জেলায় বিলুপ্ত প্রায় বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছের চাষ হচ্ছে। একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগে শিং, মাগুর, টাকি, শোল, বাইন, কই, পাবদা, পুটি, গুলশা, ব্লাক কাপসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ চলছে। এতে করা বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ১২০ জন চাষি এসব দেশি এসব মাছ চাষ করে সফলতা পেয়েছে। বাজারে দেশি মাছের চাহিদা বেশি থাকায় আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে অনেকের মাঝে এসব মাছ চাষের।
জানা যায়, একটা সময়ে শহর ও গ্রামের পুকুর, খাল ও বিলে প্রচুর দেখা মিলতো দেশি শিং, মাগুর, টাকি, শোল, পুটি, বাইন, তেলাপিয়া, কই, পাবদা, গুলশা, ব্লাক কাপসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। কিন্তু কালের পরিবর্তনের সাথে প্রায় হারিয়ে গেছে এসব মাছ। ফলে এখন আর বাজারে দেখা মিলেনা এসব মাছের। তবে ২০১৯ সাল থেকে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর অর্থায়নে গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি বেসরকারি সংস্থা ভোলা সদর উপজেলায় শতাধিক মাছ চাষিকে দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে বিলুপ্ত প্রজাতির দেশি মাছ চাষ শুরু করেন। ্এতে করে সফলতার মুখ দেখছেন চাষিরা। স্থানীয় বাজারে এ মাছের চাহিদা ও দাম ভালো পাওয়ায় আগামীতে বাণিজ্যিকভাবে চাষের পরিকল্পনা নিচ্ছেন অনেক চাষি।
ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের শের-ই বাংলা বাজার এলাকায় মোঃ জসিম উদ্দিন জানান, গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা থেকে তিনি দেশি প্রজাতির মাছ চাষ করতে দুই দিনের প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে তাকে বিনামূল্যে শিং, জাগুর, টাকি, শোল, গুলশাসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি প্রায় ১ হাজার মাছ দেওয়া হয়। তিনি জানান, পরে তিনি তার ৮ শতাংশ জমির পুকুরে ওইসব মাছ চাষ শুরু করেন। মাছগুলোকে খাবার খাইয়ে বড় করে তুলেছেন। এপর্যন্ত ২ হাজার টাকার খাবার খাইয়েছেন। বাজারের বিক্রি করলে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি দাবি করেন। ভোলা সদর উপজেলার চর সামাইয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের শান্তিরহাট গ্রামের মোঃ হারুন অর রশিদ বলেন, তিনিও ওই এনজিও থেকে গত বছর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। পরে দেড় হাজার দেশি মাছ চাষ শুরু করেন। প্রায় ১০ মাসের মত খাবার খাইয়ে মাছগুলোতে বড় করে তুলেছেন। খাবার ও পুকুর তৈরিতে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। পরে মাছ বিক্রি করে ভালো টাকা লাভ হয়েছে তার। সামনের দিনে আরো বড় পরিসরে দেশি মাছ চাষের কথা জানান তিনি।
গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা ঐশী মজুমদার জানান, সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের শতাধিক মাছ চাষিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে পরীক্ষমূলকভাবে দেশি মাছ চাষে সফলতা এসেছে। ছোট আকারের খামারে ২৫/৩০ হাজার ও মাঝারি খামারের ৫০ হাজার টাকার মত লাভ হচ্ছে চাষিদের। তবে আগামীতে বাণিজ্যিভাবে বড় ধরণের এ জাতের মাছ চাষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়াও পর্যাক্রমে আমরা ভোলার অন্যান্য উপজেলায়ও এ জাতের মাছ চাষ করাবো।