মানবাধিকার একটি বহুল পরিচিত শব্দ। মানুষের জন্মগত অধিকার হচ্ছে মানবাধিকার। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, দেশ, কাল, পাত্র নির্বিশেষে এটি একটি বৈষম্যহীন অধিকার। আল্লাহতায়ালা এ অধিকার শুধু মানুষ নয় সব প্রাণীকেই দিয়েছেন। জুলুমের কঠোরতা ইসলাম সর্বসাকুল্যে নিষেধ করেছে, আল্লাহ বলেন, ‘জালিমরা কখনো সফলকাম হয় না।’ (সূরা আনআম-৫৭) ইসলামে মানবাধিকার একটি সুপ্রতিষ্ঠিত বিষয়, ইসলামের দৃষ্টিতে তা সর্বত্র সমান, উল্লেখ্য যে- ‘রাসূল সা:-এর সামনে দিয়ে একবার এক ইহুদির লাশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল আর এতে তিনি ওই লাশের সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে গেলেন, তখন হজরত জাবের রা: বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এটি তো ইহুদির লাশ! তখন রাসূলুল্লাহ সা: বলেছিলেন, সে কি মানুষ নয়?’ (বুখারি)। জালিম যতই শক্তিশালী হোক না কেন আল্লাহ তায়ালার শাস্তি হতে কখনো রেহাই পাবে না। আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না। আল্লাহ বলেন, ‘আমি তাদের অবকাশ দিয়ে রাখি, আমার কৌশল অতি শক্তিশালী।’ (সূরা নুন-৪৫) মানুষের অধিকার হরণ করা ও তাদের ধন-সম্পদ আত্মসাৎ করা অনেক বড় জুলুম, জুলুমের কারণে বর্তমানে পুরো পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে।
আল্লাহ বলেন, ‘যারা আমার আয়াতকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, আমি তাদের অজ্ঞাতে তাদের ধীরে ধীরে পাকড়াও করব। আমি তাদের অবকাশ দিচ্ছি, নিশ্চয় আমার কৌশল অতি শক্ত।’ (সূরা আরাফ : ১৮২-১৮৩)। যারা মানুষের ওপর জুলুম করে এবং প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তাদের ব্যাপারে রাসূল সা: বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা মানুষকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তায়ালা তাদের শাস্তি প্রদান করবেন।’ (মুসলিম-২৬১৩)
পৃথিবীর সব কালে সব যুগেই ‘জুলুম’ একটি জঘন্যতম অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে এসেছে। জুলুমের পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। জালিমের বিচার শুধু কিয়ামতের দিবসেই হবে না, বরং দুনিয়া থেকেই আল্লাহ তায়ালা তাদের জুলুমের প্রতিদান দেয়া শুরু করেন। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘দু’টি পাপের শাস্তি আল্লাহতায়ালা আখেরাতের পাশাপাশি দুনিয়ায়ও দিয়ে থাকেন। তা হলো- জুলুম ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শাস্তি।’ (তিরমিজি-২৫১১) সাইয়েদুল মুরসালিন রাসূলুল্লাহ সা: ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় কারো প্রতি কোনো ধরনের পক্ষপাতমূলক আচরণ করেননি, অন্যায়ভাবে কোনো মুসলিমের পক্ষ অবলম্বন করেননি। মানুষ হিসেবে তিনি সবার প্রতি ছিলেন উদার ও উত্তম আচরণকারী। সমাজে বিরাজমান অত্যাচার-অনাচার ও বিশৃঙ্খলা-অস্থিরতার মূল কারণ হলো জুলুম। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘অচিরেই জালিমরা জানতে পারবে, তাদের প্রত্যাবর্তনস্থল কোথায় হবে।’ (সূরা শুআরা-২২৭)
আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টিজগৎ এবং তার বান্দাদের এমন সুশৃঙ্খল রীতিনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত করেছেন, যার কোনো পরিবর্তন নেই। আল্লাহ বলেন, ‘কখনোই তুমি আল্লাহর রীতিনীতিতে কোনো ব্যতিক্রম এবং কোনো ভিন্নতা খুঁজে পাবে না।’ (সূরা ফাতির- ৪৩) আমাদের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো- যে কেউ যখন জালিমের কাতারে গিয়ে দাঁড়াবে, ‘জীবনের যতটুকু সামর্থ্য আছে (শারীরিক, মানসিক, আত্মীক সার্বিকভাবে) সেটুকু দিয়ে আমরা তার বিরুদ্ধে দাঁড়াব। হয় হোক সে বিশ্ব মোড়ল, তবুও ধিক্কারে ধিক্কারে ছিন্নভিন্ন হতে হবে তাকে, বিশৃঙ্খলকারীদের জন্য আমরা বজ্রের মতো কঠোর থাকব, ইনশাআল্লাহ!
আল্লাহ আমাদের জালিমের জুলুম থেকে হিফাজত করুন এবং অন্যের প্রতি এক বিন্দু জুলুম করা থেকে আমাদের বাঁচিয়ে রাখুন। আমিন।