পানির দাম তিন গুণ বাড়িয়েছে রাজশাহী ওয়াসা। গতকাল মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) থেকে আবাসিক ও বাণিজ্যিক উভয় ক্ষেত্রেই নতুন এই মূল্য কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। এদিকে, করোনা মহামারির সময়ে পানির এই মূল্য বৃদ্ধিকে মড়ার ওপর খাড়ার ঘা উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন নগরবাসী।
পানির দাম বাড়ানো অযৌক্তিক দাবি করে রাজশাহী ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার আলী বলেন, ‘রাজশাহী ওয়াসা বর্তমানে যে সেবা দিয়ে আসছে, তাতেই তারা বেশি টাকা নিচ্ছে। শুধু সকাল ও রাতের কিছু সময়ে পানি পাওয়া যায়। মাঝে-মধ্যেই লাইন থেকে কালো পানি বের হয়। খাওয়া তো যায়ই না।’তিনি আরও বলেন, ‘করোনায় বর্তমানে রাত ৮টার পর থেকে নগরীর দোকানপাট বন্ধ থাকছে। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাদের আয়ের পথ আরও কমে গেছে। এ অবস্থায় পানির দাম বাড়লো। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভাড়া বেড়ে যাবে। ব্যবসায়ীরা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না।’
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে পানির দাম এক লাফে তিন গুণ বাড়ানোর ঘোষণার পরপরই এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন নগরবাসী। রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, ‘রাজশাহী ওয়াসা নগরবাসীর প্রতি অত্যাচার করছে। যে সময় নগরবাসীর আয়-উপার্জন কমেছে, সে সময় ওয়াসা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের এ সিদ্ধান্তের পরপরই বিভিন্ন টেলিভিশন, পত্র-পত্রিকায় আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি। জনসংযোগ করেছি। নগরবাসী এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।’ ওয়াসা কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসলে নগরীবাসীকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তিনি। তবে রাজশাহী ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বলছে, পানির দাম তিন গুণ বাড়ানো হলেও তা উৎপাদন ব্যয়ের চেয়ে অনেকটাই কম। এক হাজার লিটার পানি উৎপাদনে ওয়াসার খরচ হচ্ছে ৮ টাকা ৯০ পয়সা। আর তিন গুণ বাড়ানোর পরও আবাসিক এলাকার গ্রাহক পর্যায়ে পানির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ টাকা ৮১ পয়সা। আর বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য সমপরিমাণ পানির জন্য পরিশোধ করতে হবে ১৩ টাকা ৬২ পয়সা। এর আগে রাজশাহীতে আবাসিক সংযোগে প্রতি এক হাজার লিটার পানির দাম ধরা হতো ২ টাকা ২৭ পয়সা। এ ছাড়া বাণিজ্যিকে ছিল ৪ টাকা ৫৪ পয়সা। এ ব্যাপারে রাজশাহী ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, ‘চলতি ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ওয়াসার পানির নতুন মূল্য কার্যকর করা হয়েছে। সময় ও উৎপাদন খরচের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই পানির নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর বর্তমান ওয়াসার পরিধি ও সেবা অনেক বেড়েছে। নতুন নতুন পরিকল্পনাও নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পানির দাম সেই তুলনায় বাড়েনি। অথচ এটিই ওয়াসার আয়ের উৎস। এজন্য গ্রাহক ও প্রতিষ্ঠানের সব দিক বিবেচনায় রেখে পানির দাম বাড়ানো হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) পানি সরবরাহ শাখাকে আলাদা করে ২০১০ সালের ১ আগস্ট রাজশাহী ওয়াসা প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ২০১১ সালের ১০ মার্চ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ওয়াসার কার্যক্রম চালু হয়। এর আগে ওয়াসা প্রতিষ্ঠার পর ২০১৪ সালে পানির দাম বাড়ানো হয়েছিল।