চকরিয়া উপজেলার আরাকান সড়ক ও অলিগলিতে সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলছে। জানা যায়, ট্রাফিক পুলিশ ও কথিত মালিক সমিতির টোকেনেই চলছে এসব সিএনজি ও তিন চাকার নিষিদ্ধ যানবাহন। সচেতন মহলের দাবি, কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবাধে চলছে এসব যান হতে চাঁদাবাজি। যেন টোকেনই ভরসা আবার টোকেনে ব্যবসা। অপরদিকে, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করেই ট্রাফিক পুলিশের টিআই ও সার্জেন্টসহ কিছু নাম সর্বস্ব মালিক সমিতির যোগসাজসে টোকেনে আদায় করছে লাখ লাখ টাকা। এ যেন টোকেন বাণিজ্যের রমরমা ব্যবসা। যে টাকার একটি বড় অংশ স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের পকেটেও যাচ্ছে বলে প্রচার রয়েছে। তথ্যমতে, চকরিয়া উপজেলার প্রধান সড়কগুলোতে অবৈধ কিছু সিএনজি অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত টমটম এবং তিন চাকার রিকশা চলাচলের কারণে প্রতিনিয়ত বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন মানুষ ও শিশুদের নাম। আরাকান সড়কের চকরিয়া পৌরশহরে ট্রাফিক পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে অভিযান করলেও স্থানীয়রা বলছে তা নামমাত্র আইওয়াশ। ধরা ছোয়ার বাহিরে এসব যানবাহন বরং সমিতি ও তাদের নির্দিষ্ট টোকনের মাধ্যমে চলছে অবাধে সিএনজি অটোরিকশাসহ নিষিদ্ধ যান। একটি সূত্র জানায় , টোকেনের নামে প্রতিটি সিএনজি ও ব্যাটারি চালিত টমটম গাড়ি হতে মাসে ২০০টাকা আদায় করছে এমনটি অভিযোগ স্বয়ং সিএনজি ও টমটম ড্রাইভারদের। অন্যদিকে নিষিদ্ধ টমটম ও তিন চাকার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা হতে মাসিক হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করেন এবং সমিতিগুলোর পক্ষ থেকে বিশেষ স্টিকার লাগিয়ে কয়েক হাজার সিএনজি থেকে লাখ লাখ টাকা হজম করারও অভিযোগ উঠেছে। অপরদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সিএনজি চালক বলেন, ‘পুলিশকে দেওয়ার কথা বলে শ্রমিক সংগঠনগুলো তুলছে এই টাকা। মূলত ঘাটে ঘাটে অর্থ লেনদেনের কারণেই সরকারি নির্দেশনার পরও চকরিয়া উপজেলার মহাসড়কে বন্ধ করা যাচ্ছেনা নিষিদ্ধ চাঁদাবাজি ও তিন চাকার যান। তবে, টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করে ট্রাফিক পুলিশ বলছে, মহাসড়কে কোনোভাবেই চলতে দেওয়া হবে না তিন চাকার যান।’ তবে মাঠের তথ্যের সঙ্গে কথায় আর কাজে আসমান-জমিন ফারাক তাদের। সরেজমিনে দেখা যায়, এই সড়কে চলা প্রায় সবগুলো সিএনজি অটোরিকশার সামনের গ্লাসে জল রংয়ের কতগুলো বিশেষ স্টিকার লাগানো। অনেকের মতে যা ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকার বিনিময়ে এই স্টিকারগুলো কেনা হয়েছে শ্রমিক সংগঠনের কাছ থেকে। শ্রমিক সংগঠন ও সমিতিগুলো মাসে মাসে একেক রংয়ের এসব স্টিকার কোথায় পায় জানতে চাইলে ড্রাইভাররা বলেন, ট্রাফিক পুলিশই মূলত এসব স্টিকার সমিতিকে দেন। এই টোকেন থাকা মানে মহাসড়কে চলার বৈধতা। আর কোনো বৈধ কাগজপত্র লাগে না তাদের। ট্রাফিক পুলিশ গাড়ির লাইসেন্স চেক করেন কিনা জানতে চাইলে সিএনজি ড্রাইভার মিনহাজ বলেন, ‘গাড়ি চালাচ্ছি গত ৪ বছর হবে কখনো কাগজ দেখতে চাইনি। তবে প্রতি মাসে মাসে টোকেন ঠিকই চেক করেন। উপজেলার ফকিরহাট রোডের ড্রাইভাররা