ্যম উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন,তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, অর্থনীতিবিদ ডা. রেজা কিবরিয়া, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়দ সাকি, ভার্চুয়ালি অংশ নেন বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান।