বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫১ পূর্বাহ্ন

তৈরি পোশাকের প্রকৃত রফতানি কমেছে

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ২০ জুন, ২০২১

বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে তৈরি পোশাক খাতের প্রকৃত রফতানি ছিল ৫৭৭ কোটি ৮৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার। পরের প্রান্তিকেই তা নেমে আসে ৫৩৭ কোটি ৩২ লাখ ১০ হাজার ডলারে। এর পর থেকে ক্রমেই তা কমেছে। তবে চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে এর পরিমাণ কিছুটা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৫২৮ কোটি ৫ লাখ ৫০ হাজার ডলারে। এর পর থেকে টানা কমে জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে তা নেমে এসেছে ৪৫৭ কোটি ৫৮ লাখ ১০ হাজার ডলারে। সে হিসেবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তৈরি পোশাকের প্রকৃত রফতানি কমেছে ২০ দশমিক ৮১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) তৈরি পোশাক খাতের মোট প্রকৃত রফতানি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৪২ কোটি ৭৭ লাখ ৩০ হাজার ডলারে। এর আগে গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪১২ কোটি ৪৬ লাখ ৭০ হাজার ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে এর পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৬৫৮ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার। সে হিসেবে দুই বছরের ব্যবধানে অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে তৈরি পোশাকের প্রকৃত রফতানি কমেছে ২১৫ কোটি ৪০ লাখ ২ হাজার ডলার বা প্রায় ১৩ শতাংশ।
মোট রফতানি মূল্য থেকে কাঁচামাল আমদানির পরিমাণ বাদ দিয়ে হিসাব করা হয় নিট বা প্রকৃত রফতানি। বাংলাদেশের প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাকের মোট রফতানির পরিমাণ বাড়লেও তার নিট আকার দিনে দিনে সংকুচিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত দুই অর্থবছরের ব্যবধানে তৈরি পোশাকের প্রকৃত রফতানি কমেছে প্রায় ২১ শতাংশ। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে হিসাব করা হয় প্রকৃত রফতানি মূল্য । বর্তমানে পোশাক খাতে মূলত ওভেন পণ্যের ক্ষেত্রেই এটি কমতে দেখা যাচ্ছে। এর বিপরীতে নিটওয়্যারের ক্ষেত্রে তা কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী। কাঁচামাল আমদানি বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি পণ্যের মূল্য কমাতে ক্রেতাদের অব্যাহত চাপই তৈরি পোশাকের প্রকৃত রফতানি কমে আসায় ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কারখানা সচল রাখতে প্রতিনিয়ত ভবিষ্যৎ ক্রয়াদেশ সুরক্ষিত রাখার চেষ্টায় থাকেন পোশাক শিল্প মালিকরা। এ ধারাবাহিকতায় অনেক ক্ষেত্রেই উৎপাদন ব্যয়ের চেয়েও কম দামে ক্রেতার কাছে পোশাক বিক্রি করেন তারা। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভবিষ্যৎ কার্যাদেশের সুরক্ষা নিশ্চিতে ৫০ শতাংশের বেশি কারখানা উৎপাদন ব্যয়ের চেয়ে কমে পোশাক বিক্রি করে। পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, গত বছরের তুলনায় এখন পর্যন্ত আমাদের প্রকৃত রফতানির পরিমাণ কমেছে। এর কারণ হচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকায় সবে আউটলেটগুলো খুলতে শুরু করেছে। ফলে এর প্রভাব এখনই দৃশ্যমান হবে না। আরো ১২০-১৩০ দিন পর আমরা এর সুবিধা পাব। এ বছরের অক্টোবর-নভেম্বরের দিকে রফতানি বাড়বে বলে আশা করছি। সামাজিকভাবে বেশি ব্যবহার হওয়ার কারণে কভিডকালীন ওভেন পণ্য রফতানি কমে গেছে। অন্যদিকে নিটওয়্যারের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয় বলে এ ধরনের পণ্য রফতানি বেড়েছে। তন্তুর ব্যবহারে ভিন্নতা এনে রফতানি মূল্য আরো বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, সারা বিশ্বেই ফ্যাব্রিকের গঠন পরিবর্তন হয়ে গেছে। আগে যেখানে ৭০ শতাংশই কটন ব্যবহার করা হতো, বর্তমানে সেখানে ৭০ শতাংশ কৃত্রিম তন্তু ব্যবহূত হচ্ছে। কটন আর কৃত্রিম তন্তু ব্যবহার করে একটি টি-শার্ট বানাতে একই সময় লাগে। কিন্তু কৃত্রিম তন্তুর ক্ষেত্রে দাম বেশি পাওয়া যায়। এতে রফতানি মূল্য বেড়ে যায় ২০-৩০ শতাংশ। এক্ষেত্রে নতুন করে কারখানা করার প্রয়োজন নেই। শুধু কিছু উন্নত মানের যন্ত্রপাতি প্রয়োজন। সরকার যদি এ ধরনের ফ্যাব্রিক ব্যবহার করে রফতানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণা করে, তাহলে সবাই এতে এগিয়ে আসবে। ভিয়েতনাম এগুলো ব্যবহার করে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদেরও সেদিকেই যেতে হবে।
প্রান্তিকভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রকৃত রফতানি কমার বিপরীতে কাঁচামাল আমদানির পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে দেশে তৈরি পোশাকের কাঁচামাল আমদানি হয়েছিল ৩০৮ কোটি ৮১ লাখ ৬০ হাজার ডলারের। এর পরের প্রান্তিকে তা কিছুটা কমে ২৮০ কোটি ৮৬ লাখ ৪০ হাজার ডলারে দাঁড়ায়। এর পরই কাঁচামাল আমদানির পরিমাণ বাড়তে থাকে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে এসে তা দাঁড়ায় ৩৪২ কোটি ৭৯ লাখ ৩০ হাজার ডলারে। এর পরের তিন প্রান্তিকে কভিডের কারণে আমদানির পরিমাণ কম ছিল। যদিও সর্বশেষ চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে কাঁচামাল আমদানির পরিমাণ বেড়ে ৩৩৬ কোটি ৬৫ লাখ ৫০ হাজার ডলারে উন্নীত হয়েছে।
মূলত ওভেন পণ্যের প্রকৃত রফতানি হ্রাসই তৈরি পোশাক খাতের সার্বিক পরিসংখ্যানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে জানিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। এর বিপরীতে নিটওয়্যারের প্রকৃত রফতানি এখন ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। এ বিষয়ে নিট পণ্য প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম বলেন, সাম্প্রতিক প্রবণতা বলছে, মূল্যসংযোজন বেশি হওয়ার কারণে নিটওয়্যারে প্রকৃত রফতানি বাড়ছে। এর কারণ হচ্ছে নিটওয়্যারের অধিকাংশই স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কাঁচামাল ব্যবহার করে তৈরি করা হচ্ছে। অন্যদিকে ওভেন পণ্যের প্রকৃত রফতানি কমছে। নিটওয়্যারের রফতানি বৃদ্ধি এবং ওভেনের কমে যাওয়ার কারণে আমাদের স্থানীয় কাঁচামাল ব্যবহার করে তৈরীকৃত পণ্যের প্রকৃত রফতানির পরিমাণ বাড়ছে। ওভেন পণ্য তৈরির ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। আর নিটওয়্যারের ক্ষেত্রে এ হার মাত্র ১০-১৫ শতাংশ।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানির প্রধান গন্তব্য জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, স্পেন, ইতালি, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস ও কানাডা। চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে দেশগুলো থেকে মোট রফতানি আয় হয়েছে ৬২৩ কোটি ৯৩ লাখ ৩০ হাজার ডলার। এর মধ্যে ৫৫৯ কোটি ৯১ লাখ ৪০ হাজার ডলার বা ৮৯ দশমিক ৭৪ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এক্ষেত্রে রফতানি আয়ের ৪৫ দশমিক ১২ শতাংশ এসেছে ওভেন পণ্য থেকে। নিট পণ্য থেকে এসেছে ৪৪ দশমিক ৬২ শতাংশ। গত প্রান্তিকে আগেরটির তুলনায় দেশগুলো থেকে তৈরি পোশাক রফতানি বাবদ আয় বেড়েছে ৫ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। অন্যদিকে গত অর্থবছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের তুলনায় এবার একই সময়ে দেশগুলো থেকে তৈরি পোশাক রফতানি বাবদ আয় বেড়েছে ১ দশমিক ১৪ শতাংশ।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com