তোফায়েল আহমেদ। ডাকসুর সাবেক ভিপি। ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের মহানায়ক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সচিব। মুক্তিযুদ্ধে মুজিব বাহিনীর অঞ্চলভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত চার প্রধানের একজন।
বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অন্যতম শীর্ষ এই নেতা ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি প্রদানের ঘোষণা দেন। পাঁচবারের সংসদ সদস্য (এমপি) ও দুইবারের মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এখন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। আওয়ামী লীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন তোফায়েল আহমেদ। সাক্ষাৎকারে এই দলের প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ও লক্ষ্যপূরণে অগ্রগতি এবং বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের অভ্যুদয় সম্পর্কে কথা বলেছেন তিনি।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আজ থেকে ৭২ বছর আগে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ছিল একটা লক্ষ্য-উদ্দেশ্য। আজকে ভাবতে ভালো লাগে- বঙ্গবন্ধু সেই লক্ষ্য পূরণে সক্ষম হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু একমাত্র নেতা যিনি উপলব্ধি করেছিলেন, পাকিস্তান বাঙালিদের জন্য হয় নাই। একদিন বাংলার ভাগ্য নিয়ন্ত্রক বাঙালিদের হতে হবে। সে লক্ষ্য সামনে নিয়ে তিনি সংগ্রাম করেছেন। তিনি প্রথমে নিজেকে, তারপর দেশকে, তারপর তার যে নীতি-আদর্শ, সেটাকে প্রস্তুত করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু তার জীবনে অনেকবার, প্রায় ১৩ বছর কারাভোগ করেছেন। কিন্তু কোনোদিন মাথা নত করেন নাই। তিনি যে লক্ষ্য নিয়ে আওয়ামী লীগের কর্মকা- আরম্ভ করেছিলেন, সেই লক্ষ্য তিনি পূরণ করে গেছেন। সেই লক্ষ্যই ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা; জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা সেই লক্ষ্য পূরণ করেছি।’
আন্দোলনের স্মৃতিচারণ করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘জাতির পিতার সেই লক্ষ্য সামনে নিয়েই ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ, ভাষা আন্দোলন, ৫৪-এর নির্বাচন, ৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬-এর ছয় দফা, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচন, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা এই বাংলাদেশকে হানাদার মুক্ত করেছি। আমার মনে আছে- ১৯৬৯-এ আমরা যখন বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য আন্দোলন করি, তখন পল্টনে একটা জনসভা করেছিলাম। ৯ ফেব্রুয়ারি। নাম ছিল “শপথ দিবস”। সেখানে আমি স্লোগান তুলেছিলাম- শপথ নিলাম শপথ নিলাম, মাগো তোমায় মুক্ত করবো, শপথ নিলাম শপথ নিলাম, মুজিব তোমায় মুক্ত করবো।
আমরা ১৯৬৯-এর ২২ ফেব্রুয়ারি, জাতির পিতাকে কারাগার থেকে মুক্ত করে ২৩ ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দিয়েছিলাম। আর (১৯৭১ সালের) ১৬ ডিসেম্বর (দেশকে) হানাদার মুক্ত করে আমরা আমাদের দুটি স্লোগান বাস্তবায়ন করেছি।’
তিনি বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচা পড়লে বোঝা যায়, কত কষ্ট করেছেন তিনি এই দলের জন্য। মন্ত্রিত্বের জন্য মানুষ ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। আবার ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের পর যখন তিনি ক্ষমতায় আসলেন, তখন তিনি আবার আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ ত্যাগ করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী থেকেছেন। আর চার নেতার অন্যতম কামারুজ্জামানকে (শহীদ আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান) সভাপতি ও জিল্লুর রহমানকে (সাবেক রাষ্ট্রপতি) সাধারণ সম্পাদক করেছিলেন।’
তোফায়েল বলেন, ‘ধাপে ধাপে ছাত্রলীগের যারা নেতা ছিল, তারা আওয়ামী লীগের বড় নেতা হয়েছেন। সুতরাং রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতে নাই, এ কথা বলা এখন খুব কঠিন।’
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগ করেছিলেনই বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য। আমি বঙ্গবন্ধুর কাছে থাকতাম। তার স্নেহধন্য আমার জীবন। তিনি (বঙ্গবন্ধু) বলেছিলেন, “পাকিস্তান কাঠামোর মধ্য দিয়ে বাঙালির মুক্তি আসবে না। একদিন বাংলার ভাগ্য নিয়ন্ত্রক বাঙালিদেরকে হতে হবে।” সে লক্ষ্য সামনে নিয়েই তিনি আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করে তার স্বপ্ন পূরণ করেছেন।’
আওয়ামী লীগের অন্যতম শীর্ষ এ নেতা বলেন, ‘দুটি স্বপ্ন ছিল বঙ্গবন্ধুর। একটা স্বাধীনতা, আরেকটি ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। একটি তিনি করে গেছেন। আরেকটি করতে যখন শুরু করেছিলেন; তখনই (১৯৭৫ সালের) ১৫ আগস্ট সপরিবারে তাকে হত্যা করা হয়েছিল। জ্যেষ্ঠ কন্যা ও কনিষ্ঠ কন্যা বিদেশে ছিলেন। ৮১-তে জ্যেষ্ঠ কন্যার হাতে আমরা আওয়ামী লীগের পতাকা তুলে দিয়েছি। সেই পতাকা হাতে নিয়ে নিষ্ঠা, সততা ও দক্ষতার সঙ্গে ৪০ বছর দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এবং চারবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। আমরা আশা করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত হবে।’-জাগোনিউজ২৪.কম