রাজশাহীর পদ্মার চর এখন কৃষকদের স্বপ্নপল্লী। বছরে তিন ফসলের আবাদ হচ্ছে এ চরে। শক্তিশালী হচ্ছে চরাঞ্চলের অর্থনীতি। পলিমিশ্রিত ঊর্বর এই ভূমিতে ফলছে মসুর, গম, সরিষা, শাক-সবজি, ভুট্টা, পেঁয়াজ, রসুন, আলু, মাসকালাই, ধনিয়া ও বাদামসহ অর্থকারী আরও অনেক ফসল।
জানা গেছে, জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন এবং মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত বৃহৎ আয়তনের চর রয়েছে প্রায় ১ লাখ ২১ হাজার ৮৫৬ হেক্টরজুড়ে। এর মধ্যে আবাদ হয় এমন চরের পরিমাণ ৮৮ হাজার ৬৬০ হেক্টর।
বছরে একবার আবাদ করা যায় এমন জমি আছে ১৪ হাজার ৯১২ হেক্টর। বছরে দুটি ফসলের আবাদ করা যায় এমন চর ৩৬ হাজার ৩১৩ হেক্টর।
এ ছাড়া বছরজুড়ে সোনালি ধান ফলে ২১ হাজার ২৮ হেক্টরে। তবে এখনও মোট চরের প্রায় ৫৩৩ হেক্টর জমি চাষাবাদের বাইরে রয়েছে। এসব জমি আবাদযোগ্য করতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি অফিস।
কৃষকরা বলছেন, চরে আবাদ করা কষ্টকর হলেও এটাই তাদের ভাগ্যের চাকা ঘোরাচ্ছে। চরের মাটি এখন পড়ে থাকে না। তবে সরকারি সহায়তা পেলে তারা আরও উপকৃত হবেন।
রাজশাহীর মতিহার, বোয়ালিয়া, পবা, গোদাগাড়ী, চারঘাট ও বাঘা উপজেলার চরে প্রায় ১০ হাজার ১৮৭ হেক্টর জমিতে গত বছর প্রায় ১৩টি ফসলের চাষ হয়েছে। ওই বছর এই চর থেকে দুই হাজার ৩১৮ মেট্রিক টন মসুর, ৯ হাজার ৮৩৭ টন গম, ৫১৮ টন সরিষা, ৩২ হাজার ১০৫ টন সবজি, ৬ হাজার ২৫০ টন ভুট্টা, দুই হাজার ২০০ টন বোরো, সাত হাজার ৬৫০ টন পেঁয়াজ, পাঁচ হাজার ৭৭৫ টন রসুন, ১১ হাজার ৮৮২ টন আলু, তিন হাজার ৮২৫ টন আম, ৭২৮ দশমিক ৭ টন মাসকলাই, ৪৪৬ টন চিনাবাদাম ও ২৮৫ টন ধনিয়া পাতা উৎপাদন হয়েছে।
চরে এখন বোরো ধানের বীজতলা পরিচর্যা ও লাগানোর কাজে ব্যস্ত কৃষকরা। শ্রীরামপুরের কৃষক কালাম হোসেন বলেন, প্রতি বছর আমরা কয়েকজন মিলে চরের প্রায় ২০ থেকে ৩০ বিঘা আবাদ করি। গত বছর ধান, খেসারি ও মাসকলাইসহ সবজির চাষ করেছিলাম। চরের মাটি উর্বর। তাই চাষাবাদ খরচও কম। গত বছর বিঘা প্রতি ২২ থেকে ২৫ মণ ধান পেয়েছি। এবারও ধানের আবাদ করছি।
কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, চরের প্রায় চার বিঘা জমি লিজ নিয়ে আবাদ করেছি। প্রতি বছরই লিজ নিয়ে আবাদ করি। চার বিঘায় পেঁয়াজ, রসুন, মসুর ও খেসারির আবাদ আছে। মসুরের আবাদটা তেমন ভালো হয়নি। তবে অন্যান্য আবাদ ভালো আছে। আশা করছি, এবারও লাভবান হবো।
রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, রাজশাহীর চরাঞ্চলে প্রতি বছরই আবাদ বাড়ছে। যে চর প্রতি বছর ডুবে যায় সেখানে পলি জমে। তবে চরের কিছু জমিতে দেখা যাচ্ছে ক্ষতিকর মেডিসিনের ব্যবহার হচ্ছে। এটা মূলত পোকা দমনে ব্যবহার করা হয়। এসব আবার ফসল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। যদিও এর ব্যবহার কম। তিনি আরও বলেন, চরের কৃষকদের চাষাবাদে উৎসাহিত করতে ও সমস্যা সমাধানে মাঠপর্যায়ের কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া আছে। এ ছাড়া সরকারের কৃষিবান্ধব বিভিন্ন উদ্যোগের সুফল চরাঞ্চলের কৃষকরাও পাচ্ছেন।