গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে কৃষিজমি সুরক্ষা আইনের তোয়াক্কা না করে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ড্রেজার মেশিন দিয়ে ফসলি জমি থেকে বেপরোয়াভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। উপজেলার অন্তত ২০০টি স্পর্টে চলছে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন। এতে একদিকে যেমন ফসলি জমি হ্রাস পাচ্ছে, অন্যদিকে পরিবেশের ওপর বিরুপ প্রভাব পড়ছে। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে গ্রামীন সড়ক, ব্রিজ-কালভার্ট ও বসতভিটা। সড়কের ওপর দিয়ে ড্রেজারের পাইপ লাইন নেয়া ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। স্থানীয় প্রশাসন মাঝে-মধ্যে অভিযান পরিচালনা করে জেল-জরিমাণা করলেও কোনভাবেই বন্ধ হচ্ছে না ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন। এসব বালু উত্তোলনের কাজের সাথে জড়িত রয়েছেন প্রভাবশালীরা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার মাহমুদপুর, সাতাশিয়া, আড়কান্দি, ডোমরাকান্দি, পারুলিয়া, খাগড়াবাড়িয়া, সিংগা, হাতিয়াড়া, রাহুথড়, পুইশুর, নিজামকান্দি, তালতলা, চন্দ্রদ্বীপ, বরুনাপোল, রাজপাট, শিল্টা, সীতারামপুর, বেথুড়ী, নড়াইল, ধীরাইল, জোতকুরা, বিদ্যাধর, সাধুহাটিসহ বিভিন্ন এলাকার অন্তত ২০০ স্পর্টে খাল-বিল, জলাশয়, পুকুর ও ফসলি জমি থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এ যেন এক বালু উত্তোলন ও খননের প্রতিযোগিতা চলছে। বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০-এর ধারা ৫-এর ১ উপধারা অনুযায়ী, পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। ধারা ৪-এর (খ) অনুযায়ী, সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ। আইন অমান্যকারী দুই বছরের কারাদ- ও সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন। অথচ এমন আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করছে স্থানীয়রা। স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি বিধিনিষেধ থাকার পরও ফসলি জমিতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে পাইপের মাধ্যমে অবাধে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে আশপাশের ফসলি জমি ও সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ নিরীহ কৃষকরা বাঁধা দিতে গেলে উল্টো হামলা-মামলা ও হুমকি-ধামকির শিকার হচ্ছেন। জমির বালু কেটে নেয়ার পর ড্রেজার ব্যবসায়ীরা পাশের জমির কৃষককে কম দামে জমি বিক্রিতে বাধ্য করছেন বলে অভিযোগ করেন অনেক কৃষক। ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার জোর দাবি জানান তারা। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে অচিরেই পরিবেশ বিপর্যয়ের ঘটবে বলে আশংকা করছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। পরিবেশবাদী এনজিও বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজ (বিসিএএস)’র পরিবেশকর্মী বিধান চন্দ্র টিকাদার বলেন, ‘শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে খাল-বিল ও ভূগর্ভস্থ থেকে বালু উত্তোলনের কারণে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। বাড়ছে ভূমিকম্প প্রবণতা। নষ্ট হচ্ছে কৃষি জমি। দ্রুত ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে।’