বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:০৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চীনের পদক্ষেপ কম

সাদেক মাহমুদ পাভেল:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে প্রতিশ্রুতির তুলনায় বাস্তবিক অর্থে চীনের পদক্ষেপ খুব কম বলে মনে করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। গত সোমবার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘দ্য রোহিঙ্গা ইন বাংলাদেশ: ইন সার্চ অব এ সাসটেইনেবল ফিউচার’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনার তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

রোহিঙ্গা সংকটে চীনের ভূমিকা নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, চীন শুরু থেকে সংকট সমাধানে তাদের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে আসছে। এটি তাদের তাত্ত্বিক অবস্থান। তবে বাস্তবিক অর্থে বেইজিংয়ের খুব বেশি পদক্ষেপ দেখিনি। মিয়ানমারে চীনের গভীর স্বার্থ রয়েছে। সম্প্রতি চীন সফরে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশ্চিত করেছেন যে তারা সংকট সমাধানে চেষ্টা করবেন।
মিয়ানমার বলতে বাংলাদেশ রাখাইন বোঝে, কারণ সীমান্তের বেশিরভাগই রাখাইনের সঙ্গে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন রাখাইন অঞ্চল আরাকান আর্মির দখলে। চীনের সঙ্গে মিয়ানমারের সকল অংশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ চীনকে আলোচনার মাধ্যমে মিয়ানমারের আভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানে অনুরোধ করেছে। একটি শান্তিপূর্ণ মিয়ানমার যেমন বাংলাদেশের প্রয়োজন, তেমনি চীনেরও প্রয়োজন।
রোহিঙ্গা নিয়ে সরকারের আন্তরিকতা বোঝাতে তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের কাছে মিয়ানমার এমন একটি দেশ যার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আলাদা অনুবিভাগ রয়েছে। ফলে এটি থেকে বোঝা যায় রোহিঙ্গা সংকটটিকে সরকার কতটা গুরুত্ব সহকারে দেখছে। এছাড়া বর্তমান সরকার রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কাজ করার জন্য উপদেষ্টা মর্যাদার একজন হাই রিপ্রেজেনটেটিভ নিয়োগ দেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদী সমাধান নিয়ে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের একটিই সমাধান। সেটি হচ্ছে প্রত্যাবাসন। তবে প্রত্যাবাসনটি হতে হবে তারা যেখান থেকে বিতারিত হয়েছে, সেই স্থানে, অধিকার ও নিরাপত্তাসহ। অন্য স্থানে তাদের পুনর্বাসন করলে তা টেকসই হবে না। আর এ সংকটের দীর্ঘমেয়াদী সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা প্রয়োজন রয়েছে। তাদের নিশ্চিত করতে হবে রোহিঙ্গাদের ওপর যাতে একই ধরনের নৃশংসতা আর যাতে কখনই না হয়।
অধিকার নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ইতিহাস দেখলে দেখবেন যে গণহত্যার মতো অপরাধ কখনই শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান হয়নি। সব সময়ে একটি সংঘাতের মধ্য দিয়ে এর সমাধান এসেছে। রোহিঙ্গা সংকটের শুরু থেকে বলেছি, এর সমাধান কখনই শান্তিপূর্ণভাবে আলোচনার মধ্য দিয়ে হবে না।
বর্তমানে মিয়ানমারে যে সংঘাতময় পরিস্থিতি চলছে তা হয়তো রোহিঙ্গাদের জন্য সুখবর নিয়ে আসতে পারে অনুমান করে তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি হয়তো সংকট সমাধানের একটি সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং রোহিঙ্গারা ফেরত যেতে পারবে। তবে এটি নিশ্চিত নয়। মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ শেষ হলে দেশটি আগের অবস্থায় ফেরত যেতে পারবে না। ফলে সেখানে একটি পরিবর্তন আসবে। সংকট সমাধানে আশিয়ান সদস্য রাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, আশিয়ানের নিজস্ব সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আশিয়ান সংগঠনের আইন অনুযায়ী, এক দেশ অন্য দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। তবে কিছু বিষয় রয়েছে যা আর আভ্যন্তরীণ থাকে না। যেমন রোহিঙ্গা সংকট এখন আর আভ্যন্তরীণ নেই, এটি বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশকেও আক্রান্ত করেছে। রোহিঙ্গারা নৌকা করে ইতোমধ্যে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত চলে গিয়েছে। আশিয়ান মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। রোহিঙ্গা নিয়ে অনেক দেশ কথা বলছে না, তবে কিছু দেশ রয়েছে তারা জোরালোভাবে কথা বলছে।
মানবিক সহায়তা কমে যাওয়া নিয়ে তিনি বলেন, মানবিক সহায়তা কমে যাওয়ায় রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের ওপর আরও বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। কারণ বিশ্বের অনেকই একে অন্যের দেখাদেখি সহায়তা কমিয়ে আনছে। যুক্তরাষ্ট্র নতুন যে অবস্থান নিয়েছে, তা পরিস্থিতি কঠিন করে তুলতে পারে। আশা করি রোহিঙ্গাদের জন্য তারা অর্থ সহায়তা বন্ধ করবে না। রোহিঙ্গা শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়। এটি হয়তো এ মুহূর্তে আমাদের সীমানার মধ্যে রয়েছে। তবে এ বিষয়টিতে এখনই মনোযোগ না দিলে এটি শুধু আর বাংলাদেশের সংকট থাকবে না।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, প্রথম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে তাদের চাহিদা সরবরাহ অব্যাহত রাখা, কারণ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সহযোগিতা কমিয়ে আনছে। তবে এটিও বলে রাখতে চাই যে রোহিঙ্গাদের আমরা একীভূত করবো না। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে তাদের প্রত্যাবাসন। এ বিষয়ে আমি প্রত্যাবাসনের পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপে জোর দিতে চাই। কারণ প্রথমে পাইলট প্রকল্পের আওতায় রোহিঙ্গাদের নিয়ে গিয়ে মিয়ানমার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দেখাতে পারে যে আমরা সংকট সমাধানের পথে রয়েছি। এরপর হয়তো তারা আর রোহিঙ্গাদের নিলো না। ফলে পাইলট প্রকল্পে স্বল্পভাবে যাওয়া শুরু করলো, তবে প্রত্যাবাসনের সম্পূর্ণ রোডম্যাপ থাকবে হবে। ফরেন সার্ভিস একাডেমি ও জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ ও সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ (সিজিএস) দিনব্যাপী ওই আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান ও সিজিএসের পরিচালক অধ্যাপক এ এস এম আলী আশরাফের সঞ্চালনায় ওই অধিবেশনে সমাপনী বক্তৃতা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com