কভিড-১৯-পরবর্তী টেকসই ও স্থিতিস্থাপক বিশ্বব্যবস্থার জন্য পানি সম্পর্কিত বিপর্যয় নিরসনে শক্তিশালী অন্তর্ভুক্তিমূলক আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, পরিষ্কার সুপেয় পানির ক্রমবর্ধমান ঘাটতি, কলেরা, টাইফয়েড ইত্যাদির মতো রোগের প্রাদুর্ভাব আমাদের পানির প্রয়োজনীয়তার কথা মনে করিয়ে দেয়। পানিবাহিত ব্যাধি নিরসনে আরো শক্তিশালী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সৃষ্টি করা আমাদের সামাজিক দায়িত্ব।
গতকাল ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতিসংঘ পানি ও বিপর্যয় সম্পর্কিত বিশেষ থিম্যাটিক অধিবেশনে আগে ধারণকৃত ভিডিও বার্তায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। পানিসংক্রান্ত বিপর্যয় সমাধানে রাজনৈতিক ইচ্ছা ও সম্পদকে সংগঠিত করতে পানি ও দুর্যোগ সম্পর্কিত উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ ও নেতৃত্ব প্যানেল (এইচইএলপি) এ অধিবেশনটির আয়োজন করেছে।
‘আরো বেশি স্থিতিস্থাপক ও টেকসই কভিড-১৯-পরবর্তী বিশ্বের দিকে এগিয়ে যাওয়া’ শীর্ষক শিরোনামে অধিবেশনটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে পানি ও বিপর্যয় বিষয়ে হাঙ্গেরি, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, মেক্সিকো, নেদারল্যান্ডস, রিপাবলিক অব কোরিয়া, তাজিকিস্তানের বিশেষজ্ঞ ও নেতারা অংশ নিচ্ছেন। অনুষ্ঠানের সহআয়োজক হিসেবে রয়েছে জাপানের ন্যাশনাল গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট ফর পলিসি স্টাডিজ (জিআরআইপিএস)।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব এখন কভিড-১৯-এর জন্য ব্যাপক স্বাস্থ্য সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা প্রচুর অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিঘেœর সৃষ্টি করছে। এর কারণে আমাদের টেকসই উন্নয়নের গতি হ্রাস পেয়েছে।
ভাষণে পানি সম্পর্কিত বিপর্যয় মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের বিবেচনার জন্য পাঁচটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। এগুলো হলো পানি নিরাপত্তার জন্য একটি বিস্তৃত, ফলাফলভিত্তিক, দৃঢ় ও অভিযোজিত বৈশ্বিক পদক্ষেপ নেয়া। এছাড়া রাজনৈতিক সচেতনতা, ভালো অনুশীলন, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময় বাড়ানো; পানি ব্যবস্থাপনা, পানি নীতি এবং উচ্চ ও নি¤œ অববাহিকার দেশগুলোর মধ্যে পানি ব্যবহারের বিষয়টি সমন্বয় হওয়া; সেনডাই ফ্রেমওয়ার্ক, এসডিজি ও প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে মনোযোগ দেয়া এবং ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর পর্যাপ্ত নিরাপদ পানি পাওয়া নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় অর্থায়ন।
সা¤প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন দুর্যোগের মুখোমুখি হওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কয়েকটি দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছিÍচলমান এ করোনা মহামারীর মধ্যে সুপার সাইক্লোন আম্পান ও মৌসুমি বন্যায় ৬০ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একইভাবে গত মাসে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারণে ২৭টি উপজেলায় ফসল, মৎস্য সম্পদ ও অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশ অন্যতম একটি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ। বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় ও নদীভাঙন এখন আরো বেশি হচ্ছে। এ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় বাংলাদেশ দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসের ব্যবস্থা নিয়েছে। নিরাপদ, জলবায়ু স্থিতিস্থাপক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ অর্জনে ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ প্রণয়নের কথা উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়া নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও জলবায়ু স্থিতিশীল প্রকল্প বাস্তবায়নে ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান’ তৈরির কথাও জানান।
এ সময় আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে সারা দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীনদের ঘর তৈরির কর্মসূচির কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ভূমিহীন, গৃহহীন ও বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর আবাসনের জন্য তার সরকার ৮ লাখ ৮৫ হাজার দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া সরকার ১২ হাজার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও দুই লাখ হেক্টর উপকূলীয় এলাকায় বনায়ন করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সমুদ্রের পানি বৃদ্ধি, লবণাক্ততা ও জলোচ্ছ্বাসের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে লাখ লাখ মানুষকে সুরক্ষা দিতে উপকূলীয় এলাকায় শক্তিশালী বাঁধ নির্মাণ প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। পাশাপাশি ৫ হাজার ৭০০ কিলোমিটার উপকূলীয় বাঁধ শক্তিশালী ও উঁচু করার কাজ চলছে।
মুজিব বর্ষে দেশে ৩ কোটি গাছের চারা রোপণের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা গ্রিন বেল্ট উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি।