ইরি-বোরো ধান লাগানোর মৌসুম চলছে। আর তাই শীতের তীব্রতা ও বৃষ্টি উপেক্ষা করেই ইরি-বোরো লাগাতে ব্যাস্ত সময় পার করছেন সিরাজগঞ্জের চৌহালীর কৃষাণ-কৃষাণীরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকা ও বাজারে কৃষি উপকরণ (চারা, সার, তেল) পর্যাপ্ত থাকায় ইরি-বোরো আবাদে তেমন সমস্যা হচ্ছে না। তবে ধানের দাম বাড়ানোর দিকে সরকারের সুদৃষ্টি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান লাগানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৯০% জমিতে ইরি-বোরো লাগানো হয়েছে। গত বছর অর্জিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ এক হাজার ২৬৫ হেক্টর। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে খাষকাউলিয়া, সদিয়াচাঁদপুর, খাষপুখুরিয়া, বাঘুটিয়া ইরি-বোরোর আবাদের পরিমাণ বেশি। এবার উন্নত জাতের জিরাশাইল, ব্রি-২৮, ২৯, ৩৬ এবং ৫০ ধানের আবাদ করা হচ্ছে। রাতে ও সকালে শীত থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের তীব্রতা বাড়তে থাকে। বর্তমানে উপজেলায় মেঘলা ও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি সূর্যের লুকোচুরি চলছে। উজ্জল রোদ ধানের চারা জমিতে লাগানোর পর শিকড় দ্রত বৃদ্ধি হওয়ায় চারা মরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। উপজেলার খাষকাউলিয়া গ্রামের আব্দুল মান্নান জানান, শীতের কুঁয়াশা আর গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি থাকলেও বীজতলায় কোনো প্রকার ক্ষতি হয়নি। এছাড়া বাজারে সার, তেল ও ওষুধ পর্যাপ্ত থাকায় বোরো আবাদে কোন সমস্যা হচ্ছে না। এবার চার বিঘা জমিতে ব্রি-২৮ ও ২৯ ধানের আবাদ করেছেন। ধান আবাদে যে পরিমাণ খরচ হয় বাজারের ধানের দাম কম থাকায় কৃষকদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। খাষপুখুরিয়া গ্রামের কৃষক হযরত আলী জানান, এবার প্রায় ১০ বিঘা জমিতে ব্রি-২৯ আবাদ করেছেন। শ্রমিক সঙ্কট থাকায় চুক্তি দিতে হয়েছে। বিঘা প্রতি সাড়ে আট’শ থেকে হাজার টাকার মতো দিতে হচ্ছে। বীজতলা থেকে শুরু করে সার, কীটনাশকসহ জমি লাগানো পর্যন্ত বিঘা প্রতি প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। এছাড়া অনেকে ৩০০ টাকা করে শ্রমিকে দিয়ে সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কাজ করে নিচ্ছেন। এছাড়া উপজেলার উত্তর খাষকাউলিয়া গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম জানান, ৫বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপন করেছি? তার মধ্যে দেড় বিঘা ব্রি -২৮, সাড়ে ৩ বিঘা ব্রি-২৯ ধান রপন করেছি। কৃষিতে উৎপাদন খরচ দিন দিন যেভাবে বাড়ছে সে তুলনায় ধানের দাম বাড়ছে না। সার বস্তা প্রতি ১০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে কীটনাশকের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। ধানের চারার দাম বৃদ্ধি পেয়ে সাড়ে ৪ শ’ থেকে ৫০০ টাকা হয়েছে। এর আগে ২০০- ২৫০ টাকা ছিলো নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও ধানের দাম বাড়েনি বর্তমানে ধানের দাম ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা । বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয় জমি বর্গা নিয়ে আবাদ করেন যেসব কৃষক। সরকারকে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় এবং দাম বাড়ানোর জন্য দাবি জানিয়েছেন তিনি। উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ জেরিন আহমেদ জানান, উপজেলায় চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান লাগানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজারে ইউরিয়া, ফসফেট, টিএসপি, পটাশ সহ সকল প্রকার সার, তেলের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় ইরি-বোরো ধানের ভরা মৌসুমেও সঙ্কট থাকবে না। এছাড়া কৃষকদের সাবির্ক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।