সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে চুক্তিবদ্ধ ট্যাংকার লরিতে জ্বালানি বহনের কথা থাকলেও সেটির ভেতরে ছিল গাঁজার বস্থা। মোট ৩৬ কেজি উদ্ধার করা হয়েছে। আবার প্রাইভেটকারের পেছনের গ্যাস সিলিন্ডার বসিয়ে তাতে বহন করা হচ্ছিল ইয়াবা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে অভিনব পদ্ধতিতে মাদক বহনকারী এই কারবারিরা।
গত বুধবার (২৩ জুন) আলাদা অভিযানে এ ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ (ডিবি)। তারা হলেন- মো. রিগান খাঁন (২৭), মো. জাকির হোসেন (২৪), মো. খোকন মৃধা (২৬), মো. জনি খান (২৫) ও মো. হৃদয় শিকদার (২১)।
গতকাল বৃহস্পতিবার ডিবির গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান জাগো নিউজকে এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার বিকেলে দুটি অভিযান চালানো হয়। যাত্রাবাড়ী এলাকায় প্রাইভেটকারের গ্যাস সিলিন্ডার খুলে পাওয়া যায় ২০ হাজার ইয়াবার চালান। সেখানে গ্রেফতার করা হয় জনি খান ও হৃদয় শিকদার নামের দুজনকে।
আরেকটি অভিযানে রাজধানীর শ্যাওড়া এলাকায় তেলের ট্যাংকার তল্লাশি করে মিলেছে ৩৬ কেজি গাঁজা। গ্রেফতার করা হয়েছে রিগ্যান খান, জাকির হোসেন ও খোকন মৃধা নামের তিনজনকে।
ট্যাংকারে তেলের বদলে গাঁজা
একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি তেল বহনে ব্যবহৃত হয় ট্যাংকারটি। চালক খোকন মৃধা মাদক বহনের চুক্তি করেন জাকির হোসেন ও রিগ্যান খানের সঙ্গে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থেকে গাঁজার চালান ঢাকায় নিতে লেনদেন হয় মোটা অঙ্কের টাকা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা সফল হতে পারেননি।
তেল আনলোডের পর ট্যাংকারে বিশেষ কৌশলে ভরা হয়েছিল কয়েক বস্তা গাঁজা। ৩৬ কেজি গাঁজা নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থেকে ঘোড়াশাল হয়ে ঢাকায় ঢোকার চেষ্টা করছিলেন তারা। শ্যাওড়া এলাকায় ধরা পড়েন ডিবির হাতে।
আটক দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিবি গুলশানের ডিসি মশিউর রহমান জানান, তারা আখাউড়ার ভারতীয় সীমান্ত এলাকা থেকে গাঁজা সংগ্রহ করে। ছোট ছোট চালান নিয়ে তারা ঢাকায় পৌঁছে বিভিন্ন এলাকার মাদক ডিলারদের কাছে তা বিক্রি করে। আগে অনেকবার তারা বিশেষ কৌশলে মাদক চালান আনলেও এবার ধরা পড়েছে।
গ্যাস সিলিন্ডারে ইয়াবা
একটি সাদা রঙের রি-কন্ডিশন্ড টয়োটা এক্সিও প্রাইভেটকার যাত্রাবাড়ী হয়ে শহরের ভেতরে যাচ্ছিল। গাড়ির গায়ে মার্কারের কালিতে লেখা ছিল চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রিলিজের নম্বর। রেজিস্ট্রেশন হয়নি বলে শোরুমের নম্বর ঝুলিয়ে গাড়িটি চলছিল।
গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ডিবির একটি দল বুধবার বিকেলে যাত্রাবাড়ী এলাকায় গাড়িটি থামায়। তল্লাশির সময় চালক দাবি করেন, গাড়িটি বন্দর থেকে রিলিজ করে গাজীপুরের শোরুমে নেয়া হচ্ছে।
এ সময় গাড়ির পেছনে গ্যাসের সিলিন্ডার দেখে পুলিশের সন্দেহ হয়। কারণ আমদানি করা রি-কন্ডিশন্ড গাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার থাকে না। ভিন্ন আদলের এ সিলিন্ডারের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে মাদক চোরাচালানের তথ্য।
পুলিশ জানায়, সিলিন্ডার খুলে উদ্ধার করা হয়েছে ২০ হাজার ইয়াবা। আটক জনি খান ও হৃদয় শিকদার পেশাদার ইয়াবা কারবারি। টেকনাফের উখিয়া থেকে ৮ লাখ টাকায় ইয়াবার চালান কিনে তারা গাজীপুর যাচ্ছিলেন।
পুলিশ বলছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতেই মাদক কারবারিদের অভিনব এ পরিকল্পনা। মাদক বিক্রির জন্য প্রাইভেটকারটি ভাড়া নেয়া হয়েছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্তরা জানিয়েছে।