নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে কোন আগ্রহ নেই বিএনপির। দলটির নেতারা মনে করে এই সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনই সুষ্ঠু হবে না। তা যে নির্বাচন কমিশনই করুক না কেন। তারা মনে করেন সবার আগে দরকার নিরপেক্ষ সরকার।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ বলেন, “বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া বোকামি। ছয়বারের এমপি হয়ে আমি নির্বাচনের সময় ঘর থেকে বের হতে পারিনি। ঘোষণা দিতে হবে, হাসিনার অধীনে ‘নো’ নির্বাচন। সংসদ বহাল রেখেও নির্বাচন হবে না। তবে আওয়ামী লীগ যে ভাষায় কথা বলে, সে ভাষায় কথা বলা যাবে না। কারণ ভদ্রলোকরা বিএনপি করে, আওয়ামী লীগে ভদ্রলোক নেই। আমাদের ওপর অত্যাচার ও নির্যাতন হচ্ছে। কিন্তু সেগুলো বিদেশে প্রচার হচ্ছে না। প্রতিবেশী দেশ চেপে বসেছে। তাই সীমান্ত হত্যাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলতে হবে। আন্দোলন ছাড়া বিকল্প নেই। নির্বাচনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান অংশগ্রহণ করবে নাÍসে নির্বাচনে কেন যাব? আগে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতন, তারপর নির্বাচন। ’ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরীও একই সুরে কথা বলেন, ‘হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়া যাবে না। আমাদের বহির্বিশ্বে বন্ধু ও শত্রু চিহ্নিত করতে হবে। ’ তিনি বলেন, আন্দোলনের মূল শক্তি ছাত্র, শ্রমিক ও কৃষক। দলকে রণকৌশল তৈরি করতে হবে। বর্তমান সরকারকে পুলিশ, বিদেশি ও আমলাদের সরকার দাবি করে ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, দেশের মানুষ নির্বাচনপাগল, কিন্তু আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, ‘জোটের দরকার নেই। আমরা রাজপথে দাঁড়াতে পারলে সবাই আমাদের সঙ্গে আসবে। যুগপৎ আন্দোলন করাটাই ভালো। হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার আগে রাজপথে আমাদের জিততে হবে। ’ নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে না যেতে মত দেন তিনি।
ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর বীর-উত্তম বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য কী? নির্বাচন। নির্বাচনে জিততে হবে। সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর ভীতি সঞ্চার করতে হবে। ’ দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা তুলে ধরে তিনি বলেন, শ্রমিক দল ও কৃষক দল তো নেই। বিএনপির এই দাবির সাখে দেশের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও একমত। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদতাঁর ফেসবুক টাইমলাইনে বলেছেন,নির্বাচন কমিশন গঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ এটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রথম ধাপ এবং দেশে বিশ্বাসযোগ্য শক্তিশালী জাতীয় প্রতিষ্ঠান গঠন আদৌ সম্ভব কিনা তার একটা পরীক্ষাও। অবশ্য নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হতে হবে সেটা আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তাতে সন্দেহ নাই। নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের গুনাগুণ কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে নাগরিক সমাজের সংগঠনসমূহ ও নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিরা তাঁদের সুচিন্তিত মতামত দিচ্ছেন। প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা এবং সেইসঙ্গে রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতার উপর তাঁরা যথার্থই গুরুত্ব দিচ্ছেন।
আমার কাছে আরো কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়: যাঁদের নির্বাচন কমিশনের প্রধান বা সদস্য হওয়াটা এবং এ ধরণের উচ্চ পদের জৌলুস উপভোগ করাটাই জীবনের পরম প্রাপ্তি বলে মনে না হয়, এবং দায়িত্ব পালনে নিষ্ঠা থাকলেও নিছক উচ্চ পদে আসীন হওয়া ছাড়াও জীবনের সফলতার অন্য মাপকাঠিও যাঁদের আছে। এরকম ব্যক্তিত্বের মানুষরাই কোনো কারণে দায়িত্ব পালনে অপারগ হলে পদের মোহ ত্যাগ করে পদত্যাগ করতে দ্বিধা বোধ করবেন না এবং ভবিষ্যতের জন্য একটা সঠিক বার্তা রেখে যেতে পারবেন। এরকম মানুষ নিশ্চয়ই আছেন, তবে তাঁদের খুঁজে বের করতে হলে সেরকম উদ্দেশ্য থাকতে হবে এবং খোঁজ খবর নেয়ার জন্যে একটু কষ্ট স্বীকার করতে হবে।
নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য গঠিত সার্চ কমিটি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, নির্বাচন কমিশন গঠন করার প্রাথমিক দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সার্চ কমিটিকে। এই কমিটির লোকজনকে দেখে সন্দেহ লাগছে। কমিটিতে নাগরিক হিসেবে নিযুক্তি পেয়েছেন আনোয়ারা সৈয়দ হক ও ছহুল হোসাইন। গত দুটো ভুতুড়ে নির্বাচন, নূরুল হুদা কমিশনের পিলে চমকানো কর্মকান্ড এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজন নিয়ে বহু নাগরিক কথা বলেছেন গত কয়েক বছরে। আনোয়ারা হক বা মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন কখনো কিছু বলেননি। ছহুল হোসাইন বরং গতবার নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে।
এজন্যই কি রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটিতে নিয়োগ দিয়েছেন তাদের? এই কমিটি কি নির্বাচন কমিশন উপহার দিবে তাহলে? গতবার কমিটিতে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের মতো একজন বিবেকবান মানুষ ছিলেন বলে আমরা কমিশনে মাহবুব তালুকদারকে পেয়েছিলাম। এবার বোধহয় তেমন কাউকেও পাওয়া যাবে না নির্বাচন কমিশনে। সূচনাতেই সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে হতাশ লাগছে।