কবিতাকে শৈল্পিক জীবনবোধে উপস্থাপিত করার প্রত্যয়
সময় যতো বিধ্বংসী হোক না কেনো কবিতা আমাদের জয়লাভের হাতিয়ার। শুধু শিল্পর জন্য নয়, জীবনের জন্য কবিতা। জীবনস্বপ্ন এবং মানবিক মূল্যবোধ নির্মাণে কবিতার ভূমিকা অনন্য। সময়কে ধারণ করা কবিতার অন্যতম আদর্শ। কবিকে সেই বোধ নিয়ে কাব্যচর্চা করতে হবে। কবিতাকে শৈল্পিক জীবনবোধে উপস্থাপিত করতে হবে। কবিতা বাংলাদেশ আয়োজিত বর্ষাকালীন কবিতা উৎসবে বক্তাগণের কণ্ঠে উঠে আসে এসব কথা।
বর্ষাকালীন এ কবিতা উৎসবটি উযযাপিত হয় ২০২১ সালের ১৩ আগস্ট শুক্রবার। দিনটি বাংলা কবিতা আন্দোলনের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সময় হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশ এবং দেশের বাইরের বাংলাভাষাভাষী হাজার কবির মিলনমেলা হয়েছিলো এইদিনে। অনুষ্ঠানে তিনশতাধিক কবি কবিতা পাঠে অংশগ্রহণ করেনএবং প্রায় এক হাজার কবিতাপ্রেমিক অতিথি ও সুধিজন অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।ভার্চ্যুয়াল মিডিয়ার মাধ্যমে কবিতাকেন্দ্রীক এতো বড় আয়োজন ইতোপূর্বে কখনো অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই।
দুপুর সাড়ে তিনটা থেকে জুম অ্যাপসের মাধ্যমে ‘কবিতা বাংলাদেশ’ আয়োজিত বর্ষাকালীন কবিতা উৎসব ১৪২৮ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন কবিতা বাংলাদেশ এর সভাপতি কবি আল মুজাহিদী। চারটি অধিবেশনে অনুষ্ঠিত হয় বর্ষাকালীন কবিতা উৎসব। চারটি পর্বে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন কবি কে জি মোস্তফা, কবি জাহিদুল হক, কবি আবদুল হাই শিকদার এবং কবি মোশাররফ হোসেন খান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কবিতা বাংলাদেশ এর সাধারণ সম্পাদক কবি ও গবেষক ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ।
কবি আবদুস শাকুর তুহিনের তিলাওয়াত এবং বাচিক শিল্পী ইসমাইল হোসেন এর কণ্ঠে কবি নাঈম আল ইসলাম মাহিনের লেখা কাব্যানুবাদ আবৃত্তির মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভসূচনা ঘটে। উদ্বোধনী পর্বে স্বাগত বক্তব্যে ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ বলেন,কবিতা বাংলাদেশ এর যাত্রা শুরু হয়েছিলো কবি আল মাহমুদ এবং কবি মতিউর রহমান মল্লিকের মতো কিছু স্বপ্নবাজ মানুষের হাতধরে। কবি আল মাহমুদ, কবি আবদুল মান্নান সৈয়দ, আফজাল চৌধুরী এবং কবি মতিউর রহমান মল্লিকসহ তাঁদের অনেকেই আমাদের মাঝে নেই। তাঁদের সকলের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। ২০০০ সালে হোটেল পূর্বাণীর জলসা ঘরে জাকজমকপূর্ণ কবিতার আড্ডা হয়েছিলো। ২০০৩ সালে বিসিআইসি মিলনায়তনে আয়োজিত হয়েছিলে বর্ষাকালীন কবিতা উৎসব। সেই ধারাবাহিকতায় আজকের এ আয়োজনÑ বর্ষাকালীন কবিতা উৎসব ১৪২৮।’
