জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের এবারের ঈদে ক্যাম্পের বাইরে বের হতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এজন্য সেখানে এখনই নজরদারি জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। স¤প্রতি র্যাবসহ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে, সার্বিক আইনশৃঙ্খলা ও স্থানীয়দের রক্ষা, মানব ও মাদক পাচার প্রতিরোধে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প এলাকা থেকে বাইরে বের হতে দেওয়া হবে না। তারা নিজেরা দ্বন্দ্ব সংঘাতে জড়িয়ে পড়া ছাড়াও চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইসহ স্থানীয় বাংলাদেশি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা করছে। ক্যাম্প এলাকায় জঙ্গি তৎপরতা নিয়েও উদ্বিগ্ন গোয়েন্দারা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, স্থানীয় পুলিশের পাশাপাশি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিনটি ইউনিট, র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন। তারপরও তারা অপহরণ, মাদক ব্যবসা, চুরি-ডাকাতিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। জুন মাসেই সেখানে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হাতে একাধিক অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গত ৩০ জুন জাদিমুড়ার স্থানীয় বাসিন্দা হাবিব উল্লার পরিবারের ওপর রোহিঙ্গা ডাকাত হাসেম উল্লাহর নেতৃত্বে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। এসময় হাবিবের পরিবারের তিন সদস্য গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর জাদিমুড়ার ২৭ নং ক্যাম্পের ৮ নং ব্লকের বাসিন্দা রোহিঙ্গা ফজল হক (৫০) ও একই ক্যাম্পের হামিদা খাতুন (২৫) নামের দুজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রকাশ্যে তারা ডাকাতির হুমকি-ধামকি দিচ্ছে স্থানীয় বাংলাদেশিদের। অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করছে। সেখানকার দায়িত্বরত একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, জাদিমুড়া এলাকায় ডাকাতের ভয়ে স্থানীয়রা রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে উগ্রবাদ প্রচারের অভিযোগে গত ২৬ জুন রাজধানীর রামপুরা এলাকা থেকে আনসার আল ইসলামের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করে ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট- সিটিটিসি। গ্রেফতারকৃতরা হলো সাইয়েদ তাইমিয়া ইব্রাহীম ওরফে আনোয়ার, মারুফ চৌধুরী মিশু ওরফে ফারহান ও ফয়জুল মোরসালিন। কয়েকদিন আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর এক বৈঠকে র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যরা যাতে ক্যাম্পের বাইরে বের হয়ে সমস্যার সৃষ্টি করতে না পারে সে বিষয়ে র্যাবের সার্বক্ষণিক টহল অব্যাহত থাকবে। বাড়ানো হবে গোয়েন্দা নজরদারি।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকা থেকে সন্ত্রাসী কর্মকা- ও নাশকতার হুমকির তথ্য রয়েছে কিনা? জানতে চাইলে র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, কোনও হুমকি নেই। স¤প্রতি রোহিঙ্গাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাত বেড়ে গেছে। ক্যাম্পের ভেতরে মারামারি করছে। ক্যাম্পের বাইরে বিভিন্ন জায়গায় তারা ডাকাতির চেষ্টা করে। তারা নিজেদের মধ্যে একটা গ্রুপ তৈরির চেষ্টা করছে। সেজন্য র্যাবের একটা প্রস্তাবনা ছিল যে রোহিঙ্গারা যাতে ক্যাম্পের বাইরে না যেতে পারে।
র্যাবের এই মুখপাত্র বলেন, ক্যাম্পের বাইরে গেলে তারা স্থানীয় বাংলাদেশিদের ওপর হামলা করতে পারে। চুরি, ডাকাতি করতে পারে। সেজন্য র্যাবসহ সেখানে যেসব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছে তাদের সবার প্রতি প্রস্তাবনা ছিল রোহিঙ্গারা যাতে ক্যাম্পের বাইরে বেরোতে না পারে সেই পদক্ষেপ নেওয়া। ওই এলাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির জন্য দেশের ভেতরের ও বাইরের কারও ইন্ধন আছে কিনা জানতে চাইলে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, এমন কোনও তথ্য নেই। তবে মিয়ানমারের কোনও ডাকাত গ্রুপের ইন্ধন থাকলেও থাকতে পারে।