শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে অনশনরত শিক্ষার্থীদের ১২ জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এছাড়া অনশনরত বাকিরাও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। গতকাল অনশনের তৃতীয় দিন শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) সকালে শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আবেদিন এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, আমরা কেউ ভালো নেই। আমাদের অনশনের প্রায় ৪২ ঘণ্টা পার হতে চলেছে। এ সময়ে এক ফোঁটা পানিও গ্রহণ না করায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজসহ কয়েকটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ১২ জন শিক্ষার্থী। অনশনস্থলে থাকা বাকিদের স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। অনশনরত এ শিক্ষার্থী আরও বলেন, যত কষ্টই হোক, যত ত্যাগই স্বীকার করতে হোক ভিসির পদত্যাগের আগ পর্যন্ত আমরা অনশন চালিয়ে যাবো। ১৯ জানুয়ারি বিকেল ৩টা থেকে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে অনশনে বসে ২৪ শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে কিলো রোডে অবস্থান নিয়ে অনশন করছেন তারা। তবে একজন শিক্ষার্থীর বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় তিনি অনশন ভেঙে বাড়ি যান।
২০ জানুয়ারি রাতে প্রায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল করেন। এ সময় তারা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে বিভিন্ন স্লোগান দেন। পরে দিনগত রাত ৩টার দিকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কুশপুতুল দাহ করেন।
শিক্ষার্থীদের প্রেস ব্রিফিংয়: শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে দেখা করতে ঢাকায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল। গতকাল শুক্রবার বিকেলে তারা ঢাকার পথে রওনা দেবেন। তবে- ক্যাম্পাসে অনশন ও আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। দুপুরে ক্যাম্পাসের অনশনস্থলে আসেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। তারা প্রথমে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর বাসভবনে গিয়ে তারা ভিসি প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে বেরিয়ে আসার পর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেলের মোবাইল ফোনে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একজন। এ সময় শিক্ষামন্ত্রী তাদের প্রতিনিধি দলকে ঢাকায় গিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দিলে শিক্ষার্থীরা রাজি হন।
শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পর শিক্ষার্থীরা প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন- তাদের একটি প্রতিনিধি দল বিকেলেই শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে ঢাকায় যাবেন। তারা জানান- ভিসির পদত্যাগ দাবিতে ক্যাম্পাসে আন্দোলন চলমান থাকবে। ঢাকায় বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী তাদের দাবি মেনে নিলে তারা অনশন ও আন্দোলন থেকে সরে যাবে।
শিক্ষকদের সামনে তিলে তিলে শেষ হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা: ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে অনশনরতরা পানিসহ কোনো ধরনের খাবার গ্রহণ না করায় শিক্ষকদের সামনেই তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষকবৃন্দ অভিভাবক হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ প্রশমিত করতে পারছেন না। ধাপে ধাপে আলোচনার প্রস্তাব নিয়ে এসেও ব্যর্থ হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের। গত বুধবার বিকেল ৩টা থেকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনশন শুরু করেন ২৪ শিক্ষার্থী। ভিসির পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত তারা একফোঁটা পানিও পান করবে না, এমন দৃঢ় প্রতিজ্ঞায় তিনদিন অতিবাহিত হলেও শুধুমাত্র সেলাইন দিয়ে শিক্ষার্থীদের বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। তীব্র শীতের মধ্যেও ভিসির বাস ভবনের সামনে একরোডে অনশনকারীসহ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছেন। গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে তাদের। ফলে মুমূর্ষু অবস্থায় ৮ শিক্ষার্থীকে সিলেট শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে দুইজন ছাত্রী ও ছয়জন ছাত্র রয়েছে। এদিকে কয়েক দফায় শিক্ষকবৃন্দ বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে শিক্ষার্থীদের বুঝানোর চেষ্টা করছেন এবং অনশন ভাঙানোর জন্য অনুরোধ করছেন কিন্তু শিক্ষার্থীরা ভিসির পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানান।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টায় শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল এসেও তাদের সাথে সহমর্মিতা প্রদর্শন করেন এবং আবাসিক হল ও বাসায় ফিরে যেতে বলেন কিন্তু এতেও সাড়া মেলেনি শিক্ষার্থীদের। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদ বলেন, অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকলে ডিহাইড্রেশনের সাথে সাথে সোডিয়াম পটাশিয়াম লেভেল নেমে যেতে থাকে। কাজল দাশের ক্ষেত্রে তা এতটাই নেমে গেছে যে অত্যধিক মাত্রায় মাসল পুল ও মাসল শ্রিংক করায় তার শরীরের নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায় ও হাসপাতালে নিতে হয়। এদিকে আবার একজনের ব্লাড প্রেশার নেমে গেছে অনেক, বমির উদ্রেক, গ্লুকোজ ও সুগার লেভেল নেমে যাওয়াতো আছেই। শ্বাসকষ্টের সমস্যা তৈরি হয়েছে। মোটামুটি সবাইকেই ক্যানোলার মাধ্যমে লিকুইড স্যালাইন ও ভিটামিন সাপ্লিমেন্টারি দিতে হচ্ছে। অনশনকারী ২৪ জনের মধ্যে আটজন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদেরকে হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকিদের গুরুতর সমস্যা দেখা না দিলেও দুর্বলতা আর ব্লাড প্রেশার নেমে যাওয়ার সমস্যা আছেই। কিন্তু অনশন ধরে রেখেছে তারা। এদিকে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল বের করেছে। সহস্রাধিক বিক্ষোভকারীর অংশগ্রহণে মিছিলটি ভিসির বাস ভবনের থেকে শুরু হয়ে সারা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে আবারও অনশনস্থলে আসে। এসময় শিক্ষার্থী ভিসি বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেয় তারা। পরবর্তীতে রাত ৩টায় মুক্তমঞ্চে ভিসির কুশপুত্তলিকা দাহ করে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বলেন, অনশনকারী শিক্ষার্থীদের কিছু হলে ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে দায়ভার নিতে হবে।
এদিকে গত রোববার শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশি হামলার পর থেকেই ভিসির বাস ভবনের সামনে ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চলছে।