রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:২১ অপরাহ্ন

ফিতনার সময় করণীয়

মুফতি আনিছুর রহমান:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২২

মানবজাতির পিতা হজরত আদম আ:-কে সৃষ্টির পর যখন তাঁর সম্মানার্থে সিজদার আদেশ অমান্য করে ইবলিশ শয়তান অস্বীকার ও অহঙ্কার করে অভিশপ্ত হলো এবং চিরতরে জান্নাত থেকে বিতাড়িত হলো, তখন সে তার মতো করে কয়েকটি স্বার্থ আল্লাহর কাছ থেকে আদায় করে নিলো। তন্মধ্যে একটি চ্যালেঞ্জ ছিল যা পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বর্ণনা করেছেন-
‘অতঃপর আমি তাদের (বনি আদমের) সম্মুখ দিয়ে, পেছন দিয়ে, ডান দিক দিয়ে এবং বাম দিক দিয়ে আসব। আর আপনি তাদের অধিকাংশকেই কৃতজ্ঞ পাবেন না।’ (সূরা আ’রাফ-১৭)
ওই আয়াতে শয়তান এটা বুঝায়নি যে, সে সরাসরি মানুষের সামনে এসে দাঁড়াবে। বরং সে চতুর্দিক থেকে বিভিন্ন ঈমান বিধ্বংসী কার্যকলাপ নিয়ে হাজির হবে, যাতে মানুষকে চিরতরে জাহান্নামি বানিয়ে দিতে পারে।
সে ধারাবাহিকতায় বাস্তবে আমরা দেখি বর্তমানে ঠিকই শয়তান চতুর্দিক দিক থেকে বিভিন্ন ধরনের ঈমান বিধ্বংসী বিজাতীয় সংস্কৃতি নিয়ে আসছে। উপভোগ, উদযাপন, সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় কালচারের নামে ইহুদি-খ্রিষ্টানদের বহু চক্রান্তকে মুসলিম সমাজে প্রবেশ করাচ্ছে। বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের মনেপ্রাণে বদ্ধমূল হয়ে যাচ্ছে যে, হ্যাঁ এসব কালচার, আচার অনুষ্ঠানই আমার সফলতা ও সুখময় জীবন যাপনের মাধ্যম। বহু মানুষ দলে দলে সে ফাঁদে পড়ে ঈমান হারাচ্ছে। আর রাসূল সা:-এর সে বাণী বাস্তব রূপ নিচ্ছে যে, তিনি বলেছিলেন, ‘একটা যুগ আসবে যখন হাতে অঙ্গার রাখার মতোই ঈমান রক্ষা কঠিন হয়ে যাবে।’ (আল হাদিস)
ইহুদি খ্রিষ্টান কখনো মুসলিমদের কল্যাণকামী হতে পারে না। তারা বিভিন্ন কলাকৌশলে সর্বদাই ঈমান হরণের চেষ্টায় সজাগ থাকে। এ জন্যই মহান আল্লাহ কুরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘হে মুমিনগণ, ইহুদি ও নাসারাদের তোমরা বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে নিশ্চয় তাদেরই একজন। নিশ্চয় আল্লাহ জালিম কওমকে হিদায়াত দেন না।’ (সূরা মায়িদা-৫১)
তাদের ঈমান বিধ্বংসী ফিতনায় নিমজ্জিত হয়ে যারা তাদের আচার অনুষ্ঠানে সশরীরে অংশগ্রহণ, সহযোগিতা এমনকি মৌনসম্মতি দ্বারাও কেউ তাদের দল ভারী করে, তাহলে সেও তাদের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে। কেননা, হাদিসে এসেছে- ‘যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত গণ্য হবে।’ (সুনানে আবু দাউদ)। এ জন্য ফিতনার সময় করণীয় সম্পর্কে রাসূলুল্লøাহ সা: আমাদের শিক্ষা দিয়ে গেছেন।
হাদিসে এসেছে, ‘আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা: বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সা:-এর চারপাশে বসা ছিলাম। তখন তিনি ফিতনা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, ‘তোমরা যখন দেখবে মানুষের ওয়াদা নষ্ট হয়ে গেছে, তাদের আমানতদারি কমে গেছে এবং তারা এরূপ হয়ে গেছে, এ বলে তিনি তাঁর হাতের আঙুলসমূহ পরস্পরের মধ্যে মিলালেন। বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা শুনে আমি দাঁড়িয়ে তাঁকে বললাম, আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গিত করুন! আমি তখন কী করব? তিনি বললেন, তুমি অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে তোমার ঘরে অবস্থান করো, তোমার জিহ্বা সংযত রাখো; যা জানাশুনা আছে তাই গ্রহণ করো এবং অজানাকে পরিত্যাগ করো। আর তোমাদের নিজের ব্যাপারে বিশেষভাবে সতর্ক হও এবং সাধারণের সম্পর্কে বিরত থাকো।’ (সুনানে আবু দাউদ)
এমনিভাবে হজরত মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ সা:-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি ফিতনা থেকে দূরে থাকবে সেই সৌভাগ্যবান, যে লোক ফিতনা থেকে দূরে থাকবে, সেই সৌভাগ্যবান; যে ফিতনা থেকে দূরে থাকবে, সেই সৌভাগ্যবান। আর যে ব্যক্তি ফিতনায় পড়ে ধৈর্যধারণ করবে, তাঁর জন্য কতই না মঙ্গল!’ (সুনানে আবু দাউদ)
অনেক মানুষ আছে যারা সপরিবারে ইসলাম মেনে পূর্ণরূপে দ্বীনের উপর চলতে আগ্রহী! কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সামাজিকতা রক্ষার নামে বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে বাধ্য হয়ে অংশগ্রহণ করতে হয়। যা গানবাজনা, জেনা-ব্যভিচারসহ বিভিন্ন ধরনের ঈমানবিধ্বংসী কার্যকলাপে ভরপুর! ফলে ঈমান, আমল ও উত্তম আখলাকের বৈশিষ্ট্য বাকি রাখাটা একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সুতরাং আসুন আমরা তাওবা-ইস্তিগফারের মাধ্যমে তাকওয়া তথা খোদাভীতি অর্জনের মাধ্যমে পূর্ণ দ্বীনের উপর অবিচল ও অটল থেকে নিজেকে ও নিজ পরিবারকে দিয়ে এ চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা শুরু করি। ইনশাআল্লাহ একদিন সমাজ, রাষ্ট্র সর্বত্রই দ্বীনের আলো ছড়িয়ে পড়বে। সব ফিতনা নির্মূল হয়ে যাবে।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য এবং নিকটবর্তী বিজয়। (হে রাসূল) মুমিনদেরকে এর সুসংবাদ জানিয়ে দিন।’ (সূরা সফ-১৩)
লেখক: গবেষক, ইমাম ও খতিব




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com