এক.
সালাতে কুরআন তিলাওয়াত আবশ্যকীয়। সালাতের বাইরেও কুরআন তিলওয়াতে অনেক ফজিলত বা মহত্ত্ব ও মর্যাদা রয়েছে যা নবী করিম সা: তাঁর পবিত্র হাদিসে ইরশাদ করেছেন। এই প্রবন্ধে কুরআনে পাকের সূরা ফাতিহার ফজিলত তুলে ধরা হয়েছে চলুন আমরা তা জেনে নিই এবং আমল করি। সূরা ফাতিহা সমগ্র কুরআন মাজিদের সারমর্ম: আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘উম্মুল কুরআন (কুরআনের সারমর্ম) উহা আস-সাবউল মাসানি (বারবার তিলাওয়াতকৃত সাত আয়াত) এবং কুরআনুন আজিমুন।’ (সহিহ বুখারি-৪৭০৪) সূরা ফাতিহার মতো ফজিলতপূর্ণ সূরা উম্মতে মুহাম্মাদির পূর্বে অন্য কোনো উম্মতকে দেয়া হয়নি। সূরা ফাতিহার অপর নাম আল কুরআনুল আজিমু।
উবাই বিন কাব রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘ওই সত্তার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ। সূরা ফাতিহার মতো সূরা না তাওরাতে অবতীর্ণ হয়েছে, না ইঞ্জিলে, না যাবুরে, এ হলো সাত মাসানি যা বারবার তিলাওয়াত করা হয়, আর এটাই কুরআনে আজিম যা আমি পেয়েছি।’ (সুনানে তিরমিজি-২৮৭৫)
সূরা ফাতিহার বিভিন্ন নাম রয়েছে, যা কুরআন মাজিদ এবং হাদিসে বর্ণিত হয়েছে সেগুলো নিরূপ-
১. উম্মুল কুরআন; ২. সাবউল মাসানি; ৩. কুরআনুল আজিম; ৪. সূরাতুল হামদ; ৫. সূরাতুশ শোকর; ৬. সূরাতুদ দু’আ; ৭. সূরা আশ শাফিয়া। এ সূরার নামের আধিক্যই এ সূরার ফজিলত এবং বড়ত্বের কথা প্রমাণ করে।
১. সূরা ফাতিহা তিলাওয়াত করে আল্লাহর কাছে যা কিছু চাওয়া হবে আল্লাহ তা দেন। সূরা ফাতিহা প্রত্যেক নামাজের প্রত্যেক রাকাতে তিলাওয়াত করতে হবে। আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা:কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি নামাজকে আমার এবং বান্দার মাঝে অর্ধেক অর্ধেক করে ভাগ করেছি, আমার বান্দা যা চায় তাকে তা দেয়া হয়, বান্দা যখন বলে- ‘আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন’ তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে, আর যখন বান্দা বলে ‘আর রাহমানির রাহিম’ তখন মহামহিম আল্লাহ বলেন, বান্দা আমার গুণগান করেছে, আর বান্দা যখন বলে ‘মালিকি ইয়াও মিদ্দিন’ আল্লাহ তখন বলেন, আমার বান্দা আমার মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছে। তিনি এও বলেছেন, বান্দা তার সমস্ত কাজ আমার ওপর সোপর্দ করেছে। আর বান্দা যখন বলে ‘ইয়্যাকা নাবুদু ওয়া ইয়্যাকা নাস্তাইন’ তখন আল্লাহ বলেন, এটা আমার এবং বান্দার বিষয়, আমার বান্দা যা চায় তাকে তাই দেয়া হবে। যখন বান্দা বলে, ‘ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকিম, সিরাতাল্লাজিনা আনআমতা আলাইহিম, গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম, ওয়ালাদ্বোয়াল্লিন’ তখন আল্লাহ বলেন, এটা আমার বান্দার জন্য আমার বান্দা যা চায় তাকে তা দেয়া হবে। (সহিহ মুসলিম-৯০৪, আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসায়ি, ইবনে মাজা, মুসনাদে আহমদ)
শরীরের সমস্ত অসুস্থতার জন্য সূরা ফাতিহা পাঠ করে ঝাড়ফুঁক করলে ইনশাআল্লাহ আরোগ্য লাভ হবে। আবু সাঈদ খুদরি রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, সফররত অবস্থায় আমরা এক জায়গায় অবতরণ করলাম, একটি মেয়ে এসে বলল, ওই বংশের সরদারকে সাপে দংশন করেছে, আমাদের ছেলেরা অনুপস্থিত, তোমাদের মাঝে কি এমন কেউ আছে যে, তাকে ঝাড়ফুঁক করবে? একজন তার সাথে চলে গেল অথচ আমরা কখনো জানতাম না যে, সে ঝাড়ফুঁক করে, কিন্তু সে ঝাড়ফুঁক করল এবং সরদার সুস্থ হলো। সরদার ঝাড়ফুঁককারীকে ৩০টি বকরি উপহার হিসেবে দেয়ার জন্য নির্দেশ দিলো, আমাদের দুধও পান করাল। যখন ঝাড়ফুঁককারী ফিরে এলো তখন আমরা তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কি ভালো করে ঝাড়ফুঁক করতে জানো? বা বলা হলো যে, তুমি কি ঝাড়ফুঁক করো? সে বলল, না আমি তো শুধু সূরা ফাতিহা তিলাওয়াত করেছি আর ঝাড়ফুঁক করেছি। বকরির ব্যাপারে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে, এখন আমরা কিছু করব না যতক্ষণ আমরা এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সা:কে জিজ্ঞেস করছি। যখন আমরা মদিনায় পৌঁছলাম তখন আমরা নবী সা:কে জানালাম তখন রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, ‘তুমি কী করে জানলে যে সূরা ফাতিহা দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা যায়? ওই বকরিগুলো নিজেদের মধ্যে বণ্টন করো এবং আমাকে একটি অংশ দাও।’ (সহিহ বুখারি-৫০০৭) দারাকুতনির বর্ণনায় এসছে যে, সাহাবিরা সাতবার সূরা ফাতিহা তিলাওয়াত করে ঝাড়ফুঁক করেছিলেন। (এ ব্যাপারে আল্লাহই ভালো জানেন)
দুই.
ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, একদা জিবরাইল আ: নবী সা:এর নিকটে বসা ছিলেন। এমতাবস্থায় তিনি উপর থেকে জোরে দরজা খোলার আওয়াজ শুনতে পেলেন। তিনি উপরের দিকে মাথা উঠালেন এবং নবী সা:কে বললেন, এটা আকাশের দরজাসমূহের মধ্যে একটি দরজা, যা আজই প্রথম খোলা হয়েছে যা ইতোপূর্বে আর কখনো খোলা হয়নি। আর এ দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা অবতরণ করলেন, তিনি বললেন, যিনি ইতোপূর্বে আর কখনো পৃথিবীতে অবতরণ করেননি। তিনি রাসূলুল্লাহ সা:কে সালাম দিয়েছেন এবং বলছেন, আপনার জন্য দু’টি বরকতময় নূরের সুসংবাদ গ্রহণ করুন, যা কেবল আপনাকে দেয়া হয়েছে। আপনার আগে অন্য কোনো নবীকে এ নূর দেয়া হয়নি, আর তা হলো সূরা ফাতিহা এবং সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত। যে ব্যক্তি এ দু’টি আয়াত পাঠ করে দোয়া করবে তাঁর দোয়া কবুল করা হবে।’ (সহিহ মুসলিম-১৯১৩) সাবেক অধ্যক্ষ, প্রবন্ধকার, গবেষক