রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে গতকাল চতুর্থ দফায় সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে শান্তি, অস্ত্রবিরতি ও অবিলম্বে সেনা প্রত্যাহারের দাবি তুলেছে ইউক্রেন। গতকাল ভার্চুয়াল এ শান্তি আলোচনা চলাকালেও ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের আবাসিক ভবনগুলোয় প্রাণঘাতী গোলাবর্ষণ চলছে। কিয়েভে চলমান রুশ বোমা হামলায় একজন নিহত হয়েছে। শহরের অন্য প্রান্তে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ভবন ধসে আরেকজন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ। এছাড়া বোমার আঘাতে একটি হাসপাতালের ম্যাটার্নিটি ইউনিটে এক অন্তঃসত্ত্বা মা ও তার শিশু মারা গেছে। এ পরিস্থিতির মধ্যেও কিছু আশা নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে চলছে ইউক্রেনের শান্তি আলোচনা। তবে প্রধান দাবিতে তেমন অগ্রগতি না হওয়ায় গতকাল নাগাদ কৌশলগত স্থিতাবস্থা (টেকনিক্যাল পজ) ঘোষণা করা হয়েছে। খবর বিবিসি ও রয়টার্স।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ভিন্ন হওয়ায় আলোচনা চালানো কঠিন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেন পক্ষের আলোচক মিখাইলো পোডোলিয়াক। কয়েক সপ্তাহের লড়াই অবসানের লক্ষ্য নিয়ে দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা এ আলোচনা শুরু করেছেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের এ মুখপাত্র অগ্রগতির আভাস দিয়ে বলেছেন, ইউক্রেন অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দিচ্ছে। এর আগে দুই পক্ষে দফায় দফায় আরো আলোচনা হয়েছিল। তাতে কেবল ইউক্রেনের বিভিন্ন শহর-নগরে মানবিক ত্রাণকাজ চালানো এবং বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নিতে সাময়িক যুদ্ধবিরতি নিয়ে সমঝোতা হয়েছিল। যদিও সেসব যুদ্ধবিরতি বারবারই লঙ্ঘিত হয়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে এর পরও শান্তি আলোচনা চলমান থাকলেও ইউক্রেনের বহু নগরীতে বোমাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে রুশ সেনারা।
চতুর্থ ধাপের আলোচনা নিয়ে পোডোলিয়াক এক টুইটে বলেন, উভয় পক্ষ নিজ নিজ অবস্থান ব্যক্ত করেছে। কঠিন হলেও দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। মতপার্থক্যের কারণ হচ্ছে দুই দেশের ভিন্ন রাজনৈতিক ব্যবস্থা। ইউক্রেন, যেখানে মুক্তমত প্রকাশ ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধার সংস্কৃতি রয়েছে। বিপরীতে রাশিয়া তার নিজ জনগণকেই দমন-নিপীড়ন করছে। সর্বশেষ আপডেটে ইউক্রেন প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র জানান, গতকাল নাগাদ আলোচনায় কৌশলগত স্থিতাবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে আলোচনা চলাকালেও বোমা হামলা চালু রেখেছে রাশিয়া। ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় জরুরি সেবা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাজধানী কিয়েভের কুরেনিভকা এলাকায় রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বিধ্বস্ত আবাসিক ভবনের ধ্বংসাবশেষ রাস্তায় পড়ে একটি বাস ধ্বংস হয় এবং আরেকটি আবাসিক ভবনে আগুন ধরে যায়। বাসে কোনো যাত্রী ছিল না। তবে বাসটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। রাশিয়া বরাবরই আবাসিক ভবনগুলোকে হামলার নিশানা বানানোর কথা অস্বীকার করে আসছে। তারা ইউক্রেনে তাদের আগ্রাসনকে ‘বিশেষ অভিযান’ আখ্যা দিয়ে বলেছে, এর লক্ষ্য ইউক্রেনকে সামরিকভাবে নিরস্ত্র করা। তবে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, এটি ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য রাশিয়ার একটি অজুহাত মাত্র।
গত সপ্তাহে ইউক্রেনের মারিওপোলে শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্যবিষয়ক একটি হাসপাতালে নৃশংস হামলা চালায় রাশিয়া। এতে সেখানে একটি শিশুসহ কমপক্ষে তিনজন নিহত হয়। ঘটনার সময় হাসপাতালটিতে অবস্থান করছিলেন বেশকিছু অন্তঃসত্ত্বা। বোমা হামলার পর তাদের কয়েকজনকে উদ্ধার করার চিত্র প্রকাশ পায়। গতকাল শিশুসহ মারা যান ওই অন্তঃসত্ত্বাদের একজন।
রাশিয়া ইউক্রেনে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি হামলা শুরু করলেও এখনো রাজধানী কিয়েভে ঢুকতে পারেনি। তার পরও এতদিনের যুদ্ধে রাশিয়ার ঘিরে ফেলা অন্যান্য ইউক্রেনীয় শহরগুলোয় এ পর্যন্ত মারা গেছে হাজার হাজার মানুষ। ১৯ দিনের যুদ্ধে লাখো ইউক্রেনীয় দেশ ছেড়ে প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা বলছে, এ পর্যন্ত ২৮ লাখেরও বেশি ইউক্রেনীয় দেশ ছেড়েছে। এর মধ্য প্রায় ১৭ লাখই আশ্রয় নিয়েছে প্রতিবেশী পোল্যান্ডে। হাঙ্গেরিতে আশ্রয় নিয়েছে ২ লাখ ৫৫ হাজার শরণার্থী। গত রোববারই হাঙ্গেরিতে প্রবেশ করেছে নয় হাজার ইউক্রেনীয়। স্লোভাকিয়ায় প্রবেশ করেছে দুই লাখ ইউক্রেনীয় শরণার্থী।
ইউক্রেনে রুশ হামলার তীব্রতা বৃদ্ধির মধ্যে মার্কিন কংগ্রেসে বক্তৃতা দিতে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। গতকাল এক বিবৃতিতে হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ও সিনেট মেজরিটি নেতা চাক শুমার বলেন, কংগ্রেস, আমাদের দেশ ও পুরো বিশ্ব ইউক্রেনের জনগণের সাহসে মুগ্ধ। আমরা মার্কিন কংগ্রেসে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে স্বাগত জানাতে মুখিয়ে আছি।
আজ ভিডিও লিংকের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে মার্কিন কংগ্রেসে বক্তব্য রাখবেন ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট।