করোনাভাইরাস মহামারিকালেও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সমর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। গত বছর গোটা বিশ্বকে করোনা বিপর্যস্ত করে দিলেও ওই ১২ মাসে ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব পেয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। আর এ বছর অন্যতম প্রতিযোগী ও প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে করোনার মারাত্মক প্রভাব এবং অপর প্রতিবেশী মিয়ানমারে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সেখানকার বৈদেশিক বিনিয়োগও চলে আসছে বাংলাদেশে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশি বিনিয়োগ আসার বিষয়টি স্থানীয় নীতি-কৌশল ও সুযোগ-সুবিধার ওপর নির্ভর করে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রতিবেশীদের চেয়ে বেশ এগিয়ে আছে। তবে যেহেতু বিনিয়োগ টানার বিষয়টি প্রতিযোগিতার, এক্ষেত্রে অবস্থান ধরে রাখতে আরও কৌশলী হতে হবে বেজাকে। সহায়তা-প্রণোদনা দিতে হবে ব্যবসায়ীদেরও। বাংলাদেশে এখন বিনিয়োগ আসছে। যেসব সেক্টর ভালো করছে সেসব সেক্টরের মধ্যে গার্মেন্টসের অনেক ব্যবসা এখন মিয়ানমার থেকে শিফট হচ্ছে আমাদের এখানে
বেজার কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা, ১৫ বছরের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতিবছর অতিরিক্ত ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি আয়ের প্রত্যাশা নিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে বেজা। তাদের এসব কার্যক্রমের ফলেই আরও সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে। জানা গেছে, দেশে বছরে অতিরিক্ত ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি আয়ের প্রত্যাশা নিয়ে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। চট্টগ্রামের সীতাকু- ও মিরসরাই উপজেলা এবং ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’।
ইতোমধ্যে ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ এখানে নিশ্চিত হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছে জাপানের নিপ্পন, ভারতের এশিয়ান পেইন্টস, বার্জার পেইন্টস, সিঙ্গাপুরের উইলমারসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠান।
আমরা এফবিসিসিআই, পররাষ্ট্র, বাণিজ্য, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিলে চেষ্টা করবো বিনিয়োগটাকে আরও কীভাবে বাড়ানো যায়। আমাদের কোথায় দুর্বলতা আছে সেসব বিষয়ে সমাধানে আসতে হবে। বিডার সঙ্গে কাজ করবো আমরা এখানে কার্যক্রম পরিচালনা করবে, এমন দেশি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে পিএইচপি, বসুন্ধরা গ্রুপ, টি কে গ্রুপসহ আরও নানা প্রতিষ্ঠান। এ শিল্পনগরে ইতোমধ্যে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বেজার সমন্বয়ের ফলে নির্মিত হয়েছে শেখ হাসিনা সরণি এবং দেশের সর্বপ্রথম সুপারডাইক (প্রতিরক্ষা বাঁধ)। এছাড়া হয়েছে গ্যাস সংযোগ, বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ। এ বিষয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে বর্তমানে ১৩টি শিল্পকারখানা নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে, আরও ১৫টি প্রতিষ্ঠান শিল্পকারখানা নির্মাণের অংশ হিসেবে প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। আগামী জুলাই নাগাদ কমপক্ষে দু’টি শিল্পকারখানা উৎপাদনে যাবে। এ শিল্পনগরের মাধ্যমে ১৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। কোভিড-১৯ মহামারির সময়েও এ শিল্পনগরের জন্য প্রায় পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।’ এসব বিনিয়োগ আসাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন এ বিষয়ে জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন বিনিয়োগ আসছে। যেসব সেক্টর ভালো করছে, সেসব সেক্টরের মধ্যে গার্মেন্টসের অনেক ব্যবসা এখন মিয়ানমার থেকে শিফট হচ্ছে আমাদের এখানে। দেশের ইকোনমিক অঞ্চলগুলো কার্যক্রমে এলে আরও অনেক বিজনেস এফডিআর আসবে। কারণ বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আসতে চান না সুযোগ-সুবিধার অভাবে। আমরা এফবিসিসিআই, পররাষ্ট্র, বাণিজ্য, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিলে চেষ্টা করবো বিনিয়োগটাকে আরও কীভাবে বাড়ানো যায়। আমাদের কোথায় দুর্বলতা আছে সেসব বিষয়ে সমাধানে আসতে হবে। বিডার সঙ্গে কাজ করবো আমরা।’
এ বিষয়ে তৈরি পোশাকশিল্প মালিক ও রফতানিকারক সমিতি বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘করোনােকালে আশানুরূপ বিনিয়োগ হয়নি। বৈশ্বিক ফাইবার চাহিদার বিচারে আমরা অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ কটনের মধ্যে সীমাবদ্ধ আছি। অথচ বিশ্ববাজারে নন-কটনের চাহিদা এখন বেশি। বিগত দশকে আমাদের দেশে নন-কটন, বিশেষত ম্যান-মেড ফাইবার খাতে কিছু বিনিয়োগ হলেও এসব বিনিয়োগ মূলত মূলধন এবং টেকনোলজি নির্ভর।’ তিনি বলেন, ‘মার্কেট রেডি আছে, আমরাও এখন নন-কটনের জন্য রেডি হচ্ছি। আমরা বিরাট মার্কেটে যেতে চাই। আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলোতে এই শিল্পের কাঁচামাল ‘পেট্রোক্যামিকে চিপস’ থাকায় এবং তাদের স্কেল ইকোনমির কারণে তারা প্রতিযোগী সক্ষমতায় অনেক এগিয়ে আছে। এই পরিস্থিতিতে নন-কটন খাতে বিনিয়োগ রফতানি উৎসাহিত করতে, বিশেষ করে প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে নন-কটন পোশাক রফতানির ওপর ১০ শতাংশ হারে বিশেষ প্রণোদনা প্রদানের জন্য অনুরোধ করছি। এতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আরও বাড়বে।’ এদিকে, সার্বিক বিষয় বিবেচনায় আমদানিনীতি সহায়তার সময়সীমা ছয় মাস বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগে এ সময়সীমা ৩০ জুন মার্চ পর্যন্ত থাকলেও গত ১০ জুন বাংলাদেশ ব্যাংক এক প্রজ্ঞাপন জারি করে তা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নীতি সহায়তার সময় বৃদ্ধি আমদানি বাণিজ্যে স্বস্তি আনবে। একইসঙ্গে মহামারির ক্ষতি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করবে ব্যবসায়ীদের।- উৎস:জাগো নিউজ