জুলাই মাসের শুরু থেকে রপ্তানি পণ্য পরিবহনে জট লাগে চট্টগ্রাম বন্দরে। মাসের শেষের দিকে সেই জট কিছুটা কমলেও আবার নতুন করে আমদানি পণ্যে জট লাগে। সেই জট চলে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। তবে পরিকল্পিত নানা উদ্যোগে আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আমদানি-রপ্তানি উভয় পণ্যের জট কেটে গতি ফিরে এসেছে বন্দরে। সংশ্লিষ্টরা জানান, সিঙ্গাপুর, কলম্বো ও মালয়েশিয়ার মতো ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরগুলোতে অচলাবস্থার কারণে জুলাইয়ের শুরু থেকে বন্দরে রপ্তানি পণ্য পরিবহনে ভয়াবহ জট লাগে। এরপর বন্দর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে বিশেষ ফিডার ভেসেলে রপ্তানি পণ্য পরিবহন করা হয়। এতে বন্দরে রপ্তানি পণ্যের জট কেটে যায়।
আবার করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণরোধে ২৩ জুলাই থেকে সরকার কঠোর লকডাউন (বিধিনিষেধ) ঘোষণা করে। এর আগের লকডাউনে শিল্প-কারখানা খোলা রাখলেও পরে তা বন্ধ রাখা হয়। এ কারণে বন্দর থেকে পণ্য খালাস কমিয়ে দেয় আমদানিকারকরা। ফলে বন্দরে আমদানি পণ্যের জট লাগে। একপর্যায়ে বন্দর ইয়ার্ড কনটেইনারে প্রায় পূর্ণ হয়ে যায়। এবার জট নিরসনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে আমদানি পণ্য বেসরকারি ডিপোগুলোতে স্থানান্তরের অনুমতি চেয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ২৫ জুলাই এনবিআর একটি অফিস আদেশে বন্দরে জমে থাকা কনটেইনার অভ্যন্তরীণ ১৯টি ডিপোতে (আইসিডি) স্থানান্তরের অনুমতি দেয়। এরপর জমে থাকা কনটেইনার ডিপোগুলোতে স্থানান্তর করা হয়। এছাড়াও ১ আগস্ট থেকে সরকার দেশের সব শিল্পকারখানা খুলে দেয়। ধীরে ধীরে পণ্য দ্রুত খালাস করতে থাকে আমদানিকারকরা। ফলে বন্দরে আমদানি পণ্যের জট কমে আসে।
বন্দর ও বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা) সূত্রে জানা গেছে, বন্দরে বর্তমানে আমদানি পণ্যের কনটেইনার রয়েছে ৩৬ হাজার ৪৭৯ টিইইউস (২০ ফুট দৈর্ঘ্যের)। বিপরীতে বন্দরের মোট ধারণক্ষমতা প্রায় ৪৯ হাজার টিইইউস। আবার আইসিডিগুলোতে আমদানি পণ্যের কনটেইনার রয়েছে ১৪ হাজার ৪৫২ টিইইউস, রপ্তানি পণ্যের রয়েছে ছয় হাজার ৮৯২ টিইইউস ও খালি কনটেইনার ৩৬ হাজার ৯ টিইইউস। সব মিলিয়ে আইসিডিগুলোতে ৭৮ হাজার ধারণক্ষমতার বিপরীতে মোট ৫৭ হাজার ৩৫১ টিইইউস কনটেইনার রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরসচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে পরিকল্পিত পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যার কারণে বন্দরে আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহনে জট কেটে গেছে। গত ১৫ দিন ধরে বন্দরে সবকিছু স্বাভাবিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এক-দুইদিনের মধ্যে জাহাজ জেটিতে ভেড়ানো হচ্ছে। বন্দরে অপেক্ষমাণ জাহাজ রয়েছে মাত্র আটটি।’
বিকডা সভাপতি নুরুল কাইয়ুম খান বলেন, ‘সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় বন্দর স্বাভাবিক হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে ঘোষিত বিধিনিষেধের কারণে বিশ্বের অনেক বড় বড় বন্দরে জট লেগে আছে। সরকারের উদ্যোগে বিভিন্ন সংস্থার যৌথ প্রচেষ্টায় চট্টগ্রাম বন্দরে এখন জট নেই। এটি আমাদের জন্য অনেক বড় সাফল্য।’ জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের ৯৪ ভাগ আমদানি-রপ্তানি হয়ে থাকে। আবার মূল রপ্তানি বাণিজ্যের ৯৮ শতাংশ এ বন্দর দিয়ে হয়। বন্দরে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাত হাজার কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়।