বলেন, ‘হাইওয়ে রোডে চলার জন্য টোকেন আছে। এই টোকেন আমরা টাকা দিয়ে প্রতি মাসে নেই। টোকেনের টাকা দেওয়া হয় আমাদের সমিতির লোকের কাছে। এরা ট্রাফিক পুলিশ হতে টোকেন এনে তাদের গাড়িতে লাগিয়ে দেয় বলে জানান। সচেতন মহলের দাবী স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বছরের পর বছর টোকেন সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। আর অভিযোগ উঠেছে, এ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন ট্রাফিক পুলিশেরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট হর্তাকর্তাগণ। নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকা সত্বেও এসব বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা এসব বিষয়ে কিছু বলতে অপরাগতা পোষণ করেন। চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনেরও এ ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে এখনো পর্যন্ত দেখা যায়নি। বছরের পর বছর ধরে এসব অবৈধ যানবাহন চলাচল করলেও বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ও পুলিশ প্রশাসন যেন দেখেও দেখছে না। সে সুযোগে রমরমা টোকেন বাণিজ্যে মেতে উঠেছে একটি সিন্ডিকেট চক্র। ফলে হাতিয়ে নিচ্ছে তারা বছরে অর্ধ কোটি টাকারও বেশি। অনুসন্ধানে জানা যায়, বিআরটিএ কিংবা প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়া এসব টোকেন বিতরণ করছে উপজেলা ভিত্তিক বিভিন্ন সিএনজি-অটোরিকশা মালিক সংগঠন ও শ্রমিক সমিতির নেতাকর্মীরা। এ থেকে মোটা অঙ্কের মাসিক মাসোহারা পায় বিআরটিএ’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও এমনটি অভিযোগ সচেতন মহলেরও। এসব অবৈধ সিএনজি চলাচলে প্রশাসনের ঝামেলা এড়াতে মালিক ও চালকরা প্রশাসনের সঙ্গে গোপন সমঝোতা করে স্থানীয় কিছু নেতাদের মাধ্যমে নির্দিষ্ট হারে মাসোহারা দিয়ে রাস্তায় চলাচলের বৈধতা কিংবা রুট পারমিট নেন। সেজন্য মাসে সিএনজি প্রতি টাকা দিয়ে টোকেন নিতে হয়। অনুসন্ধানে আরও ওঠে আসে এসব যানবাহনের টোকেন বাণিজ্যের নেতৃত্বে আছেন বৃহত্তর চকরিয়া-পেকুয়া অটোরিকশা-অটো টেম্পো শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি নং চট্ট-১৪৯১ এর অঞ্চলভিত্তিক কিছু নেতা। তবে নেপথ্যে থেকে কারা এসব সমিতির নেতৃত্বে দিচ্ছেন তাদের ব্যাপারে ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ সাধারণ ড্রাইভাররা। চকরিয়ায় মাসিক ‘টোকেন’-এ চলছে কয়েক হাজার সিএনজি। টোকেনের মাধ্যমে এসব অবৈধ অটোরিকশা ও চালককে বৈধতা দিচ্ছেন কতিপয় ট্রাফিক পুলিশ সদস্য ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা।এসব অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে চকরিয়া ট্রাফিক পুলিশ বক্সের (ট্রাফিক ইনচার্জ) টিআই মশিউর রহমান বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমি এসপি স্যারের অর্ডার ছাড়া কারো কাছে বক্তব্য দিই না। স্যারের অর্ডার ছাড়া বক্তব্য দিতে নিষেধ আছে। আপনি সরেজমিনে এসে দেখে যারা যারা টোকেন বাণিজ্য করে প্রমাণ নেন তারপর আপনি লেখেন, সমস্যা নেই। এখনতো আমরা এগুলো বলতে পারবো না।আপনারা সরেজমিনে এসে দেখেন, আসলেই এসব করতেছে কারা জানবেন। প্রয়োজনে আমার পক্ষ থেকে আপনাদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করা হবে।