দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। কয়েক দিন ধরে পেঁয়াজ বিক্রি না হওয়ায় গুদামে পচে নষ্ট হচ্ছে। বাধ্য হয়ে সেগুলো ১০ থেকে ১২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন তারা। তবে ভালো মানের পেঁয়াজ এখনও ৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত ছয় দিন পণ্য আমদানি-রফতানি বন্ধ ঘোষণা করেছে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। দেশের বাজারে পেঁয়াজের বাড়তি চাহিদাকে ঘিরে বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বন্ধের শেষ দিনে ৪২টি ট্রাকে এক হাজার ১৪৪ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়। কিন্তু বিক্রি না হওয়ায় বন্দরের অনেক আড়তে পেঁয়াজ পড়ে আছে।
ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান বলেন, বর্তমানে খারাপ পেঁয়াজের কেজি ১০ থেকে ১২ টাকা। আর ভালো মানের পেঁয়াজ হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকা দরে। কেউ কেউ ৪৮ টাকাও চাচ্ছে। সব গুদামেই প্রচুর পেঁয়াজ আছে। এগুলো পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তারপরও কম দামে পেঁয়াজ ছাড়ছে না আমদানিকারকরা। এত দামে ভালো মানের পেঁয়াজ কিনে গ্রামের হাটে বিক্রি করা যাচ্ছে না। তাই কম দামে কিছুটা খারাপ মানের পেঁয়াজ কিনে নিয়ে যাচ্ছি। এগুলো বাছাই করে বিক্রি করবো।
হিলি বন্দরে পেঁয়াজ কিনতে আসা আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ভালো মানের পেঁয়াজ কেনা সম্ভব নয়। তাই খারাপ পেঁয়াজ দাম কম কিনে নিয়ে যাচ্ছি। এক কেজি পেঁয়াজ কিনে তা বাছাই করে ২৫০ গ্রাম বা তার চেয়ে একটু বেশি টিকতে পারে। আমদানিকারক এমআর ট্রেডার্সের ম্যানেজার আব্দুল কুদ্দুস বলেন, দেশের বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে বাড়তি দামে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। সেই পেঁয়াজ গুদামে পড়ে আছে। কয়েক দিন ধরে কোনও বেচাকেনা নেই। পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পূজার বন্ধের কারণে শেষ দিনে ভারত থেকে খারাপ পেঁয়াজ পাঠিয়েছে। কোনও পার্টি নেই। তীব্র গরমে পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বন্দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ৪২ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে। সেই পেঁয়াজ এখন ১০ থেকে ১২ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। তারপরও পেঁয়াজ কেনার লোক নেই। সকাল থেকে গুদাম খুলে বসে আছি, কিন্তু কোনও বেচাকেনা হচ্ছে না।
যে কারণে কমছে পেঁয়াজের দাম: দেশে পেঁয়াজের বাজার যেনো বছর জুড়েই অস্থির থাকে। কখনও কখনও কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও হঠাৎ করেই বেড়ে যায় পেঁয়াজের দাম। পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে অনেকটাই হিমশিম খেতে হচ্ছে নিয়ন্ত্রণকারীদের। গত এক সপ্তাহ যাবৎ খুচরা বাজারে ৭৫/৮০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি হয়েছে। এরই মধ্যে কাঁচা বাজারে আসল সুখবর। এক সপ্তাহ ব্যবধানে বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম কমেছে ৮টাকা । বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) রাজধানীর বাড্ডা কাঁচা বাজার, কারওয়ান বাজার, মহাখালী কাঁচা বাজার সরেজমিন ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে রাজধানীর কাঁচা বাজারের এমন চিত্র জানা গেছে। রাজধানীর পাইকারী কাওরান বাজারে দেখা যায়, এখানে ৫০-৫৫ টাকা কেজিতে পাইকারী দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। এরমধ্যে দেশি ভালো মানের পাবনার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা কেজিতে। আর ফরিদপুরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৩-৫৪ টাকা কেজিতে। আর ভারতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজিতে। তবে খুচরা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৩ থেকে ৬৫ টাকা কেজিতে। আর ভারতের পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে ৫৭ থেকে ৫৮ টাকা কেজিতে। পেঁয়াজ নিয়ে একই প্রভাব পড়েছে রাজধানীর অন্যান্য বাজারগুলোতেও। মহাখালী কাঁচা বাজার করতে আসা মহিবুল হাসান বলেন, এক সপ্তাহে আগে যে পেঁয়াজ কেজি ৭৫ থেকে ৭০ টাকা দিতে হয়েছে আজ নিলাম ৬৫ টাকা করে। আমরা চাই দাম আরও নিচে নেমে আসুক তাহলে আমাদের মত সাধারণ মানুষদের জন্য একটু ভালো হয়।
রাজধানীর কাওরানবাজারের পেঁয়াজের আড়ৎ খালেক এন্ড সন্স এর মালিক মো. হৃদয় ই বলেন, বাজারে ক্রেতা কম থাকায় বিক্রি কম হওয়ায় হঠাৎ দাম কমেছে। এছাড়া আমদানী যেমন বাড়ছে চাহিদাও তেমন নেই। কুতুবপুর বানিজ্যলয়ের ব্যবসায়ী মো. নরুল হক ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন কাল যেটা ৬০টাকা বিক্রি করেছি আজ সেটা সর্বোচ্চ পাইকারী ৫৬ থেকে ৫৭ টাকা বিক্রি করছি। কেজিতে ৭ থেকে ৮টাকা কমেছে। আমদানী বেশী হওয়ায়, বাজারে ক্রেতা কমে যাওয়ায় দাম নিচে নেমে গেছে। একই সুরে কথা বললেন বাজারের আরেক পেঁয়াজের আড়ৎদার মেসার্স মাতৃ ভা-ার মালিক মো. কালাম শেখ। তিনি বলেন, ৬৫ টাকার পেঁয়াজ আজ কেজিতে ৫৬ – ৫৭ টাকা পাইকারি বিক্রি করছি।
খুচরা ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, যে পেঁয়াজ ৭৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি এখন একই পেঁয়াজ ৬৩ থেকে ৬৫ বিক্রি করতে পারছি। দাম নিয়ে তো আমাদের কোনো হাত নেই। আমরা আড়ৎদারদের কাছে যে দামে কিনি সেই বাজার ধরেই খুচরা বিক্রি করতে হয়। আসলে দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতা কমে গেছে বাজারে। তাই দাম কিছুটা কমেছে। গত ২০ দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছিল। ২০ দিন আগে প্রতি কেজি পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। যদিও দেশে প্রায় পাঁচ লাখ টন পেঁয়াজ মজুত থাকার কথা জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তার ভাষ্য মতে, মজুত থাকা পেঁয়াজ দিয়ে আরও অন্তত দুই-তিন মাসের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।
ভোক্তাদের অভিযোগ, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণেই পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। ভারতে বন্যার অজুহাতে পেঁয়াজ আমদানি করেও বাজারে বিক্রি কমিয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ কারণে অব্যাহতভাবে বাড়ছে পণ্যটির দাম। যদিও ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতে অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে পেঁয়াজের ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। এছাড়া পূজার কারণে বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি প্রায় বন্ধ। এর প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারে। ফলে বুধবার পর্যন্ত প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৮০-৮৫ টাকায়। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭৫-৮০ টাকায়। অথচ ১৫ থেকে ২০ দিন আগেও দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০-৪৫ টাকা কেজিতে আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৩৫-৪০ টাকায়।