কক্সবাজার শহর থেকে প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের দূরত্ব প্রায় ১২০ কিলোমিটার। বঙ্গোপসাগরের বুকে অবস্থিত ছোট্ট এ দ্বীপের সঙ্গে মূল ভূখ-ের যোগাযোগের প্রবেশদ্বার হিসেবে রয়েছে একটি জেটি। কেবল পর্যটকবাহী নৌযানগুলোর জন্যই নয়, দ্বীপের মানুষের রোজকার প্রয়োজনীয় যোগাযোগেরও একমাত্র মাধ্যম এটি। কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাব ও কয়েক দফা ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে জেটিটির অবস্থা সঙ্গিন হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, এটি দ্রুত সংস্কার করা না হলে পর্যটননির্ভর এ দ্বীপের মানুষের জীবন-জীবিকা ঝুঁকিতে পড়বে।
স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক বছরের ঘূর্ণিঝড়ে জেটির অবস্থা এমনিতেই খারাপ ছিল। গত ২৭ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জেটিটি আরেক দফা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জেটির যে পাশে ট্রলার ভেড়ানোর ব্যবস্থা ছিল, সে অংশটিও ভেঙে গেছে। সম্প্রতি ভারি বৃষ্টির পর প্রতিনিয়ত জোয়ারের পানির উত্তাল ঢেউয়ের আঘাতে সেটি আরো ভয়াবহ হয়ে যায়। পন্টুনে দেখা দেয় বড় বড় ফাটল। ঢেউয়ের আঘাতে জেটির বেশির ভাগ অংশ, রেলিং ও সিঁড়ি নষ্ট হয়ে যায়। ফলে জেটিটি এখন প্রায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে, ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে জেটিতে ওঠানামা।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপটি পর্যটকদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয়। তাদের জন্য দ্বীপে গড়ে উঠেছে দুই শতাধিক হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউজ। রয়েছে শতাধিক রেস্তোরাঁ। দ্বীপবাসীর একমাত্র আয়ের উৎস পর্যটন। তাই পর্যটনকে ঘিরে স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও প্রচুর বিনিয়োগ করেছেন। এছাড়া পর্যটন মৌসুমে মাত্র পাঁচ মাসের ব্যবসার আয়ের টাকায় গোটা বছর চলেন দ্বীপের বাসিন্দারা। স্থানীয় কোনো মানুষ অসুস্থ হলে জেটি ব্যবহার করেই উন্নত চিকিৎসার জন্য টেকনাফে নিয়ে যাওয়া হয়। দ্বীপবাসীর নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী আনা-নেয়া বা খাদ্য পরিবহনের জন্যও এ জেটি ব্যবহূত হয়। সব মিলিয়ে দ্বীপসংশ্লিষ্ট মানুষের জন্য জেটির গুরুত্ব অপরিসীম।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান হাবিবুব রহমান বলেন, ২০০২-০৩ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে প্রায় ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্যের এ জেটি নির্মিত হয়। প্রতি বছর জেলা পরিষদ এ জেটি ইজারা দিয়ে লাখ লাখ টাকা আয় করে। কিন্তু এটির কোনো সংস্কার করে না। সংস্কারের অভাবে ও ক্রমাগত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে জেটিটি এখন নাজুক হয়ে পড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণত পর্যটন মৌসুমে প্রতিদিন পাঁচ থেকে ১৫ হাজার মানুষ এ জেটি ব্যবহার করে যাওয়া-আসা করে। কিন্তু এখন জেটির যে অবস্থা তাতে সেটি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আগামী অক্টোবরে শুরু হওয়া পর্যটন মৌসুমের আগে এটি সংস্কার না হলে বন্ধ হয়ে যাবে স্থানীয়দের একমাত্র আয়ের উৎস, সরকারও বঞ্চিত হবে রাজস্ব থেকে।
জেটির দুরবস্থার কথা জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভেজ চৌধুরী জানান, সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় ও পূর্ণিমার অস্বাভাবিক জোয়ারের ঢেউয়ের আঘাতে জেটিটি ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। আশা করছেন দ্রুত বাজেট পাস হবে এবং জেটি সংস্কারের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।
সেন্ট মার্টিনের এ জেটি দ্রুত মেরামতের দাবিতে গতকাল সংবাদ সম্মেলন করেছে পর্যটন ব্যবসায়ীদের সংগঠন পদক্ষেপ বাংলাদেশ। কক্সবাজারের একটি হোটেলের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির জেলা সভাপতি তোফায়েল আহম্মেদ। তিনি বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পর্যটক পারাপারে সাত-আটটি জাহাজ, ২০০-৩০০ বাস-মিনিবাস, ১০০ মাইক্রোবাস, ২০০ ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান, ৪০০ ট্যুরিস্ট গাইড ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ ৫০ হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা পর্যটন ব্যবসাকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হয়। আর এসব কর্মকা-ের একমাত্র মাধ্যম দ্বীপের প্রবেশদ্বার এ জেটি, যা ছাড়া দ্বীপটি কার্যত অচল।
তোফায়েল আহম্মেদ আরো বলেন, বিধ্বস্ত জেটিটি অবিলম্বে সংস্কার করা না হলে পর্যটন খাতে জড়িত অন্তত ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান ঝুঁকিতে পড়বে। পর্যটন শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সরকার বিপুল রাজস্ব হারাবে।