বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজে মনমাতানো ক্লাস পার্টি অনুষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমরা চাই না ছাত্র ভাইদের কঠোর হয়ে দমন করতে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ

লঞ্চে আগুন: ২১ কবরে ২৩ মরদেহ, শনাক্ত ১৪

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২১
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী লঞ্চে অগ্নিকা-ের ঘটনায় ৩০ জনের জানাজা সম্পন্ন হয়েছে।

ঝালকাঠীর সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে ঘটনায় নিহত যে ৩৭ জনের মরদেহ বরগুনায় পাঠানো হয়, তাদের মধ্যে ১৪ জনকে শনাক্ত করেছে পরিবার। বাকি ২৩ জনের মরদেহ ২১ কবরে দাফন করা হয়েছে। গতকাল শনিবার (২৫ ডিসেম্বর) জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান নিজে উপস্থিত থেকে গণকবর দেওয়ার কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। জানা যায়, শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে ৩৭ মরদেহ পাঠানো হয় বরগুনার উদ্দেশে। এর মধ্যে বরিশালেই চারটি মরদেহ শনাক্ত করে পরিবার। পরে ৩৩টি মরদেহ আসে বরগুনায়। সেখান থেকে আরো ১০ মরদেহ শনাক্ত করে নেয় পরিবার। বাকি থাকে ২৩টি, যেগুলো শনিবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে দাফন করা হয়।
মরদেহগুলো বেশিরভাগ পুড়ে বিকৃত হয়ে যাওয়ায় চিনতে পারেননি স্বজনরা। তাদের পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে। বরগুনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জালাল উদ্দীনের তত্ত্বাবধানে শুক্রবার রাত সোয়া ১১টার দিকে ৩৩টি মরদেহ বরগুনা সদর হাসপাতালে আনা হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) রাত ২টার দিকে ঝালকাঠীর পোনাবালীয়া ইউনিয়নের দেউরী এলাকায় ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ নামের লঞ্চে আগুন লাগে। লঞ্চটি বরগুনা যাচ্ছিলো। আগুন লাগার পর যাত্রীরা নেভানোর চেষ্টা করেন। অনেকে ছাদে চলে যান। কেউ কেউ নদীতে লাফ দেন।
গত শুক্রবার রাত পৌনে ১২টার দিকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে পৌঁছায় মরদেহবাহী গাড়ি। এরপর মরদেহগুলো নামিয়ে হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যান স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রেডক্রিসেন্ট বরগুনার সদস্যরা। হাসপাতাল প্রাঙ্গণে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহতদের স্বজনরা। এ সময় উৎসুক মানুষ শোকে স্তব্ধ হয়ে যান। বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান জানান, বেলা ১১টায় জানাজা শেষে বরগুনা পোটকাখালী গণকবরে ৩০ জনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
যাদের পরিচয় শনাক্ত হয়নি তাদের ডিএনএ সংরক্ষণ করা হয়েছে। আমরা এখন পর্যন্ত ২২ জন নিখোঁজের খসড়া তালিকা করেছি। আহত ও মৃতদের তালিকা তৈরি করতে গ্রামে গ্রামে মাইকিং করা হচ্ছে। নিখোঁজদের তালিকা পূর্ণাঙ্গ হলে বলা যাবে বরগুনার কতজন নিখোঁজ রয়েছেন।
জেলা প্রশাসক আরো জানান, ঝালকাঠি জেনারেল হাসপাতাল থেকে মোট ৩৭ জনের মরদেহ বুঝে নেয় বরগুনা জেলা প্রশাসন। এদের মধ্যে পাঁচজনের মরদেহ ইতোমধ্যে স্বজনদেরও কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। বাকি ৩২টি মরদেহ বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে নলছিটির সুগন্ধা নদীর পোনাবালীয়া ইউনিয়নের দেউরী এলাকায় বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের ইঞ্জিন রুম থেকে আগুন লাগে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৭০ জন। ঢাকায় পাঠানো হয়েছে ১৬ জনকে। আহত হয়েছেন শতাধিক।
বরগুনা জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৩৩ জনের লাশ আমরা বুঝে নিয়েছি। এর মধ্যে ৯ জনের লাশ শনাক্ত করেছেন স্বজনরা। সকল প্রক্রিয়া শেষে ওই ৯ জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকিদের লাশ বিকৃত হয়ে যাওয়ায় চিনতে পারছেন না স্বজনরা। লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। স্বজনরা চিনতে না পারলে ডিএনএ পরীক্ষা করে এসব লাশ হস্তান্তর করা হবে।
