গাজীপুরের টঙ্গীতে ভাওয়াল বীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টার এমপি’র ৭১ তম জন্মদিন উপলক্ষে টঙ্গী পশ্চিম থানা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্তৃক আয়োজিত আলোচনা, দোয়া, মিলাদ ও গনভোজ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার ৯ই নভেম্বর টঙ্গী ৫৪ নং ওয়ার্ড আউচপাড়া মামদী মোল্লা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য মোঃ মামুনুর রশীদ মামুন মোল্লা সভাপতিত্ত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ৫৪নং কাউন্সিলর নাসির উদ্দিন মোল্লা। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, টঙ্গী আঞ্চলিক শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি মোঃ হিরন মিয়া, আওয়ামীলীগ নেতা সারোয়ার আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা সরদার আনোয়ারুল হক, জাকির হোসেন পারভেজ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান, আকাশ মোহাম্মদ আক্কাস, জাহিদুল কবির আনোয়ার, মঞ্জুরুল আলম মিল্টন, টঙ্গী পশ্চিম থানা যুবলীগ নেতা আক্তার হোসেন সরকার, শফিকুল ইসলাম শিমুল, নজরুল ইসলাম মাষ্টার, সেচ্ছাসেবকলীগ নেতা জাকির হোসেন, কাওসার আহমেদ, প্রমুখ। এসময় বক্তারা শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টারের বর্নাট্য জীবন ইতিহাস তুলে ধরেন। এক নজরে শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টারের সংক্ষিপ্ত জীবনী, আহসানউল্লাহ মাস্টার জন্ম ১৯৫০ সালের ৯ নভেম্বর, তৎকালীন ঢাকা জেলার (বর্তমান গাজীপুর) পুবাইল ইউনিয়আহসানউল্লাহ মাস্টার জন্ম ১৯৫০ সালের ৯ নভেম্বর, তৎকালীন ঢাকা জেলার (বর্তমান গাজীপুর) পুবাইল ইউনিয়নের হায়দরাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।শিক্ষাজীবন শুরু হয় নিজ গ্রামের হায়দরাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবন শেষ করে টঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। আহসানউল্লাহ ১৯৬৫ সালে এসএসসি পাস করে তৎকালীন কায়েদে আযম কলেজে (বর্তমান শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারি কলেজ) একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৭০ সালে ডিগ্রি পাস করার পর টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া হাইস্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীকালে তিনি ওই বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক (১৯৭৭-১৯৮৪) ও প্রধান শিক্ষকের (১৯৮৪-২০০৪) দায়িত্ব আমৃত্যু পর্যন্ত পালন করেন। আহসানউল্লাহ মাস্টার টঙ্গী শিক্ষক সমিতির সভাপতি হিসেবে সক্রিয় ছিলেন। আহসানউল্লাহ মাস্টার ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার আগে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে আটক ও নির্যাতিত হয়ে ছিলেন। ভারতের দেরাদুনের তান্দুয়া থেকে গেরিলা ট্রেনিং নিয়ে পুবাইল, টঙ্গী, ছয়দানাসহ বিভিন্ন জায়গায় গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ জয়দেবপুরের ক্যান্টনমেন্টের বাঙালী সৈন্যদের নীরস্ত্র করতে ঢাকা থেকে আসা পাকিস্তানি বাহিনীকে ব্যারিকেড দিয়ে বাধা দেয়ার জন্য জনতাকে উদ্বুদ্ধ করার কাজে তার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। ১৯৬২ সালে হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন-এর বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে রাজনীতিতে তার হাতেখড়ি। তখন তিনি ছাত্রলীগ করতেন। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুঘোষিত বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা দাবি নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা যখন রাজপথে, তখনো আহসানউল্লাহ সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে অংশ নেন। ১৯৬৯ সালে ১১ দফার আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন তিনি। ১৯৮৩ সালের পুবাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকে শুরু করে জাতীয? সংসদÍপ্রতিটি নির্বাচনে তিনি জয়ী হয়েছেন বিপুল ভোটে। ১৯৮৮ সালে পুবাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এর আগে তিনি ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়া আহসানউল্লাহ মাস্টার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) চেয়ারম্যান ছিলেন। তার জ্যেষ্ঠ ছেলে মো. জাহিদ আহসান রাসেল বর্তমানে জাতীয় সংসদের যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী, ছোট ছেলে জাবিদ আহসান সোহেল বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকা অবস্থায় অকালে মৃত্যুবরণ করেন। ২০০৪ সালের ৭ মে গাজীপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ ও জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি পদে আসীন থাকাকালীন সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে নিহত হয়ে ছিলেন আহসানউল্লাহ মাস্টার। এ ঘটনার পরদিন তার ভাই মতিউর রহমান টঙ্গী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় ২০০৪ সালের ১০ জুলাই পুলিশ অভিযোগপত্র দায়ের করে। ঢাকার একটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল ২২ আসামিকে মৃত্যুদন্ড ও ছয় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন। খালাস দেওয়া হয় দুই আসামিকে। অনুষ্ঠান শেষে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।