মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ১২:০০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কমিশন ভাবছে না: ইসি আলমগীর বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীকে কঠোরভাবে বাজার তদারকির নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী কিশোরগঞ্জে লিচুগ্রামে লিচুর খরা ডিপজলের সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞা সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ভুল তথ্য দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের অনুমতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী : ওবায়দুল কাদের ব্যাটারিচালিত রিকশা কোথায় কীভাবে চলবে নির্দেশনার পর ব্যবস্থা: ডিএমপি টানা সাত কার্যদিবস পতনে শেয়ারবাজার ইরানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী হলেন পরমাণু আলোচক বাঘেরি ইব্রাহিম রাইসির উত্তরসূরি কে এই মোহাম্মদ মোখবের

যুক্তরাষ্ট্রে কবিগুরুর স্মৃতির বাড়ি কিনলেন দুই বাঙালি

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই বাড়ি ও মৌসুমী দত্ত ও কাজল মুখোপাধ্যায়। ছবি: আনন্দবাজার অনলাইন

বাড়িটিতে কি সত্যিই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকেছিলেন? প্রায় ১১০ বছর আগের কথা। সেখানেই রচিত হয়েছিল নোবেলজয়ী ‘গীতাঞ্জলি’র ইংরেজি অনুবাদ। ওই বাড়িতে বসেই কবি উইলিয়াম বাটলার ইয়েটস-সহ একাধিক খ্যাতনামাকে চিঠি লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ। পড়াতে গেছেন হার্ভার্ডে। আইওয়া-শিকাগোতে গেছেন ওই বাড়ি থেকেই। রবীন্দ্র-স্মৃতিমাখা সেই বাড়ি এখন দুই বাঙালির। কাজল মুখোপাধ্যায় ও মৌসুমী দত্ত রায় স¤প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আর্বানা-শ্যাম্পেনে ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ওই বাড়িটি কিনেছেন। খবর আনন্দবাজার অনলাইনের।
তিন তলা সাদা রঙের বাড়ি। ইংল্যান্ডের পুরনো বাড়ির ধাঁচে তৈরি। কাজল-মৌসুমী জানালেন, বাড়ির ভিতরটাও খুব সুন্দর। তারা বলেন, ‘একটা পুরনো পুরনো ব্যাপার লেপ্টে আছে বাড়িটার সঙ্গে। নীচে তিনটে আর উপরে তিনটে করে ঘর। রবীন্দ্র-সময়কার অনেক জিনিসপত্রও আছে। বাথটবও।’ মৌসুমীর কথায়, ‘আফগানিস্তানের ঘটনার পর সে দিন জার্মান চ্যান্সেলরকে দেখলাম, চিত্ত যেথা ভয়শূন্য- আবৃত্তি করছেন। মনে হল, দার্শনিক রবীন্দ্রনাথ এখনও কত প্রাসঙ্গিক এই পশ্চিমে! গোটা বিশ্বে। অথচ বাঙালি তার মূল্যায়ন করতে পারেনি এখনও।’ তিনি বলেন, ‘এমনকি, পুর্ব-পশ্চিমের সেই যোগসূত্রও এখন ছিন্ন। রবীন্দ্রনাথের হাত ধরে পুরনো সেই যোগসূত্র ফের জুড়তে চাই আমরা। তাই বাড়িটা নিয়েছি।’
এই বাড়ি শুধু রবীন্দ্রনাথেরই স্মৃতিবিজড়িত নয়, এখানে থেকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরও। থেকেছেন রথীন্দ্র-পতœী প্রতিমাদেবীও। কাজল-মৌসুমীর ইচ্ছা, প্রাচ্যের সঙ্গে পাশ্চাত্যের যে মেলবন্ধন রবীন্দ্রনাথ ঘটিয়েছিলেন, তা পুনরুজ্জীবিত করা। কবির দর্শনকে এই সময়ে এসে প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের কাছে ফের তুলে ধরা। আর সে কারণেই নিউ ইয়র্কের প্রবাসী দুই বাঙালি কাজল-মৌসুমী আর্বানার এই বাড়িতে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কিত মিউজিয়াম এবং আর্কাইভ গড়ে তুলতে চান।
