সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে আদিবাসী নারী কৃষিশ্রমিক রেবতি হাজং, মেদিনী রাংসা, অন্তরা হাজং, লক্ষি হাজং। দুপুরে কখনো খায় আবার কখনো না খেয়ে কাজ করতে থাকে। সারা দিন রোদ, বৃষ্টি উপেক্ষা করে মাঠে কাজ করে দুর্গাপুর সদর ইউনিয়নের নারী কৃষি শ্রমিকরা। পুরুষদের পাশাপাশি কাজের ক্ষেত্রে নারী শ্রমিকরাও সমান তালে এগিয়ে রয়েছে। কিন্তু কাজ শেষে মজুরি প্রদানে বৈষম্য তাদের হতাশ করে। বুধবার বিকেলে এ প্রতিনিধি কে এমনটাই জানালেন ভবানীপুর গ্রামের নারী কৃষি শ্রমিকরা। এ নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সারা দিন খেতে কাজ করলেও তারা পায় দিন শেষে ৪শত টাকা। যা পুরুষ শ্রমিকদের তুলনায় অনেক কম। অথচ একই কাজের মুল্য পুরুষ কৃষি শ্রমিকের পাচ্ছেন ৬ শত টাকা। গতকাল বিকেলে উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়নের আদিবাসী গ্রাম বিজয়পুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ধান খেতে ১১ জনের একদল নারী শ্রমিক আলু ধান ক্ষেতে কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ দৃশ্য ধারণ করতে গেলে যুগান্তর কে শোনান তাদের কষ্টের কথা। শ্রম বৈষম্য নিয়ে কথা হয় আদিবাসী নারী শ্রমিক মনিষা রেমা এর সাথে, তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় ধান, পাট এবং আলু তোলার কাজ করি আমরা। কিন্তু আমরা আমাদের ন্যায্য মজুরি কখনোই পাই না। তারা আরো বলেন, ‘অভাবের তাড়নায় সংসারে সহযোগিতার জন্য বিভিন্ন মৌসুমে আমাদের মাঠে কাজ করতে হয়। বর্তমানে জিনিস পত্রের দাম অনেক বেড়েছে কিন্ত আমাদের মজুরি তেমন বাড়ছে না। খেতে সারাদিন কাজ করে আমরা পাই মাত্র ৪শত টাকা অথচ একই কাজ আমাদের সঙ্গে যে পুরুষরা করেন তারা পাচ্ছেন ৬০০ টাকা। আমরা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত। স্থানীয় কৃষক দুলাল মিয়া জানান, এ অঞ্চলের আদিবাসী নারীরা পুরুষ শ্রমিকদের সাথে তাল মিলিয়ে সমান তালে মাঠে কাজ করে। তবে তাদের মজুরি প্রদানে বৈষম্য রয়েছে এটা সত্যি। তিনি আরো জানান, এ বৈষম্য থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা দরকার। আগে থেকেই এমনটা চলে আসছে তাই কেউ কিছু বলে না। উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের নারী নেত্রী রাখী দ্রং বলেন, এ চিত্র শুধু আমাদের এলাকায় নয় পুরো দেশেরই চিত্র। মাঠ পর্যায়ে অসহায় দরিদ্র নারীরা যারা মাঠে-ঘাটে কাজ করেন, তাদের মজুরিটা কখনোই সঠিকভাবে দেওয়া হয় না। এ ব্যবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে এবং নারীদের মর্যাদা দিতে সরকারি ভাবে হস্তক্ষেপ কামনা করছি। দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজীব-উল-আহসান এ প্রতিনিধি কে বলেন, নারীদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে তাদের কাজের প্রকৃত মুল্য দিতে হবে। কোনো ভাবেই তারা যেন প্রকৃত প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত না হয় সেজন্য সামাজিকভাবে সচেতন থাকতে হবে। নারী শ্রমিকের মজুরী বৈষম্য নিয়ে কোন অভিযোগ পেলে অবশ্যই তা ক্ষতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।