বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৬:০৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::

দখলদারের থাবা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না কুহেলিয়া নদী

কাইছার হামিদ মহেশখালী :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

সাগর কন্যা একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপের বুক চিরে বয়ে যাওয়া প্রাচীনতম কুহেলিয়া নদীটি দখলদারের থাবায় রক্ষা পাচ্ছে না এ নদীটি। অনাহারে দিন কাটাচ্ছে এ নদীর উপর আত্মনির্ভরশীল হাজার জেলে এবং ব্যবসায়ীরা। পর্যটক নগরী কক্সবাজার সদর থেকে উত্তর-পশ্চিমে মহেশখালীর মানুষের জীবন জীবিকার সঙ্গে যেন মিশে রয়েছে প্রাচীনতম এ কুহেলিয়া নদী। দক্ষিণ-পশ্চিম ও আঁকাবাঁকা করে উত্তর পাশদিয়ে নদীর সাথে মিশে গেছে বঙ্গোপসাগরে। সেই অনাদিকাল থেকে মহেশখালীর বাণিজ্য ও পণ্য পরিবহনের বেশিরভাগই কুহেলিয়া নদী দিয়ে সরবরাহ করা হত। এখন নদীর তীর ভরাট করে রাস্তা তৈরির কার্যক্রম চলায় বড় নৌকাগুলো চলতে পারছে না। প্রাণ আর পরিবেশেরও ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে আঁকা- বাঁকা খরস্রোতা কুহেলিয়া নদীর কুল ঘেঁষে যত দূর চোখ যায়, চলছে মহাকর্মযজ্ঞ। প্রথম দেখায় ঠিক বোঝার উপায় নেই জায়গাটি কোথায়। মনে হয় উন্নত বিশ্বের প্রথম সারির কোনো এক মহাসড়কের কাজ চলছে। কিন্তু না, এটি আসলে দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর মাতারবাড়ি ধলঘাটা মুহুরী যোনা পর্যন্ত দুই লেনের সড়ক নির্মাণ কাজ চলছে। কালারমারছড়া হয়ে চালিয়াতলী টু মাতারবাড়ী সংযোগ সড়কের রাজঘাট ব্রীজের অনেকটা কাছে শ্রমিকরা রোলার মেশিন দিয়ে রাস্তা সমতল করার কাজ করছেন। অনেক শ্রমিক ব্যস্ত সড়কের সাগরের পাশে ব্লক বসাতে। একজন শ্রমিক জানান, নির্মাণ কাজ দ্রুত করার জন্য তাদের নির্দেশ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন,’ এ জন্য আমরা দিনরাত বিরতিহীন কাজ করছি। ভূমি মন্ত্রণালয়ের আপত্তি সত্ত্বেও এখনো এই নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সওজ। স্থানীয় লোকজন বলছেন, এক সময়ের খরস্রোতা এই নদীতে মাছ ধরতেন শত শত মৎস্যজীবী। এখন তাঁরা বেকার। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল কোহেলিয়া নদীটি খননের। কিন্তু খনন না করে সংকটে উল্টো ভরাট করায় জীবন-জীবিকার পড়েছেন বহু মানুষ। অপরদিকে নির্দেশনা অমান্য করে সওজের কুহেলিয়া নদী ভরাট না করতে প্রধানমন্ত্রী দপ্তর এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা সত্ত্বেও সরকারি সংস্থাটি ইতোমধ্যেই প্রায় ১৩ কিলোমিটার নদীর দুই কিলোমিটার জুড়ে প্রায় অর্ধেক নদীই ভরাট করে ফেলেছে। নদীর অন্তত ২৬ একর জমিতে এখন রাস্তার কাজ চলছে । অন্যদিকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন নদী ভরাটের আবেদনে মহেশখালী উপজেলার এই একমাত্র নদীর জমিকে উল্লেখ করেছে পুকুর বা ডোবা হিসেবে। জানা গেছে, নদী ভরাট না করার নির্দেশনার পরও সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কীভাবে নদী ভরাট করল প্রশ্ন দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে? নদী ভরাট না করে কি সড়ক নির্মাণ সম্ভব ছিল না? স্থানীয় নদী রক্ষা কমিটি কী করছে এ বিষয়ে? এমন কথার ও উদয় হচ্ছে এই কোহেলিয়া নদীর জড়িত জীবিকা নির্বাহ করা জেলেদের মধ্যে। বলতে গেলে দখলের থাবায় এক সময়ের প্রাণচঞ্চল এই নদীটি এখন সরু খালে পরিণত হয়ে বোবা কান্না করছে। কুহেলিয়ার নদীর মাতারবাড়ী দক্ষিণ রাজঘাট এলাকা থেকে ধলঘাটার মুহুরী ঘোনা পর্যন্ত ৭ দশমিক ৩৫ কিলোমিটারের এই সড়কটির নির্মাণকাজ শুর“ হয়েছে ২০১৮ সালের অক্টোবরে। আগামী ২০২৩ সালের জুনে এটি শেষ হবে। গত বছরের জানুয়ারিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের তদন্তে এই চিত্র বেরিয়ে আসে। সংস্থাটি দেখতে পায়, সওজ নদীটির প্রায় ২৬ একর জমি (১১ লাখ ১৯ হাজার বর্গফুট) ভরাট করে ফেলেছে। জানা গেছে , বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, নদী থেকে দুরবর্তী অবস্থানে সড়ক নির্মাণের সুপারিশ করেছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। তাহলে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কিভাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আদেশ অমান্য করে নদী ভরাট করতে পারে? ’ মাতারবাড়ী এলাকার ভূমি রেকর্ড পর্যালোচনা করে দেখা যায় , সিএস (১৮৮০), আরএস (১৯৩৮) ও বিএস (১৯৮০) জরিপে জায়গাটি নদী হিসেবে চিহ্নিত আছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা ) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, সওজ যেভাবে নদীটি ভরাট করেছে, তা একটি ফৌজদারি অপরাধ। তিনি আরও বলেন, তারা (সওজ) নদীটির প্রস্থ্যতা ও গভীরতা কমিয়ে একেবারে শীর্ণ বানিয়ে ফেলেছে। তারা কোনোভাবেই নদীর স্রোত আটকাতে পারে না। কোনো নদীর প্লাবণভূমিও ভরাট করতে পারে না। কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শেখ মোহাম্মদ নাজমুল হুদা জানান, এই কাজের পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ণে সড়ক নির্মাণকাজের জন্য পরিবেশগতভাবে সংবেদনশীল এই নদীর তীর ভরাট করার বিষয়টি গোপন করেছে। তবে তিনি এর বেশি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। নির্মাণ প্রতিষ্ঠান মীর আক্তার হোসেন লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার সাইদুর রহমান সংবাদ সারাবেলাকে বলেন, তারা সরকারের দেওয়া পরিকল্পনা অনুসারে কাজ করছেন। তিনি বলেন-আমরা নিজেরা কোনো অ্যালাইনমেন্ট ঠিক করিনি। তবে নদী ভরাট কাজ বন্ধ করার নির্দেশ থাকায় কয়েক মাস কাজ বন্ধ থাকলেও। পরক্ষণে অনুমতি পাওয়া দুই লাইনের সড়কের কাজ করা হয়।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com