আগের ম্যাচে তার ধীরগতির এক ইনিংস প্রায় ডোবাতেই বসেছিল শেখ জামালকে। মোহামেডানের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ৪২ বলে ৩৮ রান করে মোহাম্মদ আশরাফুল যখন সাজঘরে ফিরছিলেন, দলের ওপর তখন পাহাড়সমান চাপ।
টি-টোয়েন্টি ম্যাচ, রানের সঙ্গে বলের দিকে নজর না রাখলেই বিপদ। আশরাফুল ওই ম্যাচে বেশ কয়েকটি চোখ ধাঁধানো শট খেললেও টি-টোয়েন্টির সঙ্গে ঠিক মানানসই ছিল না তার ইনিংসটা।
আশরাফুলের ধীরগতির ইনিংসের পর শেখ জামালের মাথার ওপর চেপে বসে শেষ ৬ ওভারে ৫০ রানের কঠিন লক্ষ্য। চাইলেই বলেকয়ে এমন লক্ষ্য পাড়ি দেয়া যায়? ভাগ্য ভালো। শেখ জামালের দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়নি নুরুল হাসান সোহান (৩১ বলে ৩৬) আর তানবীর হায়দার (১৭ বলে ৩২) দারুণ দুটি ইনিংস খেলে দেয়ায়।
কিন্তু যদি তারা এভাবে ঝড়োগতিতে রান তুলতে না পারতেন, তবে কি হতো! ম্যাচটা হাত থেকে ছুটে গেলে দায়টা যে আশরাফুলের ওই ধীরগতির ইনিংসটার ওপরই পড়তো, সেটা বলাই বাহুল্য।
সেই আশরাফুলই ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই দেখা দিলেন স্বরুপে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক সময়ের সবচেয়ে বড় তারকা দেখিয়ে দিলেন, বয়সটা ৩৭ ছুঁইছুঁই হলেও টি-টোয়েন্টির সেই মারকাটারি ব্যাটিংটা ভুলে যাননি। এখনও দেড়শর ওপর স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করার সামর্থ্য তার আছে। সামর্থ্য আছে একাই ম্যাচ ঘুরিয়ে দেয়ার।
হ্যাঁ, বলতে গেলে একাই তো। শুধু ব্যাটে ঝড়ই তুললেন না, এবার দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়লেন আশরাফুল। তার ৪৮ বলে গড়া ৭২ রানের হার না মানা এক ইনিংসেই মিরপুরে সুপার লিগের ম্যাচে আবাহনীকে ৬ উইকেট আর ৯ বল হাতে রেখে হারিয়েছে শেখ জামাল।
ওপেনিংয়ে নেমেছিলেন, খেলেছেন একদম শেষ পর্যন্ত। ১২ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা দলকে টেনে নেয়া, সেটাও আবার ১৭৪ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে। আশরাফুল সব কিছু মাথায় নিয়েই খেলেছেন, ঢেলে দিয়েছেন অভিজ্ঞতার সবটুকু।
৩৬ বলে ফিফটির ঘর যখন ছুঁয়েছেন, তখনও শেখ জামালের ৬ ওভারে দরকার ৫৪ রান। এর দুই ওভার পরই (১৭তম ওভারের প্রথম বলে) আউট হয়ে যান ঝড় তুলে দলকে এগিয়ে নেয়া নুরুল হাসান সোহান (২২ বলে ৪ চার, ৩ ছক্কায় ৩৬)।
কিন্তু আশরাফুল মাথা গরম করেননি। জিয়াউর রহমান উইকেটে এসে মারমুখী ব্যাটিং শুরু করলে তাকেও সঙ্গ দিয়েছেন। ৯ বলে ২টি করে চার-ছক্কায় জিয়া শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ২২ রানে। আশরাফুলের ৪৮ বলে ৭২ রানের ইনিংসে ছিল ৮ চার আর ২ ছক্কার মার।
মাঝে ছোটখাটো এক ঝড় তুলেছিলেন নাসির হোসেনও। ২২ বলে ৪ বাউন্ডারি আর ২ ছক্কায় ৩৬ রান করে লেগস্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের শিকার হন তিনি।
এর আগে লিটন দাসের ৫১ বলে ৭০ আর নাইম শেখের ২৮ বলে ৪২ রানের মারকুটে দুটি ইনিংসে ভর করে ৭ উইকেটে ১৭৩ রান তুলেছিল আবাহনী। কিন্তু এমন পুঁজিও যথেষ্ট হলো না আশরাফুল-জিয়াদের অভিজ্ঞতার সামনে।
শেখ জামালের এই জয়কে তাই তারুণ্য ও অনভিজ্ঞতার বিপক্ষে অভিজ্ঞতার জয় বলা যায়। আবাহনী শেষদিকে নির্ভর করেছিল তাদের দুই তরুণ পেসার তানজিম হাসান সাকিব আর মেহেদি হাসান রানার ওপর।
কিন্তু অনভিজ্ঞ দুই পেসার অভিজ্ঞ আশরাফুল, সোহান, জিয়াদের মন পড়তে পারেননি। তাদের স্লোয়ার এবং শর্ট বলগুলোকে পেছন থেকে সময় নিয়ে খেলে শেষ পর্যন্ত জয়ের হাসি হেসেছে শেখ জামাল।