দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার ২ নং কাটলা ইউনিয়নের শৈলান গ্রামে ব্রিজ আছে সড়ক নেই। আর সড়ক না থাকায় বিপাকে পড়ছে গ্রামবাসীসহ পথচারীরা। তবে ব্রিজটি ছিলো ঐ গ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি, কিন্তু দাবি পুরন হলেও পুরন হয়নি সড়ক নির্মাণ। শুক্রবার (২৭ আগস্ট) বিরামপুর উপজেলার শৈলান গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে বয়ে গেছে একটি গভীর (খাড়ি) নদী। এক সময় নদীর দুপাশ ছিলো অনেক চওড়া। বিভিন্ন কারণে নদীটি সংকীর্ণ হয়ে গেছে, তবে তার গভীরতা রয়েছে অনেক। নদীটির পূর্ব দিকে শৈলান গ্রাম, আর পশ্চিমে রয়েছে বিশাল মাঠ। প্রায় হাজার বিঘা ধানাজমি। আর এসব জমি এই শৈলান গ্রামবাসীর। এক সময় গ্রামবাসীকে এই গভীর নদী দিয়ে অনেক কষ্ট করে পরাপার হতে হতো। বর্ষা মৌসুমে তাদের বিপদের শেষ থাকতো না। দুই থেকে তিনটি বাঁশের সাহায্যে তারা নদী পার হতো এবং হাজার বিঘা জমির ধান কেটে জীবনের ঝুকি নিয়ে নদী পার হয়ে গ্রামে আনতে হতো। জনশ্রুতি রয়েছে এই নদী পার হতে কয়েক জন মারাও গেছেন। জানা যায়, গত দুই বছর আগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ২৪ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৪ টাকা ব্যয়ে ব্রিজটি নির্মাণ করে। কিন্তু ব্রিজ নির্মাণ হলেও তার পশ্চিম পাশে কোন রাস্তা হয়নি। আর রাস্তা নির্মাণ না হওয়ায় গ্রামবাসী নদীর পশ্চিম পাশের গ্রামবাসী কিংবা তাদের আত্মীয় স্বজনদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে। এছাড়াও হাজারও বিঘা জমির ধান আনা খুবি কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে গ্রামবাসীর। গ্রামবাসী নুর-নবী বলেন, আমাদের গ্রামের এই নদীর ব্রিজটি ছিলো দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি। গত দুই বছর আগে ব্রিজটি হয়েছে। কিন্তু ব্রিজের পশ্চিম পাশে রাস্তা হয়নি। রাস্তাটি হলে আমাদের অনেক উপকার হবে। ফেরদৌস নামের একজন গ্রামবাসী বলেন, ব্রিজ হয়েছে, রাস্তা হয়নি, রাস্তা হলে অনেক উপকৃত হবো। রাস্তা না হওয়ার জন্য আমরা ওপার থেকে ধান কেটে আনতে অনেক অসুবিধা হয়। সরকার যেন আমাদের ব্রিজের পশ্চিম পাশে রাস্তা করে দেয়। গ্রামবাসী জামাল উদ্দিন বলেন, ব্রিজটি হওয়াতে আমরা অনেক উপকৃত হয়েছি। আমাদের বহু কষ্ট হতো, ব্রিজটি নির্মাণের আগে। এই নদী আমাদের অনেক ক্ষতি করেছে। নদী পার হতে কয়েক জনকে জীবনও দিতে হয়েছে। এখন আমাদের আর কোন বিপদ নাই। তবে নদীর ঐপারে রাস্তার কোন ব্যবস্থা হয়নি। রাস্তা হলে আমরা আরও ভাল থাকতে পারবো। একজন পথচারী কাবুল হোসেন বলেন, এই বড় মাঠের ওপাশে আত্মীয়ওর বাড়ি যাবো, কিন্তু কোন রাস্তা নেই। মাঠের আয়ল দিয়ে যেতে হবে। গ্রামবাসী আখলীমা বেগম বলেন, নদীর ঐপারের গ্রামগুলোতে আমাদের অনেক আত্মীয়-স্বজন আছে, রাস্তা না থাকার কারণে তাদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ খুব কম হয়। রাস্তার অভাবে অন্য রাস্তা দিয়ে তাদের নিকট যেতে হয়। সরকার যদি আমাদের এই ব্রিজের পশ্চিম পাশ দিয়ে রাস্তা তৈরি করে দিতো তাহলে আমাদের আর কোন সমস্যা থাকতো না। বিরামপুর উপজেলার ২ নং কাটলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজির উদ্দিন বলেন, শৈলান গ্রামের ব্রিজটি ছিলো গ্রামবাসী দীর্ঘদিনের চাওয়া। আমি অনেক চেষ্টা করে উপর মহলে যোগাযোগ করে ব্রিজটি নির্মাণ করে দিয়েছি। ব্রিজের পূর্বপাশে রাস্তা আছে, পশ্চিমেও সরকারি রাস্তার জায়গা রয়েছে। কিছুদিন আগেও রাস্তা তৈরির জন্য লোক লাগিয়ে ছিলাম। রাস্তাটি পুরোপুরি হয়নি। তবে কিছুদিনের মধ্যে রাস্তার কাজ শুরু করবো। বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পরিমল সরকার জানান, আমি এবিষয়ে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে একটা প্রজেক্ট তৈরি করবো এবং সড়কটি তৈরির ব্যবস্থা গ্রহন করবো। এবিষয়ে বিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান রাজু আহমেদ জানান, রাস্তা না থাকলে পথচারীসহ গ্রামবাসীর চলাচল অসুবিধা হবে। আমি ব্রিজ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নিবো।