দেশের পর্যটন খাত নিয়ে নেই সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান বা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। যে কারণে এ খাতে গুণগত পরিবর্তন আসছে না। আর তাই পর্যটন মাস্টারপ্ল্যান তথা মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আইপিই গ্লোবাল লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল এ বছর জুনে। তবে মহামারির কারণে বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা বাংলাদেশ ত্যাগ করায় কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ২০২২ সালের আগে তাই শেষ হচ্ছে না মাস্টারপ্ল্যানের কাজ। জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২০ নভেম্বর বাংলাদেশের পর্যটন মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের ক্রয়সংক্রান্ত প্রস্তাব মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদন হয়। একই বছর ২৮ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীও অনুমোদন দেন। ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আইপিই গ্লোবাল লিমিটেডের সঙ্গে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের চুক্তি হয়। ভ্যাট ও এআইটিসহ চুক্তিমূল্য দাঁড়ায় প্রায় ২৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকায়। লক্ষ্য ছিল মাস্টারপ্ল্যানটি তিনটি পর্যায়ে ১৮ মাসে শেষ হবে। ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হয়। তবে শুরুতেই থমকে যায় করোনার দাপটে। ২০২০ সালের মার্চ হতেই এতে যুক্ত বিদেশি বিশেষজ্ঞ এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা ঢাকা ছেড়ে নিজ নিজ দেশে চলে যান। একপর্যায়ে কাজ একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। পরে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নতুন কর্মপরিকল্পনা দেয়। যা কিছু সংশোধনীসহ ২০২০ সালের ১১ নভেম্বরে অনুমোদন পায়। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড আশা করছে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হবে।
পর্যটন মন্ত্রণালয় বলছে, মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে দেশের পর্যটন শিল্পের চিত্র বদলে যাবে। বাড়বে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান। এশিয়ায় বাংলাদেশ হবে অন্যতম পর্যটন গন্তব্য। জিডিপিতেও অবদানও বাড়বে। এখন দেশের জিডিপিতে পর্যটনের অবদান ২ শতাংশ; যা ১০ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাবেদ আহমেদ বলেন, ‘এটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। পুরো দেশের পর্যটন চিত্র বদলাতে হলে পরিকল্পনার প্রয়োজন আছে, যা এই মহাপরিকল্পনা প্রণয়ণের মাধ্যমে সম্ভব।’ জাবেদ আহমেদ আরও বলেন, ‘মহামারির কারণে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছি। তবে পুরোদমে কাজ চলছে। সকলের অংশগ্রহণে কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে যাবে।’ বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড জানিয়েছে, তিনটি পর্যায়ে পর্যটন মহাপরিকল্পনার কাজ হবে। ১ম পর্যায়ে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেশের পর্যটন শিল্পের বর্তমান অবস্থা, সম্ভাবনা, সংকট, দুর্বলতাসহ বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করা হবে। এ ছাড়া, বেসরকারি স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করে মতামত নেওয়া হবে প্রথম ধাপেই।
২য় পর্যায়ে দেশের পর্যটনের লক্ষ্য, পদক্ষেপ, কৌশলগত লক্ষ্য, অগ্রাধিকার ও যোগাযোগের ক্ষেত্র নির্ধারণ করা হবে। পর্যটন উন্নয়ন, প্রমোশন এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৩, ৫ এবং ১৫ বছর মেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনাও থাকবে ২য় পর্যায়ে। ৩য় পর্যায়ে দেশের নির্দিষ্ট অঞ্চলভিত্তিক পরিকল্পনা করা হবে। পর্যটন পণ্যের উন্নয়ন, অর্থায়ন ও বিনিয়োগের কৌশল নিয়ে কর্মপরিকল্পনা থাকবে এ পর্যায়ে। বিপণন ও প্রচারের কৌশলও উঠে আসবে এ ধাপে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশের পর্যটন শিল্পকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় কাজ করছে। মহাপরিকল্পনা না ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। এ জন্য বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড একটি আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে।’