ব্রিটেনে বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত ছেলে-মেয়েদের নানা ধরনের সাফল্যগাঁথায় এবার যুক্ত হলো ফারহানা আহমদের নাম। ফারহানা বিশ্বখ্যাত লন্ডন ইউনিভার্সিটির স্বনামধন্য দ্যা সিটি ল স্কুল থেকে এলএলবিতে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়েছে। তার সর্বমোট গড়ে মার্কস ছিল ৭৬.৩%। এমন ভালো ফলাফল এর আগেও ইউনিভার্সিটির অনেক ছেলে-মেয়ে করেছে। তবে ফারহানার অসাধারণ সাফল্য ছিল প্রথম হওয়ার সাথে কয়েকটি সাবজেক্টে তিনি তার ইউনিভার্সিটির ল ডিপার্টমেন্টের অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে সর্বোচ্চ মার্কস পেয়েছেন।
দাদা আলহাজ মোঃ রফিজ আলীর মাধ্যমে ব্রিটেনে এসেছিলেন ফারহানার বাবা। সমাজ ও দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে কৃতিত্বের সাথে বার-এট-ল ডিগ্রি অর্জন করেন ফারহানার বাবা নাজির আহমদ। আইন পেশার পাশাপাশি ফারহানার বাবা ব্যরিস্টার নাজির আহমদ মানুষকে সংবিধান, আইন ও সমসাময়িক নানা বিষয়ে যুগোপযোগী ধারণা দিতে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে কলাম লিখে থাকেন। বাংলা ও ইংরেজিতে এ পর্যন্ত পাঁচটি বই বের হয়েছে তার। লন্ডনের নিউহ্যাম বারায় দুই দুইবার নির্বাচিত ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন কাউন্সিলার ব্যারিস্টার নাজির আহমদ। ব্রিটেনের স্বনামধন্য চার্টার্ড ইনষ্টিটিউট অব্ আরবিট্রেটরস্-এর একজন ফেলো তিনি। এছাড়া তিনি কুইনমেরী ইউনিভার্সিটির এলামনাই এম্বেসেডর ও লন্ডন মেয়র অফিসের ইন্ডিপেন্ডেন্ট কাস্টডি ভিজিটর ছিলেন। ব্যারিস্টার নাজির আহমদ ও কবি সালমা আহমদের পাঁচ ছেলে-মেয়ের মধ্যে চারজনই আইন পেশার মাধ্যমে সমাজ ও দেশের সেবা করতে চান। তাদের বড় মেয়ে তাসনিয়া আহমদ কয়েক দিন আগে ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টমিনিস্টার থেকে সেকেন্ড ক্লাস ফার্স্ট ডিভিশন পেয়ে এলএলবি (অনার্স) ডিগ্রি লাভ করেছে। তৃতীয় মেয়ের ইচ্ছা কুইন মেরি ইউনিভার্সিটিতে ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে পড়ার । চতুর্থ সন্তান এহসান আহমদ এ বছর জিসিএসই দিবে। আর তাদের সবচেয়ে ছোট সন্তান হাসান মোর্শেদ আহমদ পড়াশুনা করছেন ইয়ার ফাইভে। তাদেরও ইচ্ছা বাবা ও বড় বোনদের মতো আইন বিষয়ে পড়াশুনা করে সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। ব্রিটিশ হাইকোর্টের বিচারপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন ফারহানা আহমদ। ভালো ফলাফলের পর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি জানান, ‘প্রথমেই শুকরিয়া জানাচ্ছি মহান আল্লাহপাকের প্রতি। এরপর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমার শ্রদ্ধেয় পিতামাতা ও শিক্ষকম-লীর প্রতি যাদের সাপোর্ট, সহায়তা ও গাইডেন্স আমাকে এই ফলাফল আনতে উদ্বুদ্ধ করেছে। আমি আলোকিত সমাজ ও কমিউনিটি বিনির্মানে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা রাখতে চাই। বাবাকে অনুসরণ করে এমন মানুষ হতে চাই যাতে ছোট ভাই বোন আমাকে অনুসরণ করতে পারে।‘ যেসব বিষয়ে সর্বোচ্চ মার্কস পেয়ে ফারহানা রেকর্ড করেছে সেগুলো হচ্ছে ফ্যামিলি ল’তে ৮১.৫ শতাংশ, কোম্পানি ল’তে ৮১.৫ শতাংশ, কমপ্যারেটিভ কনস্টিটিউশনাল ল’তে ৮২ শতাংশ, ক্রিমিনাল ল’তে ৮২.৮ শতাংশ, প্রফেশনাল কোয়ালিফিকেশন মডিউল-এ ৮৩ শতাংশ, ইমিগ্রেশন ল’তে ৮৫ শতাংশ এবং এডভান্সড ক্রিমিনাল ল’তে ৮৮ শতাংশ। ছোটবেলা থেকে প্রখর মেধাবী ফারহানা আহমদ এ বছর সেপ্টেম্বরে বার-এট-ল এবং এলএলএম-এ ভর্তি হবে। ইতোমধ্যে সে তিনটি বিশ্বখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বার-এট-ল কোর্স এবং একইসাথে এলএলএম করার অফার পেয়েছে। এমনকি ফলাফল বের হবার আগেই একটি থেকে আনকন্ডিশনাল অফার পেয়েছেন। লন্ডনে জন্ম নেয়া ফারহানা আহমদের পৈত্রিক নিবাস বাংলাদেশের সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের বাহাড়া দুবাগ গ্রামে।