বাচিকশিল্পী নির্ঝর আহমেদ প্লাবন আবৃত্তি করেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত কবিতা ‘সোনার তরী’। এরপরেই শুভেচ্ছা কথা বলার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় বাংলাসাহিত্যের খ্যাতনামা ছড়াকার ও গদ্যশিল্পী অতিথি কবি সাজজাদ হোসাইন খান, অতঃপর কবি ও গবেষক ড. মাহবুব হাসানকে।বক্তব্য রাখেন সত্তর দশকের অন্যতম কবি জাহাঙ্গীর ফিরোজ। অতঃপর বক্তব্য প্রদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় পশ্চিমবঙ্গেরকবি এবং নতুন গতি পত্রিকার সম্পাদক এমদাদুল হক নূরকে। এরপরেই আসে উদ্বোধনী পর্বের মাহেন্দ্রক্ষণ। বাচিকশিল্পী আজহারুল ইসলাম রনি কণ্ঠে কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত কবিতা ‘খেয়াপারের তরণী’ আবৃত্তির পরেই কবিতা বাংলাদেশ এর সভাপতি কবি আল মুজাহিদীর বক্তব্যের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষিত হয়। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, কবিতা বাংলাদেশ গতানুগতিক কোন প্রতিষ্ঠান নয়, বরং কবিতা বাংলাদেশ একটি ভিন্ন কণ্ঠস্বর, অন্য কণ্ঠস্বর। প্রাগতিক, প্রাতিসিক এবং কবিতাপ্রগতির প্রস্বরতার নতুন নতুন মাত্রা এবং প্রবর্তনা যোগ করার জন্যই এই প্রতিষ্ঠানের জন্ম এবং আর্বিভাব। আমাদেরকে আরো সৃজনশীল হওয়ার জন্য যে পরিশ্রম দরকার তা করতে হবে। কবিতা একটি লম্বাপথ, দীর্ঘপথ। এ লম্বা পথে পদচারণায় আমাদের যে অভিযাত্রিকতা তা সফল করার জন্য আমাদের একযোগে কাজ করে যেতে হবে। আর সামগ্রিকভাবে একটি সুস্থ-স্বাভাবিক মানবিক সর্বাত্মক গণতান্ত্রিক পরিবেশ আমাদের কাম্য, সেই পরিবেশকে সৃষ্টি করার জন্য আমাদের ধীরে ধীরে কাজ করে যেতে হবে। পাথরের উপর পাথর বসিয়ে সে কাজ আমাদের করে যেতে হবে।
এরপর শুরু হয় কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ। এপর্বে কবিতা পাঠ করেন কবি ফরিদ সাঈদ, কবি আমিনুজ্জামান, কবি আরকে সাব্বির আহমেদ, মির্জা মোহাম্মদ নূরুন্নবী নূর, কবি মুহাম্মদ কফিল উদ্দিন, কবি শহীদ সিরাজী, কবি আলাউদ্দিন আল হেলাল, কবি শাহীন সৈকত, কবি তুষার রায়হান, কবি হেলাল আনওয়ার, কবি মঞ্জিলা শরীফ, কবি নূরুল আলম হেলালী, কবি ইব্রাহিম ম-ল, কবি আবুল বাশার, কবি নূরুল হুদা নূরী, কবি আমিনুল ইসলাম। এ পর্বের সভাপতি কবি কে জি মোস্তফার সভাপতির বক্তব্যের মধ্যদিয়ে এ অধিবেশনের সমাপ্তি ঘটে। পর্বটি উপস্থাপনায় ছিলেন কবি নাঈম আল ইসলাম মাহিন।
‘আধুনিক বাংলা কবিতা : প্রকৃতি ও ধারা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠান দিয়ে সাজানো হয়েছে দ্বিতীয় অধিবেশন। কবি জাহিদুল হকের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কবি জাকির আবু জাফর। তিনি আধুনিক বাংলা কবিতার পথপরিক্রমা এবং কবিতায় আধুনিকতার নানাবিধ অনুসঙ্গ নিয়ে তথ্যভিত্তিক বক্তব্য উপস্থাপন করেন তিনি।প্রবন্ধের উপর আলোচনা করেন কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, কবি সোলায়মান আহসান, কবি হাসান আলীম, কবি চৌধুরী গোলাম মাওলা, কবি মুকুল চৌধুরী, কবি সরোজ দেব,ড. ইয়াহইয়া মান্নান, কবি সায়ীদ আবুবকর,কবি মুহাম্মদ আবদুল বাতেন প্রমুখ। প্রায় পৌণে দুই ঘন্টার এ অধিবেশনে বাংলা কবিতার আধুনিকতায় যে বাঁকমোহনা তা বিস্তৃতভাবে উঠে আসে। সেমিনার পর্বের সঞ্চালক ছিলেন কবি ও গবেষক ড. ফজলুল হক তুহিন।
কবি আবদুল হাই শিকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় তৃতীয অধিবেশন। বাচিকশিল্পী মাহবুব মুকুলের কণ্ঠে কবি আবদুল মান্নান সৈয়দ এর বিখ্যাত কবিতা ‘সকল প্রশংসা তার’ আবৃত্তির মধ্যদিয়ে এ অধিবেশনের সূচনা হয়। এ অধিবেশনে অতিথি ছিলেন কবি জয়নুল আবেদীন আজাদ, কবি মুহাম্মদ নাসির উদ্দীন,কবি আসাদ বিন হাফিজ,কবি আহমদ মতিউর রহমান,কবি নাসির হেলাল,কবি উৎপল কান্তি বড়ুয়া,কবি আবুবকর সালেহ,কবি হারুন ইবনে শাহাদাত,কবি ও গবেষক ড. আবু নোমান, কবি বাছিত ইবনে হাবীব, কবি কারুল আলম, সেখ আবদুল মান্নান, কবি আযাদ আলাউদ্দিন, কবি অঞ্জলী রানী দেবী প্রমুখ। কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি শাহজাহান মোহাম্মদ, কবি আবদুল আজিজ জামালী, কবি আজিজ হাকিম, কবি ম্যাকি ওয়াদুদ, কবি মিজানুর রহমান জাহিদ, ফারহানা শরমিন জেনী, কবি সন্দীপ রায়, কবি আরিফ আল ইমরান, কবি হালিমা অরন্য, কবি আতিক হেলাল, কবি আলতাফ হোসাইন রানা, কবি সাকিবুর রহমান, কবি আশিস কুমার নন্দী, কবি আনোয়ার রশিদ, কবি মতিউর রহমান খান, কবি জসিম উদ্দিন বিজয়, কবি মাফিয়া ময়না, কবি নেহাল মাহমুদ, কবি মীম মিজান, কবি এমরান মাহমুদ প্রত্যয়, কবি নাবিউল হাসান, কবি শেখ তৈমুর আলম, কবি ও গবেষক ড. মণীষা চক্রবর্তী, কবি জামাল দ্বীন সুমন, কবি নুরুন্নাহার নূরু, কবি রফিকুল ইসলাম সাবুল, কবি সোহেল মাহবুব, কবি শামসাদ জাহান লিপি, কবি যুথিকা পা-ে, কবি প্রতীক ওমর, কবি রবিউল মাশরাফী, কবি কাজী খলিলুর রহমান, কবি সাবের রাহী, কবি আমিন আল আসাদ, কবি মোল্লা আলী আছগার, কবি জেসমিন জাহান, কবি আমিন আফসারী, মীর ইশরাত জাহান, কবি মাস্টার নজরুল ইসলাম, কবি সৈয়দা কামরুন্নাহার শিল্পী, কবি আলাউদ্দিন আল হেলাল, কবি মুহাম্মদ ইব্রাহিম বাহারী প্রমুখ।অনুষ্ঠানে কবি মতিউর রহমান মল্লিকের বিখ্যাত কবিতা ‘তুমি কি এখন’ আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী শরীফ বায়েজিদ মাহমুদ। কবি সীমান্ত আকরাম এ অধিবেশন সঞ্চালনা করেন।
