ইরানের বিচার বিভাগের প্রধান এবং কট্টরপন্থী হিসেবে পরিচিত ইব্রাহিম রাইসি বিপুল ভোটে জয় লাভ করেছেন। দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি শুক্রবার নিজের ভোট প্রদানের পর জনগণকে ভোট দিতে উৎসাহিত করলেও, খুব বেশি ভোট পড়েনি। গতকাল শনিবার (১৯ জুন) প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যায়, খামেনি মদদপুষ্ট রাইসি ১৭.৭ মিলিয়ন ভোট পেয়েছেন, যেখানে মোট ভোটারের সংখ্যা ৫৯ মিলিয়নেরও বেশি।
তবে, আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির নিয়ন্ত্রিত একটি প্যানেল রাইসির নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য ঘোষণার পরেই তার এই নিরঙ্কুশ জয় সম্ভব হয়। তবে সরকারের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ ইরানিরা ভোট না দেয়ার মাধ্যমে তাদের সহমর্মীতা ও সমর্থন প্রকাশ করেছেন। এর পাশাপাশি ইরানের সাবেক রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আহমাদিনেজাদ এই নির্বচান বয়কটের ডাক দেন। এদিকে, সরকারি ভাবে ফলাফল ঘোষণা না হলেও, রাইসির প্রতিদ্বন্দ্বীরা তাকে শুভেচ্ছা জানানো শুরু করেছেন। গত শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে ইরানে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ভোটগ্রহণ চলে শনিবার রাত ২টা পর্যন্ত।
এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে অনুমোদন পেয়েছিলেন ৭ জন। ৩ জন সরে দাঁড়ানোয় এখন প্রার্থী ছিলেন ৪ জন। পরবর্তীতে অপর এক প্রার্থীর নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হলে, তিনজন প্রার্থীর মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় রাজধানী তেহরানের একটি কেন্দ্রে নিজের ভোট প্রদান শেষে দেশবাসীকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, ‘প্রত্যেকটি ভোট গণনা করা হবে। আসুন, ভোট দিন এবং আপনার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করুন। এটি দেশের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’ কিন্তু ইরানে ৫৯ মিলিয়নেরও বেশি ভোটার থাকলেও এই নির্বাচনের তেমন ভোটার অংশগ্রহণ করেনি। ভোটগণনার মধ্যেই হার মানলেন প্রতিদ্বন্দ্বীরা, জয় ‘নিশ্চিত’ রাইসির
ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটগণনা এখনো শেষ হয়নি, এর মধ্যেই হার স্বীকার করে সম্ভাব্য বিজয়ী ইব্রাহিম রাইসিকে অভিনন্দনের জোয়ারে ভাসিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। ইরানি সংবাদমাধ্যমের বরাতে শনিবার এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ইরানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেখানে এখনো ভোটগণনা চলছে। শনিবার দিনের শেষভাগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ীর নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করার কথা রয়েছে। গত শুক্রবার ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্ধারণে ভোট দিয়েছে দেশটির জনগণ। এতে কট্টরপন্থী নেতা ইব্রাহিম রাইসির জয় অনেকটাই সুনিশ্চিত বলে শুরু থেকে ধারণা করা হচ্ছে। টেলিভিশনে প্রচারিত ভাষণে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট হাসা রুহানিও ইতোমধ্যে সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। নাম উল্লেখ না করেই তিনি ‘জননির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে’ অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, এর কারণ সরকারিভাবে ঘোষণা না হওয়া। আমি আনুষ্ঠানিক অভিনন্দন জানানো পিছিয়ে দিচ্ছি। তবে এটি পরিষ্কার যে ভোটগুলো কে পাচ্ছেন। নির্বাচনে রাইসির অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক প্রধান আব্দুল নাসে হেম্মতি। এক চিঠিতে তিনি সরাসরি রাইসিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, আশা করি সুপ্রিম নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির অধীনে আপনার প্রশাসন ইরানকে গর্বিত করবে, জীবনমানের উন্নতি ঘটাবে এবং জাতির মঙ্গল ও কল্যাণ নিশ্চিত করবে।
বিচারপতি রাইসিকে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে আগাম অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য প্রার্থীরাও। ২০১৯ সালে রাইসির বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল মার্কিন প্রশাসন। এর কিছুদিন আগেই তাকে বিচারবিভাগের প্রধান নিযুক্ত করেন ইরানের সুপ্রিম নেতা।