বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নিরপেক্ষ কমিশন গঠন জরুরি। গত নির্বাচনের মতো এবারও বিএনপির পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়ার আলোচনা থাকলেও এ বিষয়ে এখানো দলীয় সিদ্ধান্ত হয়নি। গতকাল বুধবার একটি বাংলা অনলাইন নিউজ পোর্টালকে তিনি এ কথা বলেছেন।
তবে দলীয় একাধিক সূত্রে সূত্রে জানা যায়, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এজন্য নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি। নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করার জন্য আগের মতামতের সঙ্গে আরও কিছু যোগ করে ১৩ দফার প্রস্তাবনাও প্রস্তুত করছেন তারা। যথাসময়ে এটি পেশ করা হবে। এক্ষেত্রে একটি পদের বিপরীতে সার্চ কমিটি কর্তৃক দুজনকে বাছাই এবং চার নির্বাচন কমিশনার পদে আটজনের নাম প্রস্তাব করার পরামর্শ দিতে চায় বিএনপি। এদের মধ্যে সাবেক প্রধান বিচারপতি, বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং একজন নারী ব্যক্তিত্ব থাকতে পারেন। সূত্র মতে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে চলমান সংসদ ভেঙে দেওয়া, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা, নির্বাচনে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন ও দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার। এ বিষয়গুলোর ওপর নির্বাচন কমিশনকে ডজন খানেকের বেশি প্রস্তাব দেওয়া হবে। সূত্র জানায়, স¤প্রতি দলটির নির্বাহী কমিটির বৈঠক শেষে গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে ইসিকে প্রস্তাব দেওয়ার বিষয়ে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং সরাসরি বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত নন এমন তিনজন ব্যক্তি এ প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছেন।
আরও জানা যায়, ‘নির্বাচন কমিশনকে অধিকতর শক্তিশালী করার লক্ষ্যে করণীয়’ শিরোনামে প্রস্তাবনার খসড়া তৈরি হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ৬৪ জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে ভোটার তালিকা সংশোধন, সীমান্ত পুনর্র্নিধারণ, ভুয়া ভোটার চিহ্নিতকরণসহ বেশকিছু বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়েছে।
সূত্র মতে, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনে পাঁচ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ার ব্যাপারে বিএনপি কিছু পরামর্শ দেবে। এছাড়া নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসনের করণীয়, নির্বাচনী আইন সংস্কার, ভোট দেওয়ার কিছু নিয়ম পরিবর্তন, ইভিএম বাতিল, পর্যবেক্ষকদের জন্য নীতিমালা সংশোধনসহ ভোটগ্রহণ থেকে গণনা পর্যন্ত কীভাবে নির্বিঘেœ করা যায় তার একটি রূপরেখা থাকবে ওই প্রস্তাবে। নির্বাচনের সময় স্বরাষ্ট্র, অর্থ, তথ্য, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার, শিক্ষা, পররাষ্ট্র এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় যাতে ইসির চাহিদা অনুযায়ী কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়- তা নিশ্চিত করার দাবি থাকবে প্রস্তাবে। রাজনৈতিক দলের নেতা কিংবা দলের প্রতি আনুগত্য আছে, এমন কোনো সংস্থার প্রতিনিধিকে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ না দেওয়া, তফসিল ঘোষণার ৩০ দিন আগে পর্যবেক্ষকের তালিকা প্রণয়ন এবং সাতদিন আগে তাদের নাম-পরিচয় তুলে ধরার প্রস্তাব দেওয়া হবে। প্রস্তাবটি রেখে দেওয়া হবে ঘষাঁমাজা করে। ইসি সংলাপে আমন্ত্রণ পেলে সেখানে তুলে ধরা হবে। তা না হলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তা তুলে ধরা হবে। এবং এর একটি কপি রাষ্ট্রপতির কাছে দেওয়া হতে পারে।
জানা যায়, শুধু প্রস্তাব নয়, পাঁচ সদস্যের সার্চ কমিটিতে অবসর নেওয়ার পর লাভজনক কোনো পদে ছিলেন না আপিল বিভাগের এমন এক বা একাধিক বিচারপতি, অবসর গ্রহণের পর সরকারের লাভজনক কোনো পদে ছিলেন না প্রশাসনের এমন এক বা একাধিক আমলা ও বিতর্কিত নন সুধীসমাজের এমন প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেবে বিএনপি। এক্ষেত্রে একটি পদের বিপরীতে সার্চ কমিটি দুজনকে বাছাই ও চার নির্বাচন কমিশনার পদে আটজনের নাম প্রস্তাব করার পরামর্শ দিতে চায় বিএনপি। এদের মধ্যে সাবেক প্রধান বিচারপতি, বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং একজন নারী ব্যক্তিত্ব থাকতে পারেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন প্রস্তাবনা তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক নেতা জানান, প্রস্তাব দিলেই সরকার তা বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠনে কাজে লাগাবে এমনটি তারা বিশ্বাস করেন না। তবু বিএনপির অবস্থান সবার কাছে পরিষ্কার করা দরকার। পাশাপাশি বিএনপি কেমন নির্বাচন কমিশন প্রত্যাশা করে, সে প্রশ্নও সামনে আসে। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে একটি রূপরেখা দলের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ করার জন্য রাষ্ট্রপতিকে জোরালো সুপারিশ করা ছাড়া উপায় নেই। ‘নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার বিষয়ে আগেও বিএনপি মতামত দিয়েছে। তার সঙ্গে এবার হয়তো আরও কিছু যোগ হবে।’