তেঁতুলিয়া নদীর অব্যাহত ভাঙনের শিকার ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার নজরুল নগর, নীলকমল, নুরাবাদ ও আহাম্মদপুর ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার গ্রামবাসী। বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চর কলমী ইউনিয়নের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চল ন্যাংলাপাতা গ্রামসহ নজরুল নগর, আহাম্মদপুর ও নুরাবাদ ইউনিয়নের গাছিরখাল নীলকমল ইউনিয়নের বৌ বাজার এবং ঘোষেরহাট থেকে বাংলা বাজার পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার এলাকা তেঁতুলিয়ার ভাঙ্গনে হাজার, হাজার হেক্টর ফসলী জমিসহ বসত বাড়ি বিলিনের পথে রয়েছে। এ তেঁতুলিয়া নদীর প্রতিদিনের জোয়ারের পানিতে কয়েক হাজার হেক্টর ধান, শশা, ডাল ও বাদাম, মরিচসহ বিভিন্ন রকমের আবাদি ফসল লবনাক্ত পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দারা তেঁতুলিয়ার ভাঙ্গনে ফসলি জমিসহ বসত বাড়ি হারিয়ে এখন দিশেহারা। বর্ষার সময় তেতুঁলিয়ার অবিরত ভাঙ্গনের হুমকিতে আতঙ্কে রয়েছে এখানকার গ্রামের বাসিন্দারা। নীলকমল ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. মিরাজ মিয়া জানান, তেঁতুলিয়ার পাড়ে সিসি ব্লক ও জিও ব্যাগের ডাম্পিং এর মাধ্যমে নদীতীর রক্ষা ও টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকার ফলে বর্ষা মৌসুমে বাঁধ ভেঙ্গে পানি প্রবেশের হুমকির সম্মুখীন হতে হয়। এছাড়া এ নদীর ভাঙ্গনে তাঁদের ১০ থেকে ১২ একর জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বৌ বাজার গ্রামের বাসিন্দা আব্বাস উদ্দিন বলেন, আমাদের গ্রামটি দির্ঘদিন ধরে ভাঙ্গনে আমি আমার পরিবার আমাদের দোকান ভিটাসহ বাড়িঘর ও চাষাবাদ হারিয়েছি। একই এলাকার নছির পাটোয়ারী বলেন, বৌ বাজারের প্রায় ৪০টি দোকান তেঁতুলিয়ার ভাঙনে বিলিন হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, একই সাথে আমাদের প্রায় ১০ একর চাষাবাদের জমিও বিলিন হয়ে যায় এ ভাঙ্গনে। আহাম্মদপুরের বাসিন্দা সিরাজ সহ একাধিক গ্রামবাসী বলেন, গত ২০ বছরে ৪ বার নদীর ভাঙ্গনে আমাদের বাড়িঘরসহ বাজারঘাট ও স্থানীয় অবকাঠামো তেতুঁলিয়ার অব্যাহত ভাঙ্গনে বিলিন হয়ে গেছে। কৃষক নুরুল ইসলাম মিয়া ও জান্নাত বেগম জানান, তাঁরা পরিবারের সঙ্গে ৭০ দশকের পর তেঁতুলিয়ার পাড়ে প্রায় ১৫ একর জমির চাষাবাদসহ বসতবাড়ি করে পরিবার নিয়ে নজরুল নগর এলাকাতে বাস করেন। নদীর ভয়াল থাবার শিকার হয়ে বর্তমানে তাঁরা নিঃস্ব অবস্থায় রয়েছেন। গ্রামের বাসিন্দা আবুুল কাশেম জানান, বকশী মৎস্যঘাট সংলগ্ন খালের অপর পাশের নাংলা পাতা গ্রামের শতশত বাড়িঘর এ নদীর গর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। যার কারণে গ্রামের অনেক বাসিন্দা সহায় সম্বল হারিয়ে এখন ঝুপড়িঘরে বাস করছেন। তিনি আরো বলেন, এমন পরিস্থিতিতে নদী সংলগ্ন অঞ্চলের ফসলী জমীতে লবনাক্ত জোয়ারের পানি রোধে গ্রামে বন্যা নিয়ন্ত্রণ টেকসই বেড়ীবাঁধ নির্মাণসহ জোয়ারের লবনাক্ত পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেইনেজ/স্লুইসগেট নির্মাণ করা জরুরী। অন্যথায় সাধারণ জনগণের ফসলি জমি বিলিন হয়ে যাবে। ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ মিজানুর রহমান জানান, বকসী লঞ্চঘাট হতে বাবুরহাট লঞ্চঘাট পর্যন্ত ৩.০০০ কিলোমিটার টেঁকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ সহ সিসি ব্লক জিও ব্যাগ ডা¤িপংপূর্বক ৩.২০০ কিলোমিটার তীর সংরক্ষন ও ঘোষেরহাট লঞ্চঘাটের ১.৩৫০ কিলোমিটার তেঁতুলিয়া নদী তীর এলাকায় জিওব্যাগ, সিসি ব্লক ডাম্পিং এ ভাঙ্গন রোধ করা হয়েছে। কাশেম মিয়ার বাজার লঞ্চঘাট ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্যে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছে। এছাড়াও বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মুজিবনগর ইউনিয়নে ৫.০০০ কিলোমিটার অংশ রক্ষার্থে একটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করা হয়েছে। তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙ্গন হতে অবশিষ্ট এলাকা রক্ষার্থে আরেকটি প্রকল্প শীঘ্রই প্রণয়ন করা হবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।