ধামরাইয়ে প্রতি বছরের ন্যায় শুক্লা পক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে ঐতিহাসিক রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। সনাতন ধর্ম অনুয়ায়ী জগন্নাথ দেব বিশেষ রথে ভক্তদের আশীর্বাদ করতে স্বর্গ থেকে নেমে আসেন। কোভিড-১৯ মরণব্যাধি করোনাভাইরাসের কারণে গত চারশ বছরের রথযাত্রার চাকা এবারও ঘুরবে না বলে জানিয়েছে রথযাত্রার পুজা কমিটির লোকজন। সেই কারণে ধামরাইয়ে বসবে না রথের মেলা। যশোমাধবের মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক নন্দ গোপাল সেন বলেন, ধামরাইয়ে রথযাত্রার রয়স প্রায় চারশ বছর, মরণব্যাধি করোনার কারণে এই বছর সীমিত আকারে কায়েত পাড়া মন্দিরে সরকারী স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুধু ধর্মীয় পূজা অর্চনা করা হবে। আজ রাতে অধিবাসি পূজা শেষ হবে।এর পরই শুরু হওয়ার কথা যশোমাধবের রথযাত্রার পূজা। কিন্তু সরকারের বিধিনিষেধ থাকায় ঘটা করে হবে না রথযাত্রা। গত বছরেও ঘটা করে পালিত হয়নি যশোমাধবের রথযাত্রা। শুধু স্বাস্থ্যবিধি মেনে মন্দিরের পূজার কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। সেই জন্যে বসেনি রথের মেলাও। এই বারও এর ব্যাতিক্রম হবে না বলে জানিয়েছে ধামরাই উপজেলা প্রশাসন ও মন্দিরের পূজা কমিটির লোকজন।সেই কারণে রথের সাজসজ্জার কাজও করা হয়নি সেইভাবে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী সৈন্যবাহিনীর কারণে একবার রথযাত্রা বন্ধ রাখা হয়েছিল। আর ২০২০/২১ সালে পর পর দুইবার রথযাত্র বন্ধ রাখা হলো এটাও একটা ইতিহাস হয়ে রইল বাংলার বুকে। রথযাত্রার বিষয়ে ধামরাই থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোঃ আতিকুর রহমান বলেন, করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় চলমান লকডাউনের মধ্যে লোকজন জমায়েত বন্ধ রাখা হয়েছে।এই কারণে রথযাত্রাও বাতিল করা হয়েছে। তবে মন্দিরের ভিতরে পূজার কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রথযাত্রার ইতিহাস সর্ম্পকে পূজা কমিটির সহ-সভাপতি ডাঃ অজিত কুমার বসাক বলেন, ততকালিন সময়ে ধামরাই এলাকার রাজা ছিলেন শ্রী যশোপাল। সেই সময়ে দুরদুরান্ত থেকে সৈন্য সামন্ত নিয়ে দুর্গম এলাকা পার হয়ে পাশের গ্রামে হাতির পিঠে করে যাওয়ার সময় কায়েতপাড়া একটি মাটির টিবির সামনে থেমে যায় হাতি। তখন রাজামশায় শত চেষ্টা করেও হাতিটিকে সামনের দিকে নিতে পারলেন না। এতে রাজামশায় অবাক হয়ে হাতির পিঠে থেকে নেমে পড়লেন এবং সেই মাটির টিবিটি খনন করার জন্য রাজা হুকুম করলেন। মাটির টিবি খনন করে দেখে যায় সেখানে একটি মন্দির রয়েছে। সেই মন্দিরে কত গুলি মূর্তি পাওয়া যায়। মূর্তি গুলির মধ্যে শ্রীমাধবের মূর্তি পাওয়াই যায়। সেগুলি ভক্তিকরে রাজামশায় সেগুলি সাথে করে নিয়ে আসেন। সেই দিন রাতেই স্বপ্নে দেখেন রাজা যশোপাল। মধাব তাকে নির্দেশ দেন পূজা করার জন্য। বলে দেন নামের সাধে মাধবের নাম বসিয়ে পূজা করার জন্য। সেই থেকে রাজা যশোপালের নাম হয় যশোমাধব। এর পর পন্ডিত শ্রীরামজীবন রায়কে মাধব মূর্তি নির্মাণের দায়িত্ব দেন। সেই থেকে শুরু হয় মধাবমন্দিরের পূজা। সেই নিয়ম অনুযায়ী আজ চলে আসছে মাধব মন্দিরের রথযাত্রা । উল্লেখ্য ১৯৭১ সালে ৯এপ্রিল ধামরাই গণহত্যার দিন ঐতিহাসিক এই রথযাত্রাকে পুড়িয়ে দিয়েছিলেন পাকিস্থানের সেনারা। তখন রথটি ৪০ফুট প্রস্থ, ৭৫ ফুট উচ্চতা, ৩তলা বিশিষ্ট, ৯টি প্রকোষ্ঠ, ৩২টি চাকা এবং ৯টি মাথা বিশিষ্ট সৌন্দর্যশীল নানা রকম কারুকার্য ছিল। যেটির বয়স ছিল প্রায় চারশ বছর। দেশ স্বাধীন হলে ১৯৭৩ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ছোট আকারেও রথ তৈরি করে পূনরায় ধর্মীয় উৎসব পালন শুরু করেন।