শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৫৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
বিজয় ছিনিয়ে নিতে ষড়যন্ত্র চলছে: নজরুল ইসলাম খান পতিত আ’লীগ সরকারের কবল থেকে ভিক্ষুকরাও রেহাই পায় নাই : ডা. শফিকুর রহমান জাতির মুক্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকার বিকল্প নেই : তারেক রহমান ব্যবসায়ী ওয়াদুদ হত্যা: সাবেক ডিসি মশিউর সাত দিনের রিমান্ডে ভারতে ‘অবৈধ’ শেখ হাসিনা, এখন কী পদক্ষেপ নেবে ভারত দেশবাসী তারেক রহমানের নেতৃত্বে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছে ফোন নম্বর মুখস্থ থাকাই কাল হলো তোফাজ্জলের? আরও কিছু সংস্কার কমিশন করার পরিকল্পনা আছে : নাহিদ মুসল্লিদের প্রতিরোধের মুখে স্বৈরাচারী হাসিনার নিযুক্ত খতিব রুহুল আমিনের পলায়ন আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া দেশের জন্য অশনিসংকেত: অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার

দূষণ ঠেকাতে সাভারের চামড়া শিল্পনগরী বন্ধের সুপারিশ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৪ আগস্ট, ২০২১

সঠিকভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না করায় সাভারের চামড়া শিল্পনগরী বন্ধ করে দেয়ার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। গতকাল বিকালে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক থেকে এ সুপারিশ আসে। বৈঠক থেকে জানানো হয়, কয়েক দিনের মধ্যে পরিবেশ মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনকে (বিসিক) এ বিষয়ে চিঠি পাঠানো হবে। সংসদীয় কমিটি বলছে, পরিবেশ দূষণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সঠিক পদক্ষেপ নিলে তারপর ট্যানারিগুলো চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে সাভারের চামড়া শিল্পনগরী পরিদর্শন করা হয়। পরিবেশ অধিদপ্তরও বিভিন্ন সময় সেখানে অভিযান চালিয়েছে। এসব পরিদর্শনে দেখা গেছে, এ শিল্পনগরীতে যে পরিমাণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা রয়েছে উৎপাদন হয় তার চেয়ে অনেক বেশি। সব বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করতে না পারার কারণে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। দূষণের দায়ে এখানকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে নানা সময়ে জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু জরিমানা করা ও আদায় কোনো সমাধান হতে পারে না। এজন্য এ শিল্পনগরী বন্ধ করে দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে, সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে দৈনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা ২৫ হাজার ঘনমিটার। অথচ সেখানে এখন রোজ ৪০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য উৎপাদন হয়। অর্থাৎ দৈনিক ১৫ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য পরিবেশে মিশছে। সব মিলিয়ে গত তিন বছরে ১ কোটি ৬৪ লাখ ঘনমিটার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বাইরে থেকে গেছে, যা পরিবেশকে দূষিত করেছে।
সাবের হোসেন বলেন, সাভারে শুধু তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা যায়। হেভি মেটাল ও ক্রোমিয়াম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো ব্যবস্থাই সেখানে নেই। পরিদর্শন হয়, এরপর জরিমানা করা হয়। সেটা আপিলে অপেক্ষমাণ থাকে, এতে কেবল সময় ক্ষেপণ হয়। সবচেয়ে বড় কথা, এসব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে হবে। তা না হলে প্রচুর বর্জ্য নদীতে মিশে যাচ্ছে। অথচ দূষণ কমানোর জন্যই হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর করা হলো। কিন্তু আদতে দূষণ কমল না।
এছাড়া ট্যানারি পরিচালনার জন্য প্রতি বছর যে পরিবেশ ছাড়পত্র নিতে হয় তা নবায়ন না করতেও সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানান কমিটির সভাপতি।
চামড়া শিল্পকে আন্তর্জাতিক মানসম্মত পরিবেশে উন্নীত করতে ২০০৩ সালে সাভারের হেমায়েতপুরে চামড়া শিল্পনগরী গড়ে তোলার কাজে হাত দেয় বিসিক। যদিও হাজারীবাগের ট্যানারি মালিকরা সাভারে যেতে আগ্রহী ছিলেন না। আদালতের নির্দেশে ২০১৭ সালের এপ্রিলে সেখানে যেতে বাধ্য হন তারা। শুরুতে কথা ছিল শিল্পনগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ট্যানারিগুলো নিজেরাই বর্জ্য শোধনাগার বা ইটিপি স্থাপন করবে। কিন্তু ট্যানারিগুলো তা করতে পারেনি। এরপর শিল্প মন্ত্রণালয় প্রকল্পের আওতায় সিইটিপি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। সেজন্য ২০১০ সালে প্রকল্প সংশোধনও করা হয়। তখন প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে ৫৪৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরই মধ্যে শিল্পনগরীর কোনো সুবিধাই নিশ্চিত না করে ট্যানারিগুলোকে বারবার স্থানান্তরের সময়সীমা বেঁধে দিতে থাকে শিল্প মন্ত্রণালয়। তাতেও কাজ না হওয়ায় উচ্চ আদালত হাজারীবাগের কারখানাগুলোর গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার আদেশ দেন। এরপর ২০১৭ সালের এপ্রিলে কারখানাগুলো একযোগে স্থানান্তরিত হয়। সিইটিপির বিভিন্ন কম্পোনেন্টের কাজ সমাপ্ত হওয়ার আগেই ১৩০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদন শুরু করে। আগে হাজারীবাগের বর্জ্য ও দূষিত রাসায়নিক বুড়িগঙ্গা নদীর পানিতে মিশ্রিত হতো, এখন সাভারের চামড়া শিল্পের দূষণ ধলেশ্বরী নদীর পানিতে মিশে যাচ্ছে।
সংসদীয় কমিটির সুপারিশের বিষয়ে বিসিকের চেয়ারম্যান মোশতাক হাসান জানান, বিষয়টি মন্ত্রণালয় থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। জানালে তিনি বিষয়টি সম্পর্কে বলতে পারবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানকার কারখানাগুলো চামড়া শোধনে যে পরিমাণ পানি ব্যবহার করার কথা তার চেয়ে আড়াই গুণ বেশি পানি ব্যবহার করছে। একাধিকবার বিষয়টি তাদের নজরে আনা হয়েছে, তাদের সচেতন করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে তারা বিষয়টিতে সতর্ক হয়নি। পরে তাদের পানি ব্যবহারের ওপর আলাদা চার্জ ধার্য করা হয়েছে। আশা করা যায়, এখন তারা পানি ব্যবহারে আরো সচেতন হবে। ফলে দূষণও কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তরের ক্ষমতা আছে দূষণের দায়ে যেকোনো সময় যেকোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার। তারা ভালো মনে করলে সেটি করতে পারে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com