কবি মোশাররফ হোসেন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় চতুর্থ অধিবেশন। এ পর্বে অতিথিকবি ছিলেন কবি আশরাফ আল দীন, কবি মনজু রহমান, কবি কবি আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ, কবি শরিফ আবদুল গোফরান, কবি কমরুদ্দিন আহমদ, কবি গাজী এনামুল হক,কবি জয়ন্ত রসিক, কবি ইব্রাহিম ম-ল,কবি নয়ন আহমেদ, কবি মনসুর আজিজ, কবি রেদওয়ানুল হক,কবি নাজমুল আনসারী,ড. রুমী শাইলা শারমিন,ড. মুর্শিদা খানম, কবি জাহেদুর রহমান চৌধুরী, কবি আফসার নিজামপ্রমুখ।এ পর্বেবাচিকশিল্পী ইকবাল সাকীর কণ্ঠে কবি ফররুখ আহমদের বিখ্যাত কবিতা ‘পাঞ্জেরী’ এবং বাচিকশিল্পী তারিক হাসিবের কণ্ঠে উচ্চারিত হয় কবি আল মাহমুদের বিখ্যাত কবিতা ‘হে আমার আরম্ভ ও শেষ’।কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠে অংশ নেন কবি গোলাপ আমিন, কবি আকিব শিকদার, কবি ওয়াহিদ জামান, কবি আবুল খায়ের নূর, কবি শওকত আলম, কবি জাফর আহমদ, কবি শেখ তামিম বিল্লাহ, কবি বাসব রায়, কবি ইয়াকুব বিশ্বাস, কবি শোয়াইব আহমদ,কবি বিভীষণ মিত্র, কবি শঙ্খশুভ্র পাত্র, কবি বেলাল হোসাইন বকুল, কবি শেখ বিপ্লব হোসেন, কবি ইমরান হাসান, কবি শাহানারা শারমিন, কবি ইমরান হাসান, কবি মুহিবুল্লাহ ফুয়াদ, কবি নার্গিস নাহার রুনু, কবি মুহাম্মদ কুতুবুদ্দিন, কবি সুমাইয়া জামান, কবি হোসনে আরা মেঘনা, কবি এফ শাহজাহান, কবি কাজী খলিলুর রহমান, কবি ওয়াহিদ আল হাসান, কবি সেলিম আকন্দ, কবি জাহাঙ্গীর আলম আজাদ, কবি রেহেনা খাতুন টুলটুলি, কবি গাজী নজরুল ইসলাম, কবি রানা জামান, কবি হেলেনা রহমান আঁখি, কবি মুস্তাফা ইসলাহী, কবি আমির বিন সুলতান, কবি নকীবুল হক, কবি আমিনুল ইসলাম সৈকত, কবি মোহাম্মদ শামীম, কবি রুহুল কাদের বাবুল, কবি ফজলুল মল্লিক, কবি জহির সাদত, কবি তানিয়া খাতুন, কবি সাইফ ফরহাদী, কবি গাজী মেহেদী হাসান, কবি সৌরভ আল হাসান, কবি মামুনুর রশিদ ম-ল, কবি মুস্তাফা নূর,কবি সঞ্চয় কবির, কবি মোস্তফা হায়দার, কবি তারিফা হায়দার,কবি সীমান্ত আকরাম, কবি গাজী আশা, কবি শাহানারা খাতুন রহিমা, কবি কফিল উদ্দিন, কবি গোলাম মাওলা ইউসুখ প্রমুখ। পর্বটি সঞ্চালনা করেন কবি কবি শাহাদাৎ সরকার।
অনুষ্ঠানটি কবিতা বাংলাদেশ এর ফেসবুক পেইজ থেকে লাইভ সম্প্রচার করা হয়। কারিগরি সহায়তায় ছিলেন কবি মোস্তফা মনোয়ার, শিল্পী মনিরুল ইসলাম, কবি ইয়াছিন মাহমুদ। প্রেসবিজ্ঞপ্তি