লঞ্চে অগ্নিকা-ে ৪১ জনের মৃত্যু: স্বাস্থ্যসচিব: ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া। তিনি বলেন, এ অগ্নিকাণ্ডে আহত ৮১ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৪৬ জনের চিকিৎসা চলছে। ১৬ জনকে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুর সোয়া ১২টায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে রোগীদের সার্বিক পরিস্থিতি দেখার পর সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ডে আহতদের মধ্যে ২১ জনকে ঢাকায় পাঠানো হয়। তাদের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে ৪ জনকে চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন ১৫ জনের চিকিৎসা চলছে। দুই জনকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে। একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। আর একজনের মৃত্যু হয়েছে। এই কর্মকর্তা বলেন, আহতদের মধ্যে ৩২ জনের চিকিৎসা চলছে বরিশালে। ৭ সদস্যের চিকিৎসক টিম পাঠানো হয়েছে। তারা সেখানে চিকিৎসা দিচ্ছেন। আমরা মনিটরিং করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আহতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসার নির্দেশনা দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আহতদের সব ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। হাসপাতালের পক্ষ থেকে চিকিৎসার খরচ বহন করা হচ্ছে। নিহতদের মরদেহ বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থাও হাসপাতালের পক্ষ থেকে করা হবে বলে জানান তিনি। গত বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটিতে আগুন লাগে। খবর পেয়ে বরিশাল, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠির কোস্ট গার্ড ও ফায়ার সার্ভিস উদ্ধারকাজ শুরু করে।
ওই সময় বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক কামাল হোসেন ভূঁইয়া ব্রিফিংয়ে ৩০ জনের মরদেহ উদ্ধারের কথা জানান। পরে ঝালকাঠি জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রশান্ত কুমার দে ৩৯ জনের মরদেহ উদ্ধারের তথ্য নিশ্চিত করেন। দুপুর পৌনে ১টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারজিয়া আক্তার নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে মৃত বেড়ে ৪০ জনে দাঁড়ায়। এদিকে, ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আনার পর হাবিব খান নামে একজনের মৃত্যু হয়, যা নিয়ে লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১ জনে। মৃতদের মধ্যে ৩৭ জনই বরগুনা জেলার বাসিন্দা।
এদিকে, লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধদের দেখতে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে যান নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) রাত ৯টা ৫৫ মিনিটে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। তার আগে সন্ধ্যার দিকে হাসপাতালে যান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
বাবার কোল থেকে হারিয়ে যাওয়া তাবাসসুমকে পাওয়া গেলো কফিনে: বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার হাফেজ তুহিন। শুক্রবার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকা থেকে অভিযান-১০ লঞ্চে ফিরছিলেন গ্রামে। লঞ্চে যখন আগুন লাগে তখন প্রাণ বাঁচাতে আড়াই বছরের সন্তান তাবাসসুমকে নিয়ে স্ত্রীর হাত ধরে ঝাঁপ দেন নদীতে। কিন্তু তীরে এসে দেখেন শিশু তাবাসসুম আর কোলে নেই। কখন যে হাত ফসকে নদীতে নিরুদ্দেশ হয়েছে সেটা টের পাননি বাবা তুহিন। তুহিন বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে সন্তানের খোঁজে কখনো হাসপাতালে কখনো নদীতীরে ছুটে বেড়ান তুহিন। স্ত্রী এখন অসুস্থ। কথা বলার শক্তি নেই তার। গত শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত শিশু তাবাসসুমকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে অবশেষে বরগুনা সদর হাসপাতাল মর্গে এসে তাবাসসুমের খোঁজ নেন তার স্বজনরা। সেখানে এসে স্বজনরা জানতে পারেন শনাক্ত না হওয়া মরদেহগুলো বরগুনার সার্কিট হাউজ মাঠে জানাজা দিয়ে সদরের পোটকাখালীতে দাফনের জন্য নেওয়া হয়েছে। সেখানে দৌড়ে গিয়ে স্বজনরা কফিন থেকে শনাক্ত করে শিশু তাবাসসুমের মরদেহ। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। মরদেহ শনাক্ত হওয়ার বিষয়টি বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান জানার পর তাবাসসুমের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন এবং দাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, শিশু তাবাসসুমের মরদেহ শনাক্ত করতে পেরেছে পরিবার। তাই সরকারিভাবে দাফন না করে তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। একইসঙ্গে পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com