শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৮ অপরাহ্ন

হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন বাড়ছে ডায়রিয়া রোগী

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ৩ এপ্রিল, ২০২২

এক মাস ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক আকারে দেখা দিয়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন বাড়ছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। রাজধানীতে কলেরা রোগীদের চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) সামনে একটু পরপর থামছে অ্যাম্বুলেন্স, প্রাইভেটকার ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা। আর ওইসব যানবাহন থেকে দুই থেকে তিনজন মিলে একেকজন রোগী নামাচ্ছে। তাদের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। মার্চের শুরু থেকে মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে।
গত শনিবারও আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৫৪ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে। গত শুক্রবার রাত ১২টার পর থেকে গতকাল বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ হাসপাতালে ৮৬১ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। তার আগের ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছিল এক হাজার ২৭৪ জন। কর্তৃপক্ষ বলছে, ভর্তি রোগীদের ২৩ শতাংশ তীব্র ডায়রিয়া বা কলেরার রোগী।
তীব্র গরম ও অনিরাপদ পানি পানের কারণে হঠাৎ করে রোগী বেড়েছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। রোগীর ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে আইসিডিডিআরবি কলেরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রোগীর সংকুলান করতে না পেরে এত দিন হাসপাতালের বাইরে তাঁবু টানিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। গত শুক্রবার থেকে তাতেও সামাল দেয়া সম্ভব যাচ্ছিল না। এর পর প্রতিষ্ঠানটির ভেতরে সংরক্ষিত একটি এলাকায় তাঁবু টানিয়ে রোগী চিকিৎসা কেন্দ্র সম্প্রসারণ করা হয়। সেখানেও তিল ধারণের ঠাঁই নেই।
আইসিডিডিআরবি কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে যাত্রাবাড়ী এলাকার মানুষ বেশি। এরপর দক্ষিণখান, বাসাবো, কদমতলী ও মোহাম্মদপুর এলাকার রোগী রয়েছে। এর বাইরে রাজধানীর সায়েদাবাদ, শনিরআখড়া, কামরাঙ্গীরচর, মিরপুর, বাড্ডা, উত্তরখান, উত্তরা ও রাজধানীর পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকেও রোগী আসছে। আইসিডিডিআর,বি-তে ১৬ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল বিকেল ৪টা পর্যন্ত ১৯ দিনে ২১ হাজার ৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ১৬৭ জন রোগী।
আইসিডিডিআরবি’র হাসপাতাল শাখার প্রধান ডা. বাহারুল আলম বলেন, আগের বছরগুলোয় গরমের মৌসুমে প্রতিদিন গড়ে ৭০০-৮০০ রোগী ভর্তি হতো। এবার রোগীর চাপ অনেক বেশি। কোনো কোনো দিন ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৩০০ অতিক্রম করেছে। ১৬ মার্চ থেকে একদিনও নতুন ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা এক হাজারের নিচে নামেনি। অন্যান্য বছর শিশু রোগী বেশি ভর্তি হতো। এবার ১৮ বছরের বেশি বয়সী রোগী বেশি ভর্তি হচ্ছে। ভর্তি রোগীদের মধ্যে তীব্র পানিশূন্যতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এদিকে, রোগী বেড়ে যাওয়ায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর চিকিৎসাসেবা দিতে অস্থায়ী শেড নির্মাণ করা হয়েছে।
হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরা জানান, ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় এবারই প্রথম অস্থায়ী শেড নির্মাণ করতে হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুর পর্যন্ত এ হাসপাতালে ৮০০ ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসাধীন ছিল।
এদিকে, রাজধানীর বাইরেও অন্যান্য জেলার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে গত মাসে মোট রোগী ভর্তি ছিল ৪ হাজার ১১৬ জন। গত বছরের মার্চে যা ছিল ২ হাজার ৫৩৯ জন। গতকাল সকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ডায়রিয়া ওয়ার্ডের প্রবেশপথের বারান্দায় ছয়টি শয্যা বাড়ানো হয়েছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডে গত শুক্রবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, বারান্দায় সব রোগীই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। রাজশাহী মহানগর ও জেলায় গত মাসে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৩ হাজার ৪৭৭ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল ১ হাজার ৯৬৭।
ভোলা সদর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে গতকাল গিয়ে দেখা যায়, ১১টি শয্যার বিপরীতে ২৭ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি রয়েছে।
ভোলা সদর, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন ও মনপুরা উপজেলার ৫ জন পল্লিচিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁদের কাছে প্রতিদিন ৮-১০ জন রোগী খাওয়ার স্যালাইন ও ওষুধ কিনতে আসছেন।
এছাড়াও চাঁদপুর ও আশপাশের জেলা-উপজেলা থেকে গত ১২ দিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২ হাজার ৯৮১ জন আইসিডিডিআরবির চাঁদপুরের মতলব হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। দিনে গড়ে ভর্তি হয়েছে ২৪৮ জনের বেশি।
নরসিংদীতে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে চতুর্থ সপ্তাহ পর্যন্ত জেলার সব কটি সরকারি হাসপাতালে ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিয়েছে তিন হাজারের বেশি মানুষ। এই সময়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে এক শিশুসহ তিনজন।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা লোপা চৌধুরী জানান, মার্চ মাসের প্রথম দিকে প্রতিদিন চার-পাঁচজন করে রোগী চিকিৎসা নিতে এলেও ১২ তারিখ থেকে ৮০-৮৫ জন করে রোগী আসতে শুরু করে।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে আসায় সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। মানুষ রাস্তায় বের হচ্ছে। একই সঙ্গে তীব্র গরম পড়ছে। গরমে খাবারে দ্রুত জীবাণুর জন্ম দেয়। গরমে রাস্তাঘাটে তৈরি করা লেবুর শরবত পান ও বাসি খাবার গ্রহণ করছে। এসব খাবার ডায়রিয়ার জীবাণুর অন্যতম উৎস। সবাই একসঙ্গে এসব খাবার গ্রহণ করছে এবং ডায়রিয়া রোগটি ছড়িয়ে পড়ছে।
তিনি আরও বলেন, করোনাকালে মানুষ নানা ধরনের স্বাস্থ্যবিধির মধ্যে ছিল। ঘন ঘন হাত পরিস্কার করার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু সংক্রমণ কমে আসায় ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার প্রবণতা কমেছে। ডায়রিয়া প্রতিরোধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে খাবার প্রস্তুত, স্পর্শ, পরিবেশন ও খাবার খাওয়ার আগে হাত এবং টয়লেট থেকে বের হয়ে ও বাইরে থেকে এসে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com