গত ৮ ডিসেম্বর মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদপত্রমালিকদের সংগঠন নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) সঙ্গে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। এই সভাতেই বক্তারা এসব কথা বলেন। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় গণমাধ্যমের ভূমিকা, সমস্যা ও সম্ভাবনা বিষয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় দেওয়া বক্তব্যে নোয়াবের সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, ‘একটি পত্রিকা ছাপতে ১৮ থেকে ২০ টাকা খরচ হয়। আর পাঠকেরা তা ১০ টাকায় কেনেন। কিন্তু কমিশন দিয়ে আমরা হকারদের কাছ থেকে পাই ৬ টাকা ৫০ পয়সা। তবু প্রচুর টাকা অনাদায়ি পড়ে থাকে। করোনাকালে দেশের বেশির ভাগ ছাপা সংবাদপত্রের বিক্রি কিছুটা কমেছে। উপরন্তু নিউজপ্রিন্টের দাম বাড়ছে। ইতিমধ্যে দাম রেকর্ড ছাড়িয়েছে। সংবাদপত্রশিল্পের অন্যান্য উপকরণের দামও বেড়েছে। এর ফলে আগামী বছরগুলোতে সংবাদপত্রের সংকট আরও গভীর হবে।’ এ কে আজাদ বলেন, কাগজের দাম বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি আমদানি করতে ভ্যাট-ট্যাক্সসহ মোট ২৩ শতাংশ অর্থ রাজস্ব হিসেবে দিতে হয়। অথচ দেশের অনেক খাত এখনো শূন্য শুল্কের সুবিধা পায়।
এ কে আজাদ বলেন, যেখানে দেশের তৈরি পোশাক খাত ১২ থেকে ১৫ শতাংশ করপোরেট ট্যাক্স দেয়, সেখানে সংবাদপত্রকে দিতে হয় ৩০ শতাংশ। এত সব চাপে সংবাদপত্র রুগ্ণ শিল্পে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। সংবাদপত্রকে একটি সেবামূলক খাত হিসেবে চিহ্নিত করে এই খাত কেন প্রণোদনা পাবে না, এ প্রশ্ন তোলেন এ কে আজাদ।
মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, সংবাদপত্র একটি সেবামূলক শিল্প খাত। এই খাতের কর্মী-সাংবাদিকেরা করোনাকালে চিকিৎসক ও নার্সদের পরই সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে কাজ করেছেন। কিন্তু এই খাত সরকারের প্রণোদনা সহায়তা পায়নি। তাদের অবশ্যই প্রণোদনা দেওয়া উচিত। মো. জসিম উদ্দিন আরও বলেন, ‘গণমাধ্যম আমাদের ভালো দিক তুলে ধরবে আশা করি। আবার সমালোচনাও করবে, কিন্তু আমাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেবে বলে আমরা আশা করি। আর সংবাদপত্রের সমস্যার সমাধানে এফবিসিসিআই এবং নোয়াব একসঙ্গে কাজ করবে।’
সভা শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে এ কে আজাদ বলেন, সংবাদপত্রে বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য খরচও বেড়েছে। সংবাদপত্রের আয় বাড়েনি, বিজ্ঞাপন কমে গেছে। প্রণোদনা পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের কাছে নোয়াবের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। সংবাদপত্র হকারদের জন্য সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়রদের কাছে জায়গা চেয়ে সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে। এসব চাওয়া পূরণে সরকারের সহযোগিতা দরকার।
সভা শেষে আলাপকালে একজন গণমাধ্যমকর্মী এফবিসিসিআইয়ের সভাপতির কাছে প্রশ্ন করেন, নোয়াব ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল চেয়েছে, আপনারা কি তা সমর্থন করেন। উত্তরে মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘নোয়াবের পক্ষ থেকে এই আইন নিয়ে নানা তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়েছে। আমরা বিষয়টি বিস্তারিত জেনে এ ব্যাপারে আমাদের অবস্থান জানাব।’ তিনি জানান, সংবাদপত্রের সমস্যার সমাধানে এফবিসিসিআই থেকে একটি স্ট্যান্ডিং কমিটি করে দেওয়া হবে। তারা নোয়াবের কাছ থেকে সংবাদপত্রের সমস্যাগুলো শুনে সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে সমাধানের জন্য আলোচনা করবে। সভায় নোয়াব সদস্য প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম, দ্য ফিন্যান্সিয়াল হেরাল্ড সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদসহ এফবিসিসিআইয়ের নেতারা বক্তব্য দেন।