মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:২৮ পূর্বাহ্ন

৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেটে হচ্ছে ৫ এক্সেল রোড কন্ট্রোলার

এম এ মতিন সিলেট :
  • আপডেট সময় রবিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২১

নির্মাণ কাজ শেষে উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে সিলেটের প্রথম এক্সেল লোড কন্ট্রোলার স্টেশন। সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের লামাকাজীতে অবস্থিত এই কন্ট্রোলার স্টেশনে নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৫ কোটি ১২ লাখ টাকা। সড়ক মন্ত্রণালয়ে ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করেছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ সিলেট কর্তৃপক্ষ। যে কোন সময় আসতে পারে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের ঘোষণা। যানবাহনে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশী পণ্য পরিবহন নিয়ন্ত্রণে কাজে ব্যবহৃত হবে এই এক্সেল লোড কন্ট্রোলার। এদিকে লামাকাজী এক্সেল লোড কন্ট্রোলার নির্মাণ কাজ শেষ হতে না হতেই সিলেটের ব্যস্ততম ৪ টি সড়ক-মহাসড়কে অতিরিক্ত ধারণক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে আরো ৪টি এক্সেল লোড কন্ট্রোলার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের লামাকাজীতে নির্মিত এক্সেল লোড কন্ট্রোলার সহ ৫টি এক্সেল লোড কন্ট্রোলার নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮০ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের কোথাও নেই ‘এক্সেল লোড কন্ট্রোলার সেন্টার’। ফলে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি পণ্য বহন করছে অনেক যানবাহন। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সড়ক-মহাসড়ক। এসব রাস্তা সংস্কারে ব্যয় করতে হয় বিপুল অঙ্কের টাকা। এমন পরিস্থিতিতে সিলেটের ৫ টি সড়ক-মহাসড়কে এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র বসানোর উদ্যোগ নেয় সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ)। একটির কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। বাকী নিয়ন্ত্রণকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শেষ হলে সড়ক-মহাসড়কে ট্রাক কিংবা অন্য কোনো যানবাহন ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন করা থেকে বিরত থাকবে। কেউ অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন করলে গুনতে হবে জরিমানা। জানা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-মহাসড়কে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে ২০১৯ সালে সারাদেশে ২৮টি এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ)। সেই বছরের সেপ্টেম্বরে জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়। এর মেয়াদকাল ধরা হয় আগামী বছরের জুন পর্যন্ত। এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৬৩০ কোটি ২৮ লাখ টাকা। প্রকল্প গ্রহণ হলেও জমি অধিগ্রহণে জটিলতা ও করোনার ধাক্কায় পিছিয়ে যায় প্রকল্প শুরুর বিষয়টি। গত জুন মাসে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এই প্রকল্পের জন্য ঠিকাদার ও পরামর্শদাতা নিয়োগের বিষয়টি অনুমোদন দেয়। এরপরই মূলত কাজে কিছুটা গতি আসে। সওজ সিলেট সূত্রে জানা গেছে, সিলেট-ভোলাগঞ্জ সড়ক, বিমানবন্দর-বাদাঘাট সড়ক, সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক, সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক এবং শেওলা-সুতারকান্দি সড়কে ৫ টি এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক বাদে অন্য ৪ টি সড়ক-মহাসড়কে এই নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র বসাতে ব্যয় হবে ৬৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এদিকে সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে যে নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র বসানো হবে, সেটি মূলত ঢাকা-সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক ৪ লেনে (দুটি সার্ভিস লেনসহ ছয় লেন) উন্নীতকরণ প্রকল্পে অন্তভূর্ক্ত করা হয়েছে। তবে এই নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র স্থাপনেও ১৫ কোটি টাকার কম ব্যয় হবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ হিসেবে ৫ টি এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র স্থাপনে ৮০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের লামাকাজিতে সিলেটের প্রথম এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র স্থাপনের কাজ শেষ হয়ে উদ্বোধনের অপেক্ষায়। এটিতে ব্যয় হয়েছে ১৫ কোটি ১২ লাখ টাকা। সিলেট-ভোলাগঞ্জ সড়কে ১৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র বসানোর কাজও শুরু হয়েছে। শেওলা-সুতারকান্দি সড়কে ১৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র বসানোর কাজ শুরুর অপেক্ষায়। এছাড়া বিমানবন্দর-বাদাঘাট সড়কে এই নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র বসাতে ১৮ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এর পরিকল্পনাও দ্রুত এগিয়ে চলছে। সড়ক ও জনপথ অধিদফতর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সিলেটের সড়ক-মহাসড়কের কোথাও কোনো এক্সেল লোড তথা অতিরিক্ত ধারণক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করার কেন্দ্র ছিলনা। প্রথম কেন্দ্র হিসেবে লামাকাজী স্টেশন চালুর অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া ভোলাগঞ্জ সড়কে নির্মিতব্য এক্সেল লোড কন্ট্রোলারের নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে ২৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। সুতারকান্দি এক্সেল লোড কন্ট্রোলারের জমি অধিগ্রহণ ও ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। বাদাঘাট এক্সেল লোড কন্ট্রোলার স্টেশনের পরিকল্পনা প্রণয়ন হয়েছে। নির্মাণ কাজ শুরু হতে আরো কিছু সময় লাগবে। তামাবিল এক্সেল লোড কন্ট্রোলার নির্মাণের কাজ ঢাকা-সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক ৪ লেনে (দুটি সার্ভিস লেনসহ ছয় লেন) উন্নীতকরণ প্রকল্পে অন্তভূর্ক্ত করা হয়েছে। সিলেটের ৫ টি এক্সেল লোড কন্ট্রোলার নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সড়ক-মহাসড়কে অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন বন্ধ হবে। কেউ ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন করলে সেটা নিয়ন্ত্রণকেন্দ্রে ধরা পড়বে।
তখন তাকে নির্দিষ্ট জরিমানার মুখে পড়তে হবে। ফলে ক্ষতির সম্মূখিন থেকে সড়ক-মহাসড়ক কিছুটা হলেও রক্ষা পাবে। এ ব্যাপারে লামাকাজী এক্সেল লোড কন্ট্রোলার স্টেশনের দায়িত্বে থাকা সিলেট সড়ক বিভাগের উপ সহকারী প্রকৌশলী সুমন দাস বলেন, ১৫ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত লামাকাজী এক্সেল লোড কন্ট্রোলার স্টেশনটি চালুর অপেক্ষায় আছে। ২০১৯ সালে কাজ শুরু হলেও করোনার কারণে কাজ শেষ হতে একটু বেশী সময় লেগেছে। স্টেশনের সকল তথ্য সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেলে স্টেশনটি চালু হবে। আর এটি চালু হলে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে ধারণক্ষমতার বেশী পণ্যবহন করার সুযোগ থাকবেনা। অতিরিক্ত বোঝাই হলে জরিমানা গুনতে হবে। স্টেশনে কারো ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সুযোগ নেই। কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে এটি পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হওয়ার কারণে এর কার্যকারিতা নিয়ে কোন প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com