জেলার চান্দিনা উপজেলায় এবার সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলার কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন প্রান্তিক চাষিরা। চাষকৃত সবজির মধ্যে রয়েছে টমেটো, লাউ, বেগুন, শসা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, মিষ্টিকুমড়া, আলু, লালশাক, শিম, কাঁচামরিচ ইত্যাদি। চাষকৃত সবজি প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। উপজেলার শ্রীমন্তপুর গ্রামের যুবক আবিদ আলীর সবজি চাষে সাফল্য চমকে দেয়ার মতো। শুধু আবিদ আলীই নন, চান্দিনার এরকম অনেক সফল সবজি চাষি রয়েছেন। যাদের সাফল্য অন্যদের উজ্জীবিত করছে। আবিদ আলী জানান, তিনি নামমাত্র পড়ালেখা করেছেন। অভাবের তাড়নায় বেশি পড়ালেখা করা সম্ভব হয়নি। এরপর জীবনের তাগিদে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন কৃষিকাজে। প্রায় এক যুগ ধরে কৃষিকাজ নিয়েই আবিদ আলীর জীবন সংগ্রাম। তিনি কৃষি কাজের এক পর্যায়ে শুরু করেন সবজি চাষ। আর সবজি চাষের বদৌলতে বদলে গেছে তার ভাগ্য। তার পরিবারের আর্থিক অনটন অনেকটা কেটে গেছে।
গত বছর শীত মৌসুমে আবিদ আলী অন্যের জমি বর্গা নিয়ে শুধু টমেটো চাষ করে প্রায় লক্ষাধিক টাকা আয় করেছেন। তাই প্রতিবারের মতো এ বছরও তিনি ১ একর জমিতে টমেটো, ২ একর জমিতে আলু, আধা একর জমিতে লাউ, আধা একর জমিতে ডাঁটা চাষ করেছেন। তার ক্ষেতের গাছে প্রচুর টমেটো এসেছে। আবিদ আলী জানান, তিনি ৬০ টাকা দামে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি শুরু করেছেন। বর্তমানে জমিতে ফলানো টমেটো বিক্রি করে প্রায় ১ লাখ টাকা আয় করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে মাত্র ৫ হাজার টাকা। তিনি এ বছর সবজি বিক্রি করে গত বছরের চেয়ে বেশি টাকা আয় করবেন বলে আশাবাদী।
একইভাবে সবজি চাষ করে অনেকেই গত বছরের সাফল্যের পর এ বছরও ফুলকপিসহ বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করেছেন। চান্দিনার পিহর গ্রামের শত্তকত মিয়া, মানিক মিয়া, আমির আলী, আব্দুল মালেক, মোখলেছ মিয়া, আলমগীর মিয়া, জুয়েল মিয়া ও ইব্রাহিম মিয়া, তারা প্রত্যেকেই সবজি চাষে লাভবান হয়ে উঠছেন। তারা তাদের জমিতে টমেটো, লাউ, বেগুন, শসা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, মিষ্টিকুমড়া, আলু, লালশাক, শিম, কাঁচামরিচের চাষ করেছেন। আলমগীর জানান, প্রায় প্রতি কেজি শিম ৭০ টাকা দাম থেকে তিনি বিক্রি শুরু করেছেন। এ বছর শিম বিক্রি করে গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ আয়ের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।
সরজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এ বছর ব্যাপকভাবে সবজি চাষ করা হয়েছে। উপজেলার ছায়কোট, শ্রীমন্তপুর, চান্দিয়ারা, পিহর, রাড়িরচর, বাড়েরা, মহিচাইল, রানিরচড়া, দোল্লাই নবাবপুরের বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার একর জমিতে গত বছরের আগস্ট মাসের শুরু থেকেই শুরু হয়েছে সবজি চাষ। এক সময় এসব এলাকা আলু চাষের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। কিন্তু তাতে মন্দা দেখা দেয়ায় এখন তারা টমেটো, লাউসহ বিভিন্ন সবজি চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। শুধু শ্রীমন্তপুর গ্রামের প্রায় ৫০ জন কৃষক অন্তত ১০০ একর জমিতে সবজি চাষ করেছেন। এছাড়া চাষকৃত সবজির মাঝে রয়েছে বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, শালগম, ফরাশ, মুলা, লালশাক, শসা, কাঁচামরিচ ইত্যাদি। সবজি চাষিদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, বেগুন চাষে সর্বমোট ৫০০ টাকা খরচ হয়। আর প্রতি বেগুন গাছ থেকে পাওয়া যায় ১০/২০ কেজি বেগুন। মৌসুমের শুরুতে সবজি বিক্রি শুরু করতে পারায় খরচ পুষিয়ে গত বছরের চেয়েও বেশি টাকা আয় করা সম্ভব বলে মনে করছেন চাষিরা। চাষকৃত এসব সবজি প্রতিদিন ট্রাক বোঝাই করে স্থানীয় বিভিন্ন স্থান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে। কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন আড়ত এ পাইকারি দরে বিক্রি হয়। অনেক সময় পাইকারি ব্যবসায়ীরা টাটকা সবজি কিনতে সরাসরি ক্ষেতে চলে যান। স্থানীয় বাজারে এ সবজির প্রচুর চাহিদা রয়েছে। কীটনাশকমুক্ত ও সার কম থাকায় কুমিল্লার বাইরের সবজি থেকে স্থানীয় এ সবজি সুস্বাদু।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, এবছর চান্দিনা ব্যাপক সবজি চাষ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি। চান্দিনা উৎপাদিত সবজি কুমিল্লা শহরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি হচ্ছে। সবজি চাষে এ এলাকার কৃষকদেরও আগ্রহের কমতি নেই। আমরা নিয়মিত মাঠে গিয়ে ফলনের তদারকি করছি।