বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, রাতের ভোটের সরকার কথিত মাদকবিরোধী অভিযানের নামে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করলেও এখন মদের লাইসেন্স দিয়ে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী আবেগ-অনুভূতি, বোধ-বিশ্বাস ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে। সংবিধানের শিরোনামায় কালামে হাকীমের আয়াত ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ ও ২(ক) অনুচ্ছেদে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হলেও সরকার মদের লাইসেন্স দিয়ে রাষ্ট্রীয় সংবিধানের গুরুতর লঙ্ঘন করেছে। কিন্তু তৌহিদী জনতা সরকারের এই দেশ, জাতিস্বত্ত্বা ও দ্বীনবিরোধী সিদ্ধান্ত কোন ভাবেই মেনে না। তিনি সরকারকে অবিলম্বে গণবিরোধী মাদক আইন প্রত্যাহারের আহবান জানান। অন্যথায় জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মুখে জনগণের ম্যান্ডেটহীন সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় দিতে হবে।
তিনি গত বুধবার রাজধানীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত সরকার কর্তৃক মদের উম্মুক্ত লাইসেন্স দেয়ার প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে ইসলামবিরোধী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে এক বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশে এসব কথা বলেন। বিক্ষোভ মিছিলটি মিরপুর-১ বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে টেকনিক্যালের সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দিন মোল্লা, ডাঃ ফখরুদ্দীন মানিক, ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য জিয়াউল হাসান, মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ ও মোস্তাফিজুর রহমান, শুরা সদস্য মু. আতাউর রহমান সরকার, আব্দুল মতিন খান, নাসির উদ্দীন ও মঈন উদ্দীন, শিবিরের ঢাকা মহানগরী পশ্চিম সভাপতি সাব্বির বিন হারুন, উত্তর সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ও প্রাইভেট বিশ^বিদ্যালয়ের সভাপতি পারভেজ হোসেন প্রমূখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, সরকার জাতিকে মাদকাসক্ত, মূল্যবোধহীন ও মেধাশূণ্য জাতিতে পরিণত করার আত্মঘাতি খেলায় মেতে উঠেছে। আর তারই ধারাবাহিকতায় দেশে পরিকল্পিতভাবে মাদকের বিস্তার, রাষ্ট্রীয় সম্পদের লাগামহীন লুটপাট ও অশ্লীলতাসহ যেনা-ব্যভিচারকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। অথচ সব ধরনের অপরাধের সঙ্গে মাদক, অবৈধ অর্থসম্পদ ও অবৈধ নারীসঙ্গের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। পবিত্র কালামে পাকের সুরা বাকারার ২১৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘(হে রাসূল সা.) লোকেরা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুন, উভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ…। হাদিসে রাসূল (সা.)এ এসেছে, হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের কিছু নিদর্শন হলো ইলম লোপ পাবে, অজ্ঞানতার প্রসার ঘটবে, মদ্যপান ও মাদকের বিস্তার ঘটবে, ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বে।’ (বুখারি শরিফ, প্রথম খণ্ড, হাদিস-৮০)। অথচ সরকার এসব অপরাধকেই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, মাদকদ্রব্য মানুষের দৈহিক ও মানসিক সমস্যা সৃষ্টি করে। সেই সঙ্গে মাদক গ্রহীতা নেশার টাকা সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িয়ে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সমস্যা সৃষ্টি করে। মূলত, ইসলাম কল্যাণমূলক পরিপূর্ণ জীবন বিধান। এ জন্য ইসলাম মাদক ও নেশাদ্রব্য গ্রহণকে হারাম করেছে। আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ নিশ্চয় মদ, জুয়া, পূজার বেদি, লটারি ইত্যাদি ঘৃণিত ও শয়তানের কাজ, তোমরা এ থেকে বিরত থাকলে সফল হবে (সূরা মায়িদা, আয়াত ৯০)। মাদক সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন, মাদক গ্রহণকারী জান্নাতে যাবে না (ইবনে মাজাহ)। মূলত, সরকার মদের লাইসেন্স দিয়ে ইসলাম ও ইসলামী আদর্শের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে কোন শাসকগোষ্ঠীর শেষ রক্ষা হয়নি। আর কখনো হবে না। তিনি সরকারের ইসলামবিরোধী অপতৎপরতা মোকাবেলায় জাতীকে ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রামের আহবান জানান। প্রেসবিজ্ঞপ্তি