১৯০৬ সালে আর্বানায় ‘এগ্রিলাকালচার ইকনমিক্স’ নিয়ে পড়তে এসেছিলেন রথীন্দ্রনাথ। সঙ্গে সন্তোষচন্দ্র মজুমদার। তখন রবীন্দ্রনাথ কয়েক দিনের জন্য এসেছিলেন আর্বানায়। পরে তিনি ফের আসেন ১৯১২ সালে। ছিলেন টানা ছ’মাস। ১৯১৩-র এপ্রিল পর্যন্ত। তার বছর দুয়েক আগেই রথীন্দ্রনাথের বিয়ে হয়েছে প্রতিমাদেবীর সঙ্গে। তাকে সঙ্গে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ আসেন আর্বানা।
২৭ অক্টোবর, ১৯১২ নামেন নিউ ইয়র্কে। সেখান থেকে ট্রেনে শিকাগো। তারপর ঘোড়ার গাড়িতে আর্বানা। ৭ নভেম্বর, ১৯১২। রবীন্দ্রনাথ তার দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথকে একটি চিঠিতে লিখছেন, ‘ভাই জ্যোতিদাদা, আমরা আমেরিকায় এসে পৌঁছেছি। সে কারণে তোমার চিঠি আসতে দেরি হয়েছে। আমরা একটা বাড়ি ভাড়া নিয়েছি। বৌমা সেই বাড়ির কর্ত্রী। তাকেই নিজেই রান্না করতে হচ্ছে।’ চিঠির উপরে ঠিকানা লেখা – ‘৫০৮ হাই স্ট্রিট, আর্বানা, ইলিনয়, ইউএসএ’। এই বাড়িতেই টানা ছ’মাস ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এখন বাড়িটি দুই বাঙালির। ১৯০৩ সালে তৈরি আর্বানার বাড়িটি কিছু দিন আগে পর্যন্ত ছিল এক মার্কিন ভদ্রলোকের। নাম স্ট্যান শার্লো। বয়স সত্তরের উপরে। বহু চেষ্টার পর কাজল-মৌসুমী তাকে রাজি করাতে পেরেছেন ওই বাড়ি বিক্রি করতে।
নিউ ইয়র্ক থেকে আনন্দবাজার অনলাইনকে কাজল বলছিলেন, ‘বৃদ্ধ প্রথমে রাজি ছিলেন না। তিনি রবীন্দ্রনাথের গুণমুগ্ধ হলেও বাড়িটির ঐতিহ্যের ব্যাপারে খুব যে যতœশীল ছিলেন, তেমন নয়। আমরা অনেক দিন ধরেই অনুরোধ করছিলাম। শেষে শার্লোর ছেলে তার বাবাকে রাজি করান। বোঝান, বাঙালিদের কাছে এ বাড়ি থাকলে ইতিহাসে তিনিও থেকে যাবেন। অবশেষে আমরা বাড়িটা হাতে পাই।’ কত দামে কিনলেন কবিগুরুর বাড়ি? কাজলের জবাব, ‘দামটা বিষয় নয়। এই বাড়ি দুর্মূল্য।’ আর্বানার এই বাড়িতে রবীন্দ্রনাথের বসবাসের নানা স্মৃতির উল্লেখ পাওয়া যায় তার চিঠিপত্র থেকে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত ‘সিলেক্টেড লের্টাস অব রবীন্দ্রনাথ টেগোর’-এ এই বাড়ি এবং আর্বানার একাধিক বার উল্লেখ রয়েছে। যদিও কৃষ্ণা দত্ত এবং অ্যান্ড্রু রবিনসন সম্পাদিত সে বইয়ের মুদ্রিত সংস্করণ এখন আর পাওয়া যায় না। কাজল-মৌসুমীর কাছে একটা সংস্করণ রয়েছে।
মৌসুমী বললেন, ‘আর্বানাতে একটা টেগোর ফেস্টিভ্যাল হয় প্রতি বছর। চ্যানিংমারে ফাউন্ডেশন আর ইউনিটারিয়ান ইউনিভার্সাল চার্চ তার উদ্যোক্তা। আমরা প্রতি বছর যেতাম। তার আগেই ওই বই থেকে বাড়িটা সম্পর্কে জেনেছিলাম। গেলেই বাড়িটা দেখতাম হাঁ করে। এই বাড়ির সঙ্গে এত ইতিহাস জড়িয়ে! নোবেলজয়ী গীতাঞ্জলি এখানে বসে অনূদিত হয়েছে। একটা শিহরণ জাগত। ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা পরিসংখ্যানবিদ অনিল বেরা আমাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। ওঁকে বলি বাড়িটা কিনে নিতে। তবে শেষমেশ ওঁর উদ্যোগেই বাড়িটা আমরা পেয়েছি।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com