গতকাল বুধবার (২৩ জুন) ছিল আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ৭২ বছর পেরিয়ে ৭৩-এ পদার্পণ করছে দলটি। আন্দোলন-সংগ্রামসহ নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আওয়ামী লীগে নেতাকর্মীর সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি এটি পরিণত হয়েছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলে। সরকার চালাচ্ছে টানা তিন মেয়াদে। দলটির এই দীর্ঘ পদযাত্রায় অনেকে এসেছেন সামনের সারিতে। অনেকের পথচলা হয়ে গেছে আলাদা। সেই সাবেকরা আওয়ামী লীগকে কীভাবে দেখেন, এ নিয়ে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছে জাগো নিউজ। আওয়ামী লীগের সাবেক নেতারা বলছেন, দেশের স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগ। একইসঙ্গে সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দলও। এই দল যেন তার সঠিক পথ ধরে রাখে। শুধু ক্ষমতা নিষ্কণ্টক করার জন্য এ দলের কর্মকা- যেন না হয়। গণমানুষের পক্ষে থাকুক আওয়ামী লীগ, রক্ষা করুক তার অতীত ঐতিহ্য। পূরণ করুক মানুষের প্রত্যাশা।
আওয়ামী লীগের এক সময়ের ডাকসাইটে নেতা বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ‘বাঘা সিদ্দিকী’ নামে পরিচিত ছিলেন তিনি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সমরনায়কও তিনি। মিত্র বাহিনীর সাহায্য ছাড়াই ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের অগ্রভাগে পাকিস্তানিদের হটাতে ঢাকা আক্রমণের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন কাদের সিদ্দিকী। মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও ১৯৯৯ সালে তিনি দলটি ছেড়ে যান। পরে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নামে রাজনৈতিক দল গঠন করেন।
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এ দেশের স্বাধীনতায় নেতৃত্ব দিয়েছে। আওয়ামী লীগ না হলে এদেশ স্বাধীন হতো কি-না, তা বলা যায় না। তাই আওয়ামী লীগের কাছে এদেশের মানুষের প্রত্যাশা অনেক। এখন কিছুটা কষ্ট হয়, কারণ আওয়ামী লীগ সে প্রত্যাশা এখন পূরণ করতে পারছে না। স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ যে দুর্বার ভূমিকা পালন করেছে, সেই আওয়ামী লীগই কখনো কখনো স্বৈরতান্ত্রিক কর্মকা- করায় বেশ কষ্ট লাগে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কাছে প্রত্যাশা—একটি গণতান্ত্রিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ যেন হারিয়ে না যায়। মানুষের যে চাওয়া-পাওয়া, আওয়ামী লীগের কাছেই সবচেয়ে বেশি। এদেশের মানুষ অন্য কোনো দলের কাছে আওয়ামী লীগের মত প্রত্যাশা করে না।’ আওয়ামী লীগের সাবেক নেতাদের একজন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ। স্বাধীন বাংলাদেশে ছাত্রলীগের একমাত্র সভাপতি, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদেরও ভিপি (সহ-সভাপতি) ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকা-ের পরে যে কয়জন প্রতিবাদে সরব হন তাদের মধ্যে সুলতান মনসুর অন্যতম। আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এ রাজনীতিক বর্তমানে গণফোরাম-বিএনপির নেতৃত্বে গড়ে ওঠা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রথম সারির সক্রিয় নেতা।
সুলতান মনসুর এমপি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ তার অতীত ঐতিহ্য রক্ষা করে জনস্বার্থে এগিয়ে যাবে, আগামীতে গণমুখী রাজনীতির পক্ষে ভূমিকা রাখবে, এটাই বর্তমান আওয়ামী লীগের কাছ থেকে মানুষের পাশাপাশি আমিও আশা করি। মানুষ তো এটাই চায় যে, আওয়ামী লীগ জনগণের পক্ষে ভূমিকা রাখুক।’
আওয়ামী লীগের আরেক সাবেক নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না। চাকসুর সাবেক জিএস, ডাকসুর সাবেক ভিপি। জাসদ ছাত্রলীগ করা এই তরুণ রাজনীতিক ১৯৮০ সালে গঠন করেছিলেন বাসদ। এরপর ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেনের সময় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন মান্না। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে পদ হারান তিনি। এরপর নাগরিক ঐক্য গঠন করে আহ্বায়ক হিসেবে দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বর্তমানে আওয়ামী লীগের কট্টর সমালোচক তিনি।
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জাগো নিউজকে মান্না বলেন, ‘যেভাবেই হোক আওয়ামী লীগ দেশের স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী দল বলে প্রতিষ্ঠিত এবং একটা গণতান্ত্রিক দল বলেও প্রতিষ্ঠিত। আসলে ওই বিবেচনা থেকেই আমি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলাম। এখন এটার ঠিক উল্টো জায়গায় আছে দলটি।’
মান্নার দাবি, ‘এখন আওয়ামী লীগ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করার দল। আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার চেতনা ধ্বংস করে দিয়েছে। আমি খুবই ব্যথিত। কারণ সবচেয়ে বড় কষ্ট হচ্ছে, মূল্যবোধ শেষ হয়ে যাচ্ছে। করোনাসহ নানা ইস্যুতে নির্জলা সত্যকে মিথ্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছি আমরা। ফলে পুরো জাতির ওপর যে আছর পড়ছে, সেটা এখন দেখছি না, ভবিষ্যতে দেখবো। শুধু ক্ষমতা নিষ্কণ্টক রাখার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে রাখা হয়েছে। তথাকথিত ডিজিটাল বাংলাদেশে অনলাইন পরীক্ষার নামে একটা রীতিমতো তামাশা চলছে। এটা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মানসিক উন্নয়নের দিক থেকে একদম পঙ্গু বানিয়ে দিচ্ছে।’
‘এগুলো হলো কষ্টের দিক। আমি আওয়ামী লীগের কাছে এখন কোনো প্রত্যাশা করি না। যে রকম দল ভেবে যোগ দিয়েছিলাম, তার ধারে-কাছেও নেই আওয়ামী লীগ। সে রকম জায়গায় আসবে, তাও মনে হয় না’—বলেন মাহমুদুর রহমান মান্না।- জাগোনিউজ২৪.কম