বর্তমান সময়ে শহর-বন্দর ও গ্রামের হাটবাজারে রয়েছে অসংখ্যা সেলুন। পুরুষদের জন্য রয়েছে অত্যাধুনিক পার্লার। তবে একটা সময় পুরুষের ক্ষৌরকর্ম কাজটা করতেন ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দরেরাই। পেশার ধরন পরিবর্তন হওয়া অনেক স্থানে এদের দেখা যায় না। তবে যারা আজও আধুনিক সেলুনের ব্যবস্থা করতে পারেনি তারা রয়ে গেছে রাস্তায় বা গাছ তলায় ভ্রাম্যমান সেলুন ব্যবসার সাথে। আবার কেউ কেউ দক্ষতার অভাবে পুরনো নিয়মে পেশাকে আকড়ে ধরে আছেন। কালের বিবর্তনে অনেক পেশার মতো নরসুন্দরের এই পেশাও আজ বিলুপ্ত পথে। তারপরও কখনো চোখে পড়ে দু-একজন ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দরের। ভ্রাম্যমাণ এসব নরসুন্দর চুল কাটার বা ছাঁটার যন্ত্রপাতি নিয়ে প্রতিদিন বেরিয়ে পড়েন খদ্দের বা কাস্টমারের উদ্দেশে। বাঙ্গালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যর সঙ্গে মিশে আছেন এ পেশার মানুষেরা। অনেক সনাতন ধর্ম্বালম্বী যাঁরা সেলুনে যেতে চান না, তাঁরা ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দরদের কাছে ধরনা দেন। গতকাল বিকালে গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার উজানী হাটে এক পাশে খোলা আকাশের নিচে দেখা মিললো কয়েক জন নরসুন্দরের। সুশিল শীল(৪৫) মহাব্যস্ত খদ্দেরের ভীড় রাস্তার পশেই চুল কাটছিলেন পাশের কাশালিয়া গ্রামের আবুল কালাম(৩৭) নামের এক দিনমজুরের। কথা হলো সুশীলের সাথে তার এক ছেলে স্থানীয় রাজপাঠ বাজারে সেলুনের দোকান দিয়েছেন। ছেলেরা তাঁকে ওই দোকানে কাজ করতে বলেছিলেন। কিন্তু সুশিল শীল এতে রাজি হননি। সুশিল বলেন, ‘বাপ-দাদার কাছ থেকে শেখা পেশা দিয়েই মানুষের সেবা করে আসছি। কত মানুষের সংগে চেনা-জানা হয়ে গেছে। বাড়িতে গিয়ে কাজ করলে টাকা সম্মান ও নাশতাও খেতে দেন। তা ছাড়া দোকানে কাজ করলে ভাড়া দিতে হবে। বাড়তি খরচও আছে।’ তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন তিনি দুই শ থেকে আড়াই শ টাকা আয় করেন। দিনমজুর আবুল কালাম সাথে আলাপকালে জানায় ‘আমরা গরিব মানুষ সেলুনে চুল-দাড়ি ছাঁটলে ৫০-১০০ টাকা দিতে হয়। সুশিল ভাইয়ের কাছে এ কাজে আমার ব্যয় মাত্র ২০-৩০ টাকা। তিনি আরও বলেন, ‘আমার মতো অনেক দিনমজুর তার কাছেই চুল-দাড়ি ছাঁটেন। কিন্ত কালের পরিবর্তনে ও যুগের চাহিদার কারণে নরসুন্দর পেশার এখন ধরন বদলেছে। নাম হয়েছে হেয়ার ড্রেসার ও জেন্সপার্লার ইত্যাদি। তবে এখন হাট বাজারে সাবান ও অনামী সস্তা সেভিং ক্রিম এবং ছোট আয়না নিয়ে টুল পেতে চুল-দাড়ি ছাটাতে চায় না শৌখিন মানুষ। আগামী প্রজন্ম হয়ত হেয়ার ড্রেসার ও জেন্সপার্লার গিয়ে চুল কাটিয়ে আসবে কিন্তু জানবে না এ পেশার সাথে জড়িত নরসুন্দরের কথা।