করোনা মহামারি কাটিয়ে আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছিল পার্বত্য জেলা রাঙামাটির পর্যটন। হোটেল-মোটেল থেকে শুরু করে পর্যটন স্পট—সর্বত্র মুখর হয়ে উঠেছিল। ভিড় বাড়তে থাকে বিভিন্ন রিসোর্টে। কিন্তু গত ১২ জানুয়ারি রাঙামাটিকে সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিতের পর, আবারও পর্যটন খাতে ধস নেমেছে। পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাঙামাটিকে যেদিন রেডজোন ঘোষণা করা হয়, তার আগের দিন ১১ জানুয়ারি জেলায় মাত্র ৪৫টি নমুনা পরীক্ষায় তিন জনের করোনা শনাক্ত হয়। পরদিন ২৫টি নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয় ৫ জনের। এই সামান্য পজিটিভের প্রেক্ষিতে পুরো জেলাকে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে রেডজোন ঘোষণা করা হয়েছে। এতে লোকসানের শঙ্কায় ভুগছেন ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, রাঙামাটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৯টি নমুনা পরীক্ষায় ১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. বিপাশ খীসা জানান, রেডজোন ঘোষণার পর থেকে রাঙামাটিতে করোনা শনাক্তের হার লাফিয়ে বাড়তে থাকে। তবে গত ২-৩ সপ্তাহে সংক্রমণ কিছুটা কমে এসেছে। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আবারও শনাক্তের হার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
রাঙামাটির হোটেল স্কয়ার পার্কের মালিক নেয়াজ আহমেদ জানান, অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত পর্যটকের ভরা মৌসুম। নভেম্বর ও ডিসেম্বরে প্রচুর পর্যটকও এসেছিলেন। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেবা নিশ্চিত করায় সবাই স্বস্তিতেও ছিলেন। কিন্তু রেডজোন ঘোষণা ব্যবসায় লাল বাতি জ্বালিয়ে দিয়েছে। এখন করুণ বাস্তবতায় দিন কাটাচ্ছি। কবে আবার পর্যটন খাত স্বাভাবিক হবে বুঝতে পারছি না।
সুবলং ঝর্ণার ইজারাদার জয় চাকমা বলেন, বিপুল পরিমাণ পর্যটক আসতে শুরু করেছিলেন। পর্যটকের চাপ দেখে ভেবেছিলাম, গত দুই বছরের আর্থিক ক্ষতি কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠতে পারবো। কিন্তু সব শেষ। আগামী দিনগুলোতে দুমুঠো ভাত খেতে পাবো কিনা জানি না।
রাঙামাটি শহরের ব্যস্ততম পর্যটন স্পট পুলিশের পলওয়েল পার্ক অ্যান্ড কটেজ। প্রতিদিন গড়ে হাজার পাঁচেক দর্শনার্থী আসেন এই পার্কে। কিন্তু রেডজোন ঘোষণার পর পার্কটি কার্যত স্থবির।
পার্কের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা মিজানুর রহমান বলেন, রেডজোন ঘোষণার পর সব থমকে গেছে। বিপুল আর্থিক ক্ষতি আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখার জন্যে লড়তে হচ্ছে। তবে করোনা সংক্রমণ কমে আসলে আবারও সব স্বাভাবিক হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। কাপ্তাই হ্রদের নৌবিহার করা এই জেলায় বেড়াতে আসা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে দূরের সুবলং বা দূর গন্তব্যে যাওয়াটাই যেন নিয়ম। আর হ্রদে পর্যটকদের এই সেবা দিতে প্রায় তিনশ’ বোট আছে। পর্যটক না থাকায় ঘাটে অবহেলায় পড়ে আছে বোটগুলো।
রাঙামাটির পর্যটন নৌঘাটের ইজারাদার রমজান আলী বলেন, বোট চালকরা দরিদ্র। বোট চালিয়েই তাদের সংসার চলে। করোনা সংক্রমণের প্রথম দিকে দিনমজুরিসহ নানা পেশায় গিয়ে কোনোরকমে বেঁচেছিল। কিন্তু এবার হুট করে রেডজোন ঘোষণায় আবার সংকটে পড়েছেন তারা। রাঙামাটির সরকারি পর্যটন মোটেলের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া জানান, রেডজোন ঘোষণার আগের দিনও কয়েক হাজার পর্যটক ঝুলন্ত সেতু দেখতে আসেন। আমাদের মোটেল ও কটেজের অধিকাংশ বুকিং ছিল। কিন্তু আকস্মিক ঘোষণায় সব মুহূর্তেই বাতিল। কিছু করার ছিল না। সরকারি ঘোষণা মানতে তো আমরা বাধ্য। তবে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।