করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে চলমান কঠোর বিধিনিষেধ আরও সাতদিন বাড়িয়েছে সরকার। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ১৪ জুলাই পর্যন্ত জারি থাকবে বিধিনিষেধ। গতকাল সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন সমন্বয় অধিশাখা থেকে এই সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এর আগে গত বুধবার ৭ জুলাই পর্যন্ত বিধিনিষেধ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি হয়। আলোচ্য সময়ে ব্যাংক ও শেয়ারবাজারের লেনদেন চলমান লকডাউনের নিয়মেই চলবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র ঢাকাটাইমসকে এ প্রসঙ্গে জানান, ১ জুলাই থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত সরকারের কঠোর লকডাউন চলমান রয়েছে। এসময়ে আমরা সীমিত আকারে ব্যাংক খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে গত ৩০ জুন একটি প্রজ্ঞাপন জারি করি। এতে ৭ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংক লেনদেনের নির্দেশনা দেয়া হয়। তবে যেহেতু সরকার আরো এক সপ্তাহ কঠোর বিধিনিষেধ অরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। ফলে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত ব্যাংকের লেনদেন চলমান নিয়মেই অর্থাৎ ৩০ জুনের নির্দেশনা অনুযায়ী চলবে।
গত ৩০ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, লকডাউন চলাকালে ব্যাংকের লেনদেন সকাল ১০টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত চলবে। এবং পরবর্তী আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য বিকাল ৩টা পর্যন্ত ব্যাংক খোলা থাকবে। বিধি-নিষেধ চলাকালে গ্রাহকদের হিসাবে নগদ/চেকের মাধ্যমে অর্থ জমা ও উত্তোলন, ডিমান্ড ড্রাফট/পে-অর্ডার ইস্যু ও জমা গ্রহণ, বৈদেশিক রেমিট্যান্সের অর্থ পরিশোধ, সরকারের বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমের আওতায় প্রদত্ত ভাতা/অনুদান বিতরণ করা যাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ১ জুলাই (বৃহস্পতিবার) ব্যাংক হলিডে এবং ২ ও ৩ জুলাই সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় ব্যাংক বন্ধ থাকবে। বিধি-নিষেধ চলাকালে শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটিসহ প্রতি রবিবার ব্যাংক বন্ধ থাকবে। তবে, এক্ষেত্রে অনুচ্ছেদ নং ৩(ঙ) এবং ৩(চ) এর নির্দেশনা পরিপালন করতে হবে।
ছুটির দিন ও রবিবার ব্যতীত সপ্তাহের অন্যান্য দিনে সীমিত পরিসরে ব্যাংক ব্যবস্থা পরিচালনার সময়ে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের অত্যাবশ্যকীয় বিভাগসমূহ যথাসম্ভব সীমিত লোকবলের মাধ্যমে খোলা রাখতে হবে। ব্যাংকের প্রিন্সিপাল/প্রধান শাখা এবং সকল বৈদেশিক বাণিজ্য শাখা (এডি শাখা) সীমিতসংখ্যক অত্যাবশ্যীয় লোকবলের মাধ্যমে খোলা রাখতে হবে। রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকসমূহের ক্ষেত্রে ব্যাংক ব্যবস্থাপনার বিবেচনায় প্রতিটি জেলা সদরে ও উপজেলায় একটি করে শাখা খোলা রাখতে হবে। অন্যান্য সকল ব্যাংকের ক্ষেত্রে প্রতিটি জেলা সদরে একটি শাখা খোলা রাখতে হবে এবং জেলা সদরের বাইরে ব্যাংক ব্যবস্থাপনার বিবেচনায় অনধিক দুটি শাখা খোলা রাখা যাবে।
কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন ও ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা সার্বক্ষণিক চালু রাখতে হবে এবং এটিএম বুথগুলোলোতে পর্যাপ্ত নোট সরবরাহসহ সার্বক্ষণিক চালু রাখতে হবে। একই ব্যাংকের খোলা রাখা বিভিন্ন শাখা ও একই শাখার বিভিন্ন হিসাবের মধ্যে অর্থ স্থানান্তর, ট্রেজারি চালান গ্রহণ, অনলাইন সুবিধা সম্বলিত ব্যাংকের সব গ্রাহকের এবং উক্ত সুবিধা বহির্ভূত ব্যাংকের খোলা রাখা শাখার গ্রাহকদের বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক চালু রাখা বিভিন্ন পেমেন্ট সিস্টেমস্/ক্লিয়ারিং ব্যবস্থার আওতাধীন অন্যান্য লেনদেন সুবিধা প্রদান এবং জরুরি বৈদেশিক লেনদেনসংক্রান্ত কার্যাবলী সম্পাদন করা যাবে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সমুদ্র/স্থল/বিমান বন্দর এলাকায় (পোর্ট ও কাস্টমস এলাকা) অবস্থিত ব্যাংকের শাখা/উপ-শাখা/বুথসমূহ সার্বক্ষণিক খোলা রাখার বিষয়ে ৫ আগস্ট ২০১৯ এ জারিকৃত ডিওএস সার্কুলার লেটার নং-২৪ অনুসারে স্থানীয় প্রশাসনসহ বন্দর/কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনাক্রমে স্বাস্থ্য বিধি পরিপালন নিশ্চিতপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিধিনিষেধ চলাকালে যে সকল শাখা বন্ধ থাকবে সে সকল শাখার গ্রাহক সেবা কার্যক্রম খোলা রাখা শাখার মাধ্যমে সম্পাদনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বন্ধকৃত শাখার গ্রাহকগণের গ্রাহক সেবা প্রাপ্তি বিষয়ে অবহিত করতে উক্ত শাখার দৃশ্যমান স্থানে তা বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রদর্শন নিশ্চিত করতে হবে। সকল খোলা রাখা শাখার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনপূর্বক সীমিত সংখ্যক লোকবলের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা সেবা নিশ্চিত করতে হবে। বিধিনিষেধ চলাকালে ব্যাংকের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের স্ব স্ব অফিসে আনা-নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ব্যাংক কর্মকর্তা/কর্মচারীগণকে চলাচলের সময় স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত পরিচয়পত্র বহন করতে হবে।
এদিকে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মুহাম্মদ রেজাউল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে জানান, সরকার ঘোষিত প্রজ্ঞাপনে ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংক খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আমরাও পুঁজিবাজার খোলা রেখেছি। লকডাউন চলাকালে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত পুঁজিবাজারে লেনদেন চলবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তিনি বলেন, সরকার আরও এক সপ্তাহ কঠোর বিধিনিষেধ অরোপ করেছে। এ সময়ে ব্যাংক যদি তাদের লেনদেনের সময়সূচি পরিবর্তন না করে তবে আমরাও পরিবর্তন করবো না। চলমান নিয়মেই পুঁজিবাজারে লেনদেন বলবে। ব্যাংক যদি তাদের লেনদেনের সময় পরিবর্তন করে তবে তখন আমরাও নতুন সিদ্ধান্ত